কলকাতা: আজ তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় দফার শেষ পূর্ণাঙ্গ আর্থিক বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ পুরসভোট ও ২০২১ সালের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ও আর্থিক টানাটানি থেকে রাজ্যকে দিশা দেখা দেখাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে আজ ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরে রাজ্য বাজেটের দিকে তালিয়ে বাংলার কয়েক কোটি জনতা৷
২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে এবারের রাজ্য বাজেটে বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প করেন অর্থমন্ত্রী৷ এদিনের বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শুরুতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে থাকেন৷ বলেন, দেশের অর্থনীতি আজ বিপন্ন৷ আজ গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে৷ গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে ভারত পিছিয়ে পড়েছে৷ বিগত আট বছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন৷ বাংলায় জিডিপি বৃদ্ধি হার হয়েছে ১০.৪ শতাংশ৷ বহু দ্বিগুণ বেড়েছে কৃষকের আয়৷ বাংলায় শিল্পের বৃদ্ধির হার হয়েছে ৩.১ শতাংশ৷ ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনে বাংলা প্রথম৷ ২২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বাংলায়৷ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তুলে ধরতে গিয়ে সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন অর্থমন্ত্রী৷ বলেন, কোথায় গেল মোদির মেক ইন ইন্ডিয়া? আমাদের রাজ্যে বেকারত্ব কমেছে ৪০ শতাংশ৷ কারণ, আমাদের সরকার সবাইকে নিয়ে চলছে৷
রাজ্যের কর্মসংস্থান বাড়াতে এদিন আরও একটি প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী৷ বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন ‘কর্মসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবছর ১ লক্ষ বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে৷ এই প্রকল্পের জন্য সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকিযুক্ত ঋণ দেওয়া হবে৷ এই জন্য আগামী অর্থবর্ষে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তব দেওয়া হয়েছে বাজেটে৷ একই সঙ্গে তিনি জানান, গত আর্থিক বছরে রাজ্যে ৯ লাখ ১১০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও দাবি অর্থমন্ত্রীর৷ জানান, দেশে বেকারত্ব বাড়লেও রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে৷
এদিন বাজেট ভাষণের উপসংহারে অর্থমন্ত্রী জানান, ‘‘আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার বিশ্বাস করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া আর্থিক বৃদ্ধি অর্থহীন৷ আমাদের সরকার দৃঢ়ভাবে এটা বিশ্বাস করে৷ বর্তমান আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলছে৷ আমরা রাজ্যে ৯ লাখ ১১০০০ মানুষের কর্মসংস্থা তৈরি করেছি৷ আগামী অর্থবছরের জন্য দু’লক্ষ ৫৫ হাজার ৬৭৭ কোটি বাজেট বরাদ্দ করার প্রস্তাব করছি৷’’
১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বকেয়া কর আদায় হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী৷ ৪৪ হাজার কোটি টাকা কর জালিয়াতি ধরা হয়েছে৷ কয়েকা কর ছাড়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ছ’মাসের কিস্তিতে কর মেটাতে চাইলে মোট করের অর্থক দিতে পারেন৷ মার্চের মধ্যে কর মেটাতে চাইলে নাম নামমাত্র সুদ নিয়ে মেটাতে পারবেন৷ একই সঙ্গে পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্ত লেট ফি মুকুব করার ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী৷
ক্ষুদ্রশিল্পে উৎসাহ দিতে আগামী ৩ বছরে রাজ্যে আরও ১০০টি নতুন এমএসএমই পার্ক তৈরির ঘোষণাও করেন৷ বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে বাংলার গরিব মানুষদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ ‘হাসির আলো’ নামে এই প্রকল্পের আওতায় যাঁরা ত্রৈমাসিকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁদের বিনা শুল্কে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হবে৷
সরকারি সুবিধা পেতে ২৩টি জেলা অফিসে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের ঘোষণা৷ বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে আদিবাসীদের জন্য নতুন বার্ধক্য ভাতার ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর৷ ‘জয় জহার’ নামে এই প্রকল্পে আদিবাসী ও তফশিলী উপজাতিভুক্তরা ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে বার্ধক্য ভাতা পাবেন৷ তবে অন্য কোনও পেনশন প্রকল্পে নাম থাকলে মিলবে না ভাতা৷ রাজ্যে একই সঙ্গে আরও তিনটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর৷ ৬০ বছরের বেশি বয়সের ২১ লক্ষ তফলিশি জাতি-উপজাতিদের জন্য মাসে ১ হাজার টাকা বার্ধক্য ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রকল্পের নাম ‘বন্ধু’৷ বিনামূল্যে সামিজিক সুরক্ষা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রীর৷ পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য একাধিক ফাস্ট্র্যাক কোর্টের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷ ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ মোটর ভিকেলসে সব জরিমানা মওকুফ করার ঘোষণা করেছেন তিনি৷