কলকাতা: বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে ১ বছর ৯ মাস৷ কিন্তু, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত টেটের পরীক্ষায় নিতে পারেনি রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ৷ ২০১৫ সালের পর এই রাজ্যে টেট বা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট নেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালে ওক্টবরে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও এখনও শূন্যপদ জানানো দূর, কবে হবে পরীক্ষা, তা এখনও জানানো হয়নি৷ এই পরিস্থিতি দাড়িয়ে টেট পরীক্ষা মামলায় হস্তক্ষেপ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ টেট পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রকাশের দাবিতে মামলার শুনানিতে পর্ষদের ভূমিকায় ভর্ৎসনা আদালত৷ আদালতে রাজ্যর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এবার বিধানসভায় দাঁড়ি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বড় ঘোষণাটা করেই দিলেন শিক্ষামন্ত্রী৷
স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট, ঠিক তখনই প্রাথমিকে ১৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর৷ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও সরলীকরণ করা দাবি জানিয়ে বিধানসভায় সরব হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছু তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরেন পার্থবাবু৷ জানান, রাজ্য সরকার গত ৮ বছরে ৪২ হাজার ৬২১ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, তার পরও প্রাথমিকে এখনও পর্যন্ত ১৩ হাজার ২৯৫টি শূন্যপদ তৈরি হয়েছে৷ ওই শূন্যপদগুলি দ্রুত পূরণ করা হবে৷ কিন্তু, বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মামলা৷ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মামলার জেরে নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷ আর সেই কারণে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও সরলীকরণের বিষয়ে সওয়াল শিক্ষামন্ত্রীর৷
কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ অনেকেই বলছেন, টেট পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে যখন চাকরিপ্রার্থীদের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়, তখন নিয়োগ প্রক্রিয়া সরলীকরণ করে কী হবে? আগে ২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করুক সকরকার৷ তারপর সরলীকরণের পথে হাঁটুক সরকার৷
সম্প্রতি, টেট মামলার শুনানিতে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, পরীক্ষার না নেওয়ার কারণ আদালতকে জানাতে হবে৷ তারপরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেওয়া হবে৷ বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, গরিব ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ কোটি কোটি টাকা তুলে এখনও কেন টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়নি? তা অবিলম্বে রিপোর্ট আকারে জানাতেও নির্দেশ দেন বিচারপতি৷
মামলার শুনানিতে মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবীর তরফে জানানো হয়, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিইর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছরই রাজ্য সরকারের টেট নেওয়ার কথা থাকলেও ২০১৬, ২০১৭ সালে টেট হয়নি৷ ২০১৭ সালে টেটের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও শূন্যপদ ও পরীক্ষার দিনক্ষণ জানাতে পারেনি পর্ষদ৷ পরীক্ষায় বসার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া পরও নিয়োগ তো দূর, পরীক্ষা নেওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে পারেনি পর্ষদ৷ আর তার জেরেই চাকরিপ্রার্থী মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে৷ পর্ষদের কৌঁসুলি সুবীর সান্যাল জানান, তিনি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জেনে পরের শুনানিতে আদালতে জানাবেন৷
মামলাকারী শীর্ষেন্দু সেনগুপ্ত-সহ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী টেটের পরীক্ষার দিন ঘোষণার দাবিতে মামলা দায়ের করেন৷ মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতকে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে টেটের নির্দেশিকা জারি করেছিল পর্ষদ৷ কয়েক লক্ষ শিক্ষক পদপ্রার্থীরা ১০০ টাকা জমা করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন৷ কিন্তু, ১ বছর ৮ মাস পরও সেই পরীক্ষা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
তিনি জানান, এনসিটিই বা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছর অন্তত একবার প্রতিটি রাজ্য সরকারের টেট পরীক্ষা নেওয়ার কথা৷ কিন্তু, ২০১৫ সালের পর থেকে পরীক্ষা নেওয়াই হচ্ছে না৷ রাজ্যে দু’টি টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ পরীক্ষায় বসেন ৩৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী৷ ৪৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগও হয়েছে৷ সেখানেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল৷ মামলা হয় বেশ কয়েকটি৷ পর্ষদ সূত্রে খবর, এখনও ২৫ হাজার শূন্যপদ রয়েছে৷ ফলে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব বাড়ছে৷ অথচ, টেট পরীক্ষায় সফল হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে৷ এই প্রেক্ষাপটেই আদালত আগেই রাজ্যের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল৷