কলকাতা: নিজের জেলায় শিক্ষকরা বদলি হওয়ার সুযোগ পাবেন৷ ঘোষণা সত্ত্বেও এখনও তা কার্যকর হয়নি৷ আপস বদলির কাউন্সেলিং হয়ে গেলেও তা এখনও কার্যকর করে উঠতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ ও আপস বদলি বন্ধ থাকায় চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন বাংলার বহু শিক্ষক৷ পরিস্থিতি এমনই, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে শিক্ষিকা মায়ের বদলির দাবি জানাতে বাধ্য হল পশ্চিম মেদিনীপুরে উচ্চমাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করা সৌমিতা সামন্ত৷ পরে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রীর সেই আশ্বাসের পর এবার শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করল রাজ্য সরকার৷
রাজ্য সরকার তরফে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুল শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া এখন থেকে সরাসরি হবে অনলাইনের মাধ্যমে৷ লাগবে না কোনও এনওসি৷ আপস বদলি কিংবা সাধারণ বদলির ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে৷ এতদিন আপস বদলি প্রক্রিয়া এসএসসির উপর নির্ভর করত৷ কিন্তু এখন থেকে শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে এসএসসির দফতরে সরাসরি হাজিরা দিতে হবে না৷ কোন ইন্টারভিউ বা কাউন্সিলিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে না শিক্ষকদের৷ সরাসরি এখন থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষকরা৷
আবেদনের জন্য এতদিন যে টাকা দিতে হত শিক্ষকদের, সেই সমস্ত ফি আর লাগবে না৷ আজ স্কুল শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বদলি ব্যবস্থা সরলীকরণ করতে অনলাইনের মাধ্যমে সমস্ত প্রক্রিয়াটি নিয়মিতভাবে করা হবে৷ বদলির ক্ষেত্রে এখন থেকে আর কোনও এনওসি লাগবে না৷ বদলির ক্ষেত্রে আর কোনও রকম ইন্টারভিউ দিতে হবে না৷ আবেদনের জন্য লাগবে টাকাও৷গোটা প্রক্রিয়া হবে অনলাইনে৷
আপস বদলির ক্ষেত্রে আজ থেকেই একটি পোর্টাল চালু করা হচ্ছে৷ ওই পোর্টালে সরাসরি আবেদন করা যাবে৷ সেখানে কোনও হেয়ারিং বা ইন্টারভিউ হবে না৷ শূন্যপদের ভিত্তিতে গোটা প্রক্রিয়াটি হবে৷ আপস বদলি ক্ষেত্রে এসএসসি যে কাউন্সেলিং ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে বা ঝুলে রয়েছে, সেগুলি আগামী ৭ দিনের মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, শিক্ষকরা নিজের জেলায় বদলির সুযোগ পাবেন৷ সেই ব্যবস্থা কার্যকর করতেই এই অনলাইন ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ তবে, নিজের জেলায় শূন্যপদ না থাকলে পার্শ্ববর্তী জেলায় বা বাড়ির কাছাকাছি বদলির সুযোগ থাকছে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷
এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘কোন হেয়ারিং চলবে না৷ যাতে দেখা যাচ্ছে, দু’জনে মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য রাজি আছেন, সেখানে কোনও প্রয়োজন নেই৷ এটা আমি কমিশনার সাহেবকে বলছি, মিউচুয়াল ট্রান্সফারের যত কেস আছে, সব কটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে, যেগুলি ছাড়া সম্ভব৷’’ শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, বদলির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক প্রভাব থেকে যাচ্ছিল৷ বদলি করলে টাকা দিতে হয়, আমি বলছি, কোন পয়সা লাগবে না৷’’ https://osms.wbsed.gov.in এই ওয়েবসাইটে লগইন করার পর করা যাবে আবেদন৷ কীভাবে আবেদন করবে? বিস্তারিত আসছে আজ বিকেল ডট কমের ফেসবুক পেজে- https://www.facebook.com/Aajbikal/
বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে চালু হাওয়ার সরকারি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষক সংগঠন অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, ‘‘আজ শিক্ষামন্ত্রী বদলি নিয়ে অনলাইন পোর্টালের সূচনা করলেন৷ রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বদলি নিয়ে নতুন দিশা পেলেন৷ সংগঠন সব ধরনের বদলি অনলাইন পদ্ধতিতে করার জন্য বারবার আবেদন করে আসছে৷ শিক্ষা দফতরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই৷’’
এবিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘স্কুল শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত শিক্ষক শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের জন্য বদলি ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। মাত্র একবার জেনারেল ট্রান্সফার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আজ পর্যন্ত তা বন্ধ রয়েছে। আজ আবার ঘোষণা করা হলো সকল শিক্ষক শিক্ষাকর্মীর জন্য অনলাইনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা কার্যকরী হবে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আমরা দাবি করছি, কোনভাবেই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যেন অস্বচ্ছতা কিংবা স্বজনপোষণ না হয়। স্বচ্ছতার সঙ্গে আবেদনের ভিত্তিতে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীকে এই সুযোগ দেয়া হোক এবং কালবিলম্ব না করে অতি দ্রুত তা কার্যকরি করা হোক।’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্য অনিমেষ হালদারের মন্তব্য, ‘‘আমরা বহুদিন থেকে মিউচুয়াল ট্রান্সফারের সরলীকরণ এবং সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত বদলি আবেদনের ভিত্তিতে বদলি (জেনারেল ট্রান্সফার) নিয়মিত ভাবে চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি। আজকের শিক্ষামন্ত্রীর আপস বদলির ক্ষেত্রে পোর্টাল চালু সহ বেশকিছু সরলীকরণের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু ২০১৪ সালে একবার মাত্র হওয়ার পর বন্ধ থাকা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি ‘আবেদনের ভিত্তিতে বদলি’ বা GT সিনিয়ারিটি বা অভিজ্ঞতার ও দূরত্বের ভিত্তিতে অনলাইনে হলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। যা খুব দ্রুত কার্যকরী করা দরকার। নিজের জেলায় বদলির ক্ষেত্রে একই জেলার মধ্যে যাঁরা অনেক দূরে আছেন তাদের ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। তবে, বদলি সংক্রান্ত একাধিকবার বিভিন্ন ঘোষণা হয়েছে কিন্তু তা বাস্তব রূপ পায়নি। ফলে সিদ্ধান্ত কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’’