নতুন শিক্ষক নিয়োগে বড় ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর, স্কুল শিক্ষকদের সুখবর পার্থর!

নতুন শিক্ষক নিয়োগে বড় ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর, স্কুল শিক্ষকদের সুখবর পার্থর!

কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষকদের নিজের জেলায় পোস্টিং দেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও একধাপ এগিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা, শুধু নিজের জেলায় নয়, এবার থেকে শিক্ষকদের পোস্টিং বাড়ির কাছে স্কুলে দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বেশ বড় আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ 

শিক্ষামন্ত্রী ফাস জানিয়েছেন, নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের পোস্টিং বাড়ির কাছে স্কুল দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যকর হবে৷ একই সঙ্গে কর্মরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও বদলিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বাড়ির কাছের স্কুলের জন্য৷ সরস্বতী পুজোর দিন রাজ্যের শিক্ষকদের এমন সুখবর দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷  আজ সকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়ির কাছে স্কুল দেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার মিলবে৷ একসঙ্গে বাড়ির কাছে বদলির সুযোগ পাবেন কর্মরত শিক্ষকরা৷ আবেদন করসলেই বাড়ির কাছের স্কুলে বদলি করা হবে৷ 

এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলি৷ আবেদন নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি৷ সাধারণ বদলি বন্ধ ২০১৫ থেকে৷ আর তাতেই শিক্ষকদের একাংশকে পড়তে হয় সমস্যায়৷ কিন্তু, সেই সমস্যার সুরাহা করতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা পারস্পরিক বদলির জন্য কাউন্সেলিং করা হলেও এখনও নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ছাড়পত্র পাননি অন্তত ৬০০ শিক্ষক৷ এই নিয়ে শিক্ষক মহলে বাড়তে থাকা অসন্তোষ মেটাতে বড় আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ 

মঙ্গলবার দুপুরে টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘আমরা আমাদের শিক্ষক ও আমাদের ছাত্রদের জন্য গর্বিত৷ শিক্ষকরা হলেন প্রধান অভিভাবক৷ আমাদের আগামীকালকে সত্যিকারের নেতা হওয়ার জন্য আমাদের ছাত্রদের লালন-পালনের মাধ্যমে সমাজ এবং জাতি গঠনে তাঁদের বিশাল অবদান রয়েছে৷’’ দ্বিতীয় টুইটে শিক্ষক বদলির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘সরস্বতী পুজার প্রাক্কালে, আমাদের সকল শিক্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা৷ আমরা শিক্ষকদের নিজের জেলায় পোস্ট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর তৃতীয় টুইটে লেখেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি তাঁদের নিজের পরিবারের প্রতি যত্নবান হতে পারবেন৷ সমাজ গঠনের কাজে অবদান রাখার জন্য বেশি সময় দিতে পারবেন৷ শান্ত ও মনোযোগ নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করবে এই সিদ্ধান্ত৷ সকলকে আমার শুভেচ্ছা!’’ 

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শিক্ষক মহলে৷  শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘শিক্ষকদের আবেদনের ভিত্তিতে বদলির বিষয়টি একবার কার্যকরী হওয়ার পর দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে৷ শিক্ষকদের দাবি, আবেদনের ভিত্তিতে পছন্দমত জায়গায় শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মীদের বদলি করা হোক৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় নতুন কিছু নেই৷ যে নিয়মটি চালু রয়েছে তাকে নিয়মিত কার্যকর করা টাই কাজের কথা৷ সেটি আগে কার্যকর হোক৷ তাহলেই হবে৷ প্রতিবছর নিয়ম করে শিক্ষকদের পছন্দমত বিদ্যালয়ে বদলির প্রক্রিয়াটিকে কার্যকর করা হোক৷ দাবি করছি, অতি দ্রুত দুর্নীতিমুক্ত ভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে বদলি প্রক্রিয়া বাস্তবে কার্যকর করা হোক৷ আবেদনের ভিত্তিতে বদলির নিয়মটা যে রয়েছে সেটা কি জানেন মুখ্যমন্ত্রী? চালু থাকা নিয়মটাই দুর্নীতিমুক্ত ভাবে কার্যকর করুন আগে৷’’ 

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘রাজ্যের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও প্রায় একবছর আগে শিক্ষিকাদের বাড়ির কাছে বদলির ব্যাপারে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷  কিন্তু বাস্তব চিত্রটা আলাদা৷ আমাদের বহু দিনের আন্দোলনে অর্জিত দাবি জেনারেল ট্রান্সফার ২০১৪ সালে একবার মাত্র হয়ে অজানা কারণে বন্ধ আছে৷ এমনকি মিউচুয়াল ট্রান্সফার যেটা একেবারে সহজ প্রক্রিয়া, তার হেয়ারিং হওয়ার পর দু’মাস কেটে গেলেও নানান জটিলতার কারণে এখনও তাঁদের পছন্দমত স্কুলে যোগ দিতে পারছেন না শিক্ষকরা৷ আর একদিকে স্পেশাল গ্রাউন্ড ট্রান্সফারের নামে চলছে চরম দুর্নীতি৷ ফলে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বদলি সম্পর্কে বড় বড় কথা ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছু না৷ তবে বদলির সব থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হল, আবেদনের ভিত্তিতে বদলি৷ আমরা তা আবার দ্রুত চালু করার দাবি জানাচ্ছি৷’’

এর আগে গতবছর ৩০ মে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা পারস্পরিক বদলি ও ট্রান্সফার অন স্পেশ্যাল গ্রাউন্ডে বদলির প্রক্রিয়া শুরু করার বিজ্ঞপ্তি দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য আবেদন গ্রহণের পর গত ৬ ডিসেম্বর কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত নতুন স্কুলে যোগ দিতে পারেননি স্কুল শিক্ষকদের বড়অংশ৷ পরে চলতি মাসে কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই প্রক্রিয়া আরও একমাস বৃদ্ধি করার ঘোষণা করে৷ এবার নতুন বছরে প্রথম মাসের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর নয়া বদলি নীতি ঘোষণা ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চ৷ 

লাগামছাড়া দুর্নীতি ও একগুচ্ছ মামলার জেরে থমকে রয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ভবিষ্যৎ৷ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে? কত শূন্যপদে নিয়োগ হবে? তা এখনও জানাতে পারেনি রাজ্য৷ বাংলার শিক্ষক নিয়োগের এই পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যেও নতুন করে অসন্তোষ বাড়ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *