কাটঅফ ৩ মার্কস পেলেই লেকচারার পদে PSC-র নিয়োগ! সংরক্ষণের বিরুদ্ধে নেটপাড়ায় গর্জন!

কাটঅফ ৩ মার্কস পেলেই লেকচারার পদে PSC-র নিয়োগ! সংরক্ষণের বিরুদ্ধে নেটপাড়ায় গর্জন!

কলকাতা:  আমাদের দেশে ‘রিজার্ভেশন’-এর বলি মেধা৷ যোগ্যতা যতই থাক, কাস্ট সার্টিফিকেটের কাছে তা নিতান্তই ফিঁকে৷ দেশে ‘জাতিগত সংরক্ষণ’ হয়ে উঠেছে রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার৷ এর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্জে উঠল সংরক্ষণ বিরোধী মঞ্চ৷ 

ওই মঞ্চেরই এক সদস্য জানান, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন আয়োজিত বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিক কলেজে লেকচারার পদে নিয়োগের জন্য যে পরীক্ষা হয়েছিল, তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ লিখিত পরীক্ষার কাট অফ মার্কসের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু প্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ের জন্য কল করে পিএসসি৷ কিন্তু বিভিন্ন জাতির জন্য কাট অফ মার্কস রীতিমতো হাস্যকর করে তুলেছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে৷

তিনি জানান, এই পরীক্ষায় ফিজিক্সে জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীর জন্য কাট অফ মার্কস ৪৭.৩৩৷ ওবিসিদের জন্য ৩৬.৬৭, তফশিলি জাতির (এসসি) প্রার্থীদের জন্য কাট অফ মার্কস ৩১ এবং তফশিলি উপজাতির (এসটি) জন্য ৩৷ ম্যাথামেটিক্স বা অঙ্কে জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীর জন্য কাট অফ মার্কস ৪৭.৬৭, তফশিলি জাতির জন্য ৩১.৩৩ এবং তফশিলি উপজাতির জন্য মাত্র ২৷ 

পিএসসির বিজ্ঞপ্তি দেখুন- http://pscwbapplication.in/pdf20/CANDIDATES_QUALIFIED.pdf এই লিঙ্কে৷

এখানেই শেষ নয়৷ পদবী নিয়েও চলছে দুর্নীতি৷ তিনি এসটি প্রার্থীদের নামের তালিকা তুলে ধরে দেখান, সেখানে জয়শ্রী মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ সিং নামে দুইজন প্রার্থীর নাম রয়েছে৷ মণ্ডল এবং সিং এই দুটি পদবী কী ভাবে তফশিলি উপজাতিভুক্ত হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ অভিযোগ, সোর্স এবং টাকা থাকলে আমাদের দেশ সবই সম্ভব৷

তিনি বলেন, যে সকল ছেলেমেয়ে দিনরাত জেগে পড়াশোনা করছেন, সমস্ত শখ-আহ্লাদকে পাশে সরিয়ে শুধু বইয়ের পাতাতেই মুখ গুঁজেছেন, তাঁরা ৪৩-৪৪ নম্বর বেশি পেয়েও লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেন না৷ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বারবার এই ভাবেই ব্যর্থ হতে হতে হচ্ছে তাঁদের৷ ব্যর্থ হতে হতেই হয়তো তাঁরা একদিন পেটের দায়ে পাড়ার মোড়ে ছোট দোকান খুলে বসবেন, এলআইসি’র এজেন্ট হবেন কিংবা টিউশনি শুরু করবেন৷ অন্যদিকে, ২ কিংবা ৩ নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা গাড়ি চড়ে কলেজে পড়াতে যাবেন!

সিভি রমন, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, আর্যভট্টের মতো বিজ্ঞানী এবং গণিতজ্ঞর দেশে পদার্থ বিদ্যায় ২ এবং অঙ্কে ৩ পাওয়া একজন প্রার্থীকে সরকার নিয়োগ করছে পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক পদে৷ যাঁরা নিজের বিষয়ে ২-৩ নম্বর পান, তাঁরা কি শেখাবে ছাত্রদের? তাঁদের কাছ থেকেই বা ছাত্রদের শেখার কি আছে?

তাঁর কথায়, ভারত তিনটি জিনিসের মূল্য রয়েছে৷ সংরক্ষণ, রাজনীতি এবং দুর্নীতি৷ কাস্ট সার্টিফিকেট থাকলে চাকরি হাতের মুঠোয়৷ টাকা-পয়সা থাকলেও চলবে৷ দুর্নীতির পথে মিলবে চাকরি৷ নয়তো রাজনীতিবিদ হয়ে ক্ষমতা দখল করতে হবে৷ মেধা, যোগ্যতা বা পরিশ্রমের কোনও দাম নেই ভারতবর্ষে৷ তাই এই জাতিগত সংরক্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি৷ তাঁর দাবি, সংরক্ষণ থাকুক পিছিয়ে পড়া, প্রান্তিক, গরিব মানুষদের জন্য৷ কিন্তু মেধার সঙ্গে সমঝোতা করে নয়৷ নম্বরে ছাড় দিয়ে সংরক্ষণ নয়৷ নম্বরে ছাড় দেওয়ার অর্থ শিক্ষাকে পঙ্গু করে দেওয়া৷ এভাবে চলতে চলচে দেশের মেরুদণ্ডটাই একদিন ভেঙে যাবে৷ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, অভিভাবক সকলকে আওয়াজ তোলার আর্জি জানিয়েছেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *