কলকাতা: শিক্ষা নীতি থেকে শিক্ষক বদলি, একাধিক ইস্যুতে নাখুশ রাজ্যের শিক্ষক মহল৷ এই সকল ইস্যুতে নিজেদের দাবিদাওয়া জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন জমা দিলেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন ‘মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’৷ তবে, এদিনের এই কর্মসূচি নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি শিক্ষক সংগঠন৷
আরও পড়ুন- সরকারি চাকরিতে মহিলাদের ৩৩% সংরক্ষণের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
তাঁদের দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে- ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’ বাতিল করার আবেদন৷ অবিলম্বে ‘আবেদনের ভিত্তিতে বদলি (GT)’ কার্যকর করা ও বদলি সংক্রান্ত পোর্টালের জটিলতা দূর করা৷ স্বাস্থ্য সাথীর বদলে অবিলম্বে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা (WBHS) চালু করা৷ কোর্টের রায় অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের TGT স্কেল প্রদান করতে হবে৷ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ROPA-২০১৯ অনুযায়ী সংশোধিত পেনশন দেওয়ার দাবি৷ আপার প্রাইমারিতে পেন্ডিং প্যানেল সহ সকল শূন্যপদে শিক্ষক- শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগ করা৷ শিক্ষকদের জন্য কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট প্রকল্প (CAS) চালু করা৷ শিক্ষাকর্মী, লাইব্রেরিয়ান, প্যারা টিচার ,আইসিটি, ভোকেশনাল, কন্ট্রাকচুয়াল শিক্ষকদেক বঞ্চনা থেকে মুক্ত করার দাবি৷ এছাড়া- মাদ্রাসা ও সাঁওতালী মাধ্যম স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ ও বদলি চালু করার আর্জি৷ দু’বছরের কম নিযুক্ত শিক্ষকদের আপস বদলি সুযোগ ও চাকরি নিশ্চয়তা প্রদান করারও দাবি তোলা হয়েছে শিক্ষক সংগঠনের তরফে৷
আরও পড়ুন- ৩১ হাজার শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন মুখ্যমন্ত্রীর, টুইট শিক্ষা দফতরের
উপরের দাবিগুলি তুলে গতকাল বিকাশ ভবনে শিক্ষা দফতরে ডেপুটেশন জমা দেয় শিক্ষক সংগঠন৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের৷ কিন্তু তিনি এদিন শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশন এবং ডেপুটি ডিরেক্টর, গ্র্যান্ট ইন এড সমিতির রাজ্য কমিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও ডেপুটেশন গ্রহণ করেন৷ শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র এবং সমিতির জার্নাল যুগ্ম সম্পাদক ডঃ কানাইলাল দাস৷ দক্ষিণবঙ্গে কলকাতা সংলগ্ন চারটি জেলার শতাধিক প্রতিনিধি এই ডেপুটেশনে যোগ দেন৷ একই দাবিতে উত্তরবঙ্গের সমস্ত ডিআই অফিসেও ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷
ডেপুটেশনের দেওয়ার পর সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বিকাশ ভবনে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের কাছে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সমস্যা ও দাবিগুলি তুলে ধরেছি৷ এই সকল সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছি৷’’
অভিযোগ, এদিনের এই কর্মসূচির অনুমতি পেতে বেশ কসরত করতে হয় শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্বকে৷ কর্মসূচির অনুমতি পেতে গত বুধবার দিনভর বিধাননগর কমিশনারেটের সঙ্গে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বাদানুবাদ চলতে থাকে৷ করোনা আবহে জমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিলের অনুমতি দিতে আপত্তি ছিল প্রশাসনের৷ কিন্তু, করোনা আবহে শাসক-বিরোধী দলের নেতা-মন্ত্রীরা মিছিল-বিক্ষোভ করার সুযোগ পেলে কেন শিক্ষকরা বিধি মেনে কর্মসূচি করতে পারবে না? শিক্ষক সংগঠনের তরফে সরাসরি তোলা প্রশ্ন৷ পরে এদিন দুপুরে করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড থেকে বিকাশ ভবনের উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু হওয়ার মুখে আটকে দেয় পুলিশ৷
বহু আলোচনার পর রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয়, পুলিশ যেখানে তাঁদের আটকে দিয়েছে, সেখানেই তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ করবেন৷ পরে করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনের পাশে দূরত্ব মেনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন শিক্ষক সংঠনের সদস্যরা৷ অবস্থানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির পত্রিকা ‘শিক্ষাবার্তা’ সম্পাদক সুব্রত বাগচী৷ এছাড়া নেতৃত্বে ছিলেন সহ-সাধারণ সম্পাদক নীলকান্ত ও তপন জানা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক স্বপন ভৌমিক, কলকাতা জেলা সম্পাদিকা সম্পা সরকার, হাওড়া জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মান্না ও হুগলী জেলা সম্পাদক প্রদীপ সিংহ-সহ অন্যানরা৷ অবস্থানে সমাবেশে এই পাঁচটি জেলার বিভিন্ন প্রতিনিধিরা ডেপুটেশনের দাবিগুলির উপর বিস্তারিতভাবে তাঁদের ক্ষোভ বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন৷ যখন রাজনৈতিক দলগুলি হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে মিছিল করছে, তখন কেন শিক্ষার দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মিছিল আটকানো হল? তীব্র প্রতিবাদ করেন শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা৷