কলকাতা: সম কাজে সম বেতন ও পাশ-ফেল প্রথা ফেরানো সহ একগুচ্ছ দাবিকে সামনে রেখে শুরু হল মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাখার সপ্তম দ্বিবার্ষিক জেলা সম্মেলন৷ কাঁথি হাইস্কুলে সমিতির পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়৷ উদ্বোধনী ভাষণ দেন শিক্ষাব্রতী বাসন্তী জানা।
এদিনের এই সম্মেলনে ঠিক কোন কোন দাবি তোলা হয়? সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ ফেল চালু, বিজ্ঞানভিত্তিক সিলেবাস, ভোট কর্মীদের যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা, সকল শূন্য পদে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ, প্যারা-চুক্তিভিত্তিক-ভোকেশনাল-এমএসকে-শিক্ষকদের ‘সম কাজে সম বেতনের ব্যবস্থা করা, অবিলম্বে পে-কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ ও তা কার্যকর করা, অবিলম্বে ট্রান্সফার অন অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবস্থা সহ নানান দাবিতে সোচ্চার হোন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিরা৷
সম্মেলনে সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ করেন জেলা সম্পাদক পূর্ণ চন্দ্র সামন্ত৷ সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি মনীষী রঞ্জন গিরি। এছাড়া ছিলেন তপন সামন্ত, সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র, সহ সাধারণ সম্পাদক তপন জানা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক অনিমেষ হালদার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সহ-সম্পাদক সুব্রত দাস ও বাসুদেব দাস প্রমুখ।
সম্মেলনে সদ্য অবসর প্রাপ্ত দের সম্বর্ধনা ও নব নিযুক্ত শিক্ষকদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। আগামী দিনে শিক্ষা ও শিক্ষক স্বার্থে বৃহত্তম আন্দোলনের শপথ নিয়ে সম্মেলন শেষ হয়। কাঁথি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডক্টর বানেশ্বর দাস বলেন, ‘‘হার না মানার এই শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্মেলন স্থল হিসেবে আমার স্কুলকে নির্বাচিত করায় আমি গর্বিত বোধ করছি৷’’ শিক্ষক নেতা তপন সামন্ত বলেন, “উন্নত নৈতিকতার চর্চা, সমাজের প্রতি কর্তব্য বোধ ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি দরদ বোধই সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসাতে পারে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরাদের মত বড় মানুষদের এই জেলার সংগ্রামের ঐতিহ্যকে প্রত্যক্ষ করতে আমি এসেছি।” চাকরিপ্রার্থীদের অনশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, “ঝড়-বৃষ্টি-রোদ মাথায় করে টানা ১৮ দিন ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC চাকরিপ্রার্থীরা৷ অথচ সরকারি ভাবে তাদের সাথে কেউ এখনও দেখা করলো না৷ এটা অমানবিক৷’’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক পূর্ণ চন্দ্র সামন্ত বলেন, জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকে ৩০০ বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার উপর যে সার্বিক আক্রমণ নেমে আসছে তার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে ও ঐক্যবদ্ধভাবে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের শপথ নিতে হবে আপনাদের।’’
জেলা সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র। তিনি বলেন, “রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার এক সংকটময় পরিস্থিতিতে আপনাদের জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নানা আক্রমণ নামিয়ে আনছে এই সরকার। বিগত দিনের মত ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করতে হবে। আন্দোলনই দাবি আদায়ের একমাত্র পথ।” নিয়োগ দুর্নীতি, পে কমিশন, প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ ফেল চালু, পে প্রটেকশন, হঠাৎ করে তৃতীয় কাউন্সেলিংয়ের শূন্যপদ কমিয়ে দেওয়া, ট্রান্সফার অন অ্যাপলিকেশনের ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোকপাত করেন তিনি।