কলকাতা: রাজ্যের হেলথ ফেসিলিটি ম্যানেজার গ্রেড থ্রি নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকা ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের দেওয়া তালিকায় জ্বলজ্বল করছে পর্নতারকা সানি লিওনের নাম! তাও আবার এসটি তালিকাভুক্ত! সানির বাবার নাম সেখানে রয়েছে দিলীপ সানি৷ তবে, এখানেই শেষ নয়৷ সানি লিওনের পাশাপাশি গোটা মহাভারত উঠে এসেছে রাজ্য হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের তালিকায়৷ আর এই নিয়ে এবার মুখ খুলল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড৷
নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য অনলাইনে চাকরি প্রার্থীরা যে নামে আবেদন করেছেন সেই নামের নামের ভিত্তিতেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে জানালেন হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান তাপস মণ্ডল৷ সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আসলে অনলাইনে আবেদনের সময় যে চাকরিপ্রার্থী ঠিক যে যেভাবে আবেদনে তথ্য তুলে ধরেছেন সেই আবেদনের ভিত্তিতেই প্রকাশ করা হয়েছে সর্ট লিস্ট৷ কেননা বোর্ডের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তা তুলে ধরার জন্যই হুবহু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷
কমপক্ষে ৩ লক্ষের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল ফ্যাসিলিটি ম্যানেজার গ্রেড থ্রি পদে প্রভিশনাল লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ তবে এই ১৬ হাজার আবেদনকারী পরীক্ষায় বসতে পারবেন তা কিন্তু নয়৷ কারণ ১৬ হাজারের মধ্যে অনেকেরই আবেদন ভুয়ো৷ আর সেই কারণেই ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ আবেদনকারীর কাগজপত্র নিয়ে এসে জমা করানোর জন্য কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু যদি কেউ সেখানে সানি লিওনের নাম উল্লেখ করে ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, তাঁরা নিশ্চয়ই লিখিত পরীক্ষায় বসতে পারবেন না৷ যাদের কাগজপত্র ঠিক থাকবে লিখিত পরীক্ষায় বসতে পারবেন৷ যত শূন্য পদ আছে ইন্টারভিউতে তার পাঁচগুণ পরীক্ষার্থীকে ডাকা হবে বলে জানানো হয়েছে৷
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যদি ভুল ধরা পড়েই থাকে তাহলে কেন আগাম সতর্কতামূলক হিসাবে সেই ভুলগুলি কে চিহ্নিত করে আলাদা তালিকা তৈরি করা হল না? কেন এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক ঘটনা ঘটানো হল? স্বচ্ছতা আনার উদ্দেশ্য যদি থেকেই থাকে তাহলে এই ধরনের প্রার্থীদের তালিকায় কেন অন্তর্ভুক্ত করা হল? এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আবেদনকারীদের একাংশ৷
বোর্ডের ওয়েসাইট (http://wbhrb.in/fm/FM-ALL-SL.pdf) এই লিঙ্কে দেওয়া তালিকায় দেখা গিয়েছে, ৯৯৩১ ও ৯৯৩২ নম্বরে জ্বলজ্বল করছে দু’জন সানি লিওনের মাম৷ তাঁদের দু’জনের ইউজার আইডি ১১৫৮৪৬৯৷ সানি-অঙ্কিত রয়েছেন তালিকায় ২১ নম্বরে৷ ১০০০৯৭৭ তাদের ইউজার আইডি৷ কৃষ্ণ-সুদামা তালিকা আছে ৫ নম্বরে৷ ইউজার আইডি ১০৫৭৬৩৬৷ চাকরিপ্রার্থী দীপক রায়ের বাবার নাম দেওয়া হয়েছে দীপক সেন৷ রায় ও সেন পদবী নিয়েও রয়েছে এসটি ক্যাটাগরিতে৷ ওই ওয়েবসাইটে দেওয়া ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৮৫ জনের নামের তালিকা ঘিরে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে৷
ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের ওয়েবসাইট (http://wbhrb.in/index.html) খুললেই জ্বলজ্বল করছে শর্ট লিস্টেড একটি লিঙ্ক৷ বেগুনি রংয়ের লেখা ওই লিংকের উপর ক্লিক করলে খুলে যাচ্ছে নতুন একটি পেজ (http://wbhrb.in/fm-notice.html)৷ সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারকিপ্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ একইসঙ্গে ফ্যাসিলিটি ম্যানেজার গ্রেট ফ্রি পদে পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে (http://wbhrb.in/fm/FM-ALL-SL.pdf)৷ ওই তালিকায় বিস্তর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে৷
কিন্তু এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্তর সমালোচনা শুরু হতে (http://wbhrb.in/resume/notice_for_facilility.pdf) ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বোর্ড৷ সেখানে কোনও আধিকারিকের সই ছাড়া ও কোন লেটারহেড ব্যবহার না করে মোটা হরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, মেধাতালিকা ঘিরে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তা পুরোপুরি ভুয়ো৷ বোর্ড এমন কোনও বিভ্রান্তিকর তালিকা প্রকাশ করেনি বলেও জানানো হয়েছে৷ এই জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটে নজর রাখার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷
কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে এবার পাল্টা প্রশ্ন ছুটতে শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ তাঁদের অভিযোগ, বোর্ডের ওয়েবসাইটে এই ধরনের গলদ সংশোধন না করে কি করে ‘ভুয়া’ বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করল রিক্রুটমেন্ট বোর্ড? সংশোধিত তালিকা প্রকাশ না করে কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তি আরও বিড়ম্বনায় ফেলেছে চাকরিপ্রার্থীদের৷ কেননা, আদতে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, তা বুঝতে পারছেন না চাকরিপ্রার্থীদের বড় অংশ৷
এই প্রসঙ্গে বাম যুব ছাত্র নেতা নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার হেল্ফ ফেসিলিটি ম্যানেজারের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে চোখ রাখলে আপনি পশ্চিমবঙ্গের চাকরির পরীক্ষার বর্তমান দশা ও কী সীমাহীন দুর্নীতি, তার কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন৷ কী নেই তাতে! কৃষ্ণ-সুদামা, হায়-হ্যালো, সানি-অঙ্কিত৷ এরকম কত কত বাহারি সব পিতা-পুত্র বা পিতা-কন্যার নাম! নাহ, এখানেই শেষ নয়, পিতা-পুত্রের একই নাম! তাও পেয়ে যাবেন মেধাতিলাকায়৷ আর তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর! এ রাজ্যে যে এত মেধাবী পড়ুয়া ছিল, এই একটা তালিকা নিজচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না৷’’
আরও বলেন, ‘‘১৯৮১ তে জন্ম৷ ৯৯.৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল কেউ শুনেছিলেন? তখন তো সারা রাজ্যে যে ফার্স্ট হত৷ তার প্রাপ্ত নম্বরও এত থাকত বলে শুনিনি৷ আবার কারও কারও গ্রাজুয়েশনের প্রাপ্ত নম্বর ৯৮ শতাংশ! বলি এঁরা কারা? শর্ট লিস্টে কেন ঘাপটি মেরে আছে কে জানে! অবিশ্বাসীরা অবশ্য বলবেন এঁদের প্রকৃত কোন অস্তিত্বই নেই৷ তা বললেই বা কী যায় আসে, লিস্টে যে জ্বলজ্বল করছে কৃষ্ণ- সুদামা, হায়-হ্যালোরা৷ আসলে এই সরকারের কাপড় নেই৷ এই সরকার না তাড়ালে রাজ্যের যুবক যুবতীদের কোন ভবিষ্যৎ নেই৷’’