বালুরঘাট: পেরিয়ে গিয়েছে ৭টি বছর৷ কিন্তু এখনও উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি৷ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরও নানান কারণ দেখিয়ে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সময় লেগে গিয়েছে বহু বছর৷ প্রায় ৫-৬ বছর ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতি পিছু ছাড়েনি কমিশনকে৷ দায়ের হয়েছে মামলা৷ নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ একদিকে করোনা মহামারী, অন্যদিকে নিয়োগে দুর্নীতির জেরে স্থগিতাদেশ, জোড়া বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রীর দোরে দোরে ঘুরছেন সফল চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ এবার সরাসরি মন্ত্রীর বাড়ির থেকে আওয়াজ উঠল, কবে হবে উচ্চ-প্রাথমিকে নিয়োগ?
উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের দাবি জানিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের প্রতিনিধিরা৷ পুরপ্রধান, বিধায়ক থেকে শুরু করে সংসদ, সকলের দরবারে নিজেদের দাবি পত্র পেশ করছেন পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের প্রতিনিধিরা৷ প্রাক্তন মন্ত্রীর দুয়ারে দাঁড়িয়ে তুলেছেন নিয়োগের দাবি৷ এবার খোদ প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে নিজেদের দাবিপত্র পৌঁছে দিয়ে এলেন চাকরির অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের একাংশ৷ আজ কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শাসককে নিয়োগের দাবিতে দেওয়া হয় ডেপুটেশন৷ বীরভূমের হাঁসন বিধানসভা এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদকেও ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ সামসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের হাতে ডেপুটেশন তুলে দিলেন চাকরিপ্রার্থীরা৷
আজ সকালে প্রবল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাসদার বাড়িতে যান চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের প্রতিনিধিরা৷ মন্ত্রীর বাড়ির সামনে জমায়েত করে নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করার চেষ্টা করেন তাঁরা৷ চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তুলে দেন দাবি পত্র৷ দু’বছরের সন্তান কোলে মন্ত্রীর কাছে নিয়োগ যন্ত্রণার কথা জানিয়ে আসেন উচ্চ প্রাথমিকের মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া এক চাকরিপ্রার্থী৷ এদিন উত্তর দিনাজপুরের প্রায় জনা পঞ্চাশেক চাকরিপ্রার্থী মন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকেই শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আওয়াজ তুলতে থাকেন৷
কিন্তু কবে মিটবে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ সমস্যা? মেধাতালিকায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা৷ কলকাতা হাইকোর্ট উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগে উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে৷ হাইকোর্টের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আদালতের নির্দেশ ছাড়া কমিশন কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারবে না স্কুল সার্ভিস কমিশন৷
ফলে মেধা তালিকায় চরম দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের হওয়া মামলা এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন৷ ২০১২ ও ২০১৫ সালের টেট পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ২০১৬ সাল থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু থেকেই প্রকাশ্যে আসে অনিয়ম৷ প্রার্থীদের যোগ্যতা সংক্রান্ত নথি যাচাই পর্ব থেকে ইন্টারভিউ, প্যানেল নিয়েও রয়েছে অভিযোগ৷ আর তার জেরে কার্যত থমকে গিয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে সফল চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ৷ একদিকে করোনা মহামারী, অন্যদিকে নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ, জোড়া বিপদের মুখে দিন গুনছেন চাকরিপ্রার্থীদের বড় অংশ৷