কলকাতা: গোটা বাংলাজুড়ে যখন রঙের উৎসব চলছে, ঠিক তখনই ফাল্গুনের টানা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে টানা ২৩ দিন ধরে চাকরির দাবিতে অশন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ হোলির বয়কট করে ‘বিবর্ণ হোলি’ কর্মসূচিও চলছে৷ নিজেদের দাবি ছিনিয়ে আনতে রাজপথ আঁকড়ে অনশনে বসেছেন কমপক্ষে ৩৫০ জন চাকরিপ্রার্থী৷ চাকরির দাবিতে টানা অনশনের খবর এখন বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতির আঙিনা৷ সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলার চাকরিপ্রার্থী কান্না৷ আর এতেই ভোটের মুখে চূড়ান্ত বিড়ম্বনায় পড়েছে বাংলার শাসক দল!’
কিন্তু, কেন এই বিড়ম্বনা? পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের ধারনা, বাংলার উন্নয়নকে মডেল করে লোকসভা নির্বাচনে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল৷ প্রচারে নোটবন্দি-জিএসটি-এনআরসির বিরোধিতা-সহ বাংলার কর্মসংস্থানকে হাতিয়ার করে ভোটের প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল৷ নোটবন্দির প্রভাবে যখন গোটা দেশে এক কোটি কর্মসংস্থান খোয়া গিয়েছে, তখন বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে বলে দাবি করেন আসছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বাংলার উন্নয়ন তুলে ধরে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের দখল প্রমাণেরও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন মমতা৷ কিন্তু, উন্নয়নের বাংলায় চাকরির দাবিতে রাজপথে সফল চাকরি-প্রার্থীদের টানা ২৩ দিনের অনশন এখন গোটা দেশের কাছে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সৌজন্যে জাতীয় সংবাদ মাধ্যম৷ একাধিক জাতীয় সংবাদমাধ্যমে রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷ এমনকি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের সংবাদমাধ্যমেও ভিডিও সহ চাকরিপ্রার্থীদের অনশনের খবর তুলে ধরা হয়েছে৷ পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা, ভোটের মুখে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের এই কর্মসূচি বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে৷ কেননা, এবারের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান ইস্যু যখন কর্মসংস্থান, তখনই বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের অশন ভোটের মুখে তৃণমূলের উন্নয়নের বিজ্ঞাপনে কিছুটা হলেও বাধা প্রাপ্ত করেছে৷ আর এই ইস্যুকেই হাতিয়ার করে ভোটের মঞ্চ কাঁপাতে শুরু করেছে বিজেপি সহ অন্য রাজনৈতিক দল৷
একদিকে বাংলা সহ জাতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ ও শঙ্খ ঘোষ সহ বুদ্ধিজীবী মহলের সমালোচনা দিনে দিনে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে শাসক শিবিরে৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বারতিনেক চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে৷ স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফেও উদ্যোগ নেওয়া হলেও মূল্য সমস্যার সমাধান হয়নি৷ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভোটের মুখে বিড়ম্বনা বেড়েছে শাসক শিবিরে৷
শাসকদলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে এবার যুবছাত্র অধিকার মঞ্চের প্রতীকী অনশনে বসেছেন মন্দাক্রান্তা সেন, সুভ্রা চক্রবর্তী ও সামিতা বেনার্জি৷ চাকরিপ্রার্থীদের অনশনে বসেই মন্দাক্রান্তা সেন জানিয়ে দেন, চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁদের সঙ্গে অনশন করবেন৷ SSC চাকরিপ্রার্থীদের দাবিকে পূর্ণ সমর্থনও জানান তিনি৷ প্রশাসনকে কটাক্ষ করে বলেন “২৩ দিন ধরে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ রাস্তায় পড়ে চাকরি চাইছেন সফল পরীক্ষার্থীরা৷ এর পরেও কি প্রচারে বেরিয়ে ভোট চাইতে লজ্জা করবে না নেতাদের? জানি না, সরকার আদৌ কিছু করবে কি না। সরকারের সদিচ্ছাই আমাদের একমাত্র কাম্য।” এর আগে গত বুধবার চাকরিপ্রার্থীদের ডাকা গণকনভেনশনে যোগ দিয়ে কবিতার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি৷ অন্যদিকে, শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের তরফেও আজ SSC চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে চলছে৷ কিংকর অধিকারী ও শহিদুর রহমান সহ অন্যান্যরা আজ তিনটে নাগাদ অনশন মঞ্চে যাচ্ছেন৷
শুধু মন্দাক্রান্তা সেন, সুভ্রা চক্রবর্তী ও সামিতা বেনার্জিরাই নন, এসএসসি যুবছাত্র অধিকার মঞ্চের অনশন মঞ্চে দাঁড়িয়ে চাকরিপ্রার্থীদের সমর্থন জানান শিল্পী সাহিত্যিক, সমজ কর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও৷ ছিলেন অভিনেতা, নাট্যকার, সঙ্গীত শিল্পীরাও৷ ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাষ চক্রবর্তী৷ অভিনেতা বাদশা, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের নীতিশ রায়, অনীক দত্ত, পল্লব কীর্তিনিয়া, সিপিআইএমএল লিবারেশনের দেশব্রতী পত্রিকার সম্পাদক, বাসুদেব বসু, অতনু চক্রবর্তী, অপূর্ব ঘোষ, শ্যামল চক্রবর্তী, শতরুপ ঘোষ, সৈকত গীরি, নন্দিনী মুখোপাধ্যায়৷ ছিলেন, আইনজীবী গোপাল মণ্ডল, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি হরপ্রসাদ সমাদ্দার, অভিনেতা বিমল চক্রবর্তী, সীমা মুখোপাধ্যায়, চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম৷ হিরন্ময় ঘোষাল, সঞ্জয় পাঠক, দীপক বেপারি, প্রতীপ নাগ, অর্পনা ধর, শুলগ্না পাল৷
অরাজনৈতিক গণ সম্মেলনে এসে বক্তব্য রাখেন ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম। নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, অভিনেতা বাদশা মৈত্র, চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত, সাহিত্যিক মন্দাক্রান্তা সেন আন্দোলনের সমর্থনে ভাষণ দেন। অনেকেই বলেন, আরও বেশি মানুষকে এখানে নিয়ে এসে আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে। বাদশা মৈত্র তো অনশনকারীদের রাস্তার উপর বসে পড়ার আহ্বান জানান। এখনও দাবি না মানার জন্য রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন বক্তারা।