আকাশ ছোঁয়া SSC-র কেলেঙ্কারি! লোকসভায় বিহিত চাইলেন দিলীপ

কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে চরম কেলেঙ্কারির প্রমাণ পেয়েছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ক্যাগ৷ ক্যাটের সম্প্রতিক রিপোর্টে রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন প্রশ্নের মুখে৷ ক্যাগের তরফে তথ্য প্রমাণ পেশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সহকারি শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ক্যাগের এই রিপোর্ট

আকাশ ছোঁয়া SSC-র কেলেঙ্কারি! লোকসভায় বিহিত চাইলেন দিলীপ

কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে চরম কেলেঙ্কারির প্রমাণ পেয়েছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ক্যাগ৷ ক্যাটের সম্প্রতিক রিপোর্টে রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন প্রশ্নের মুখে৷ ক্যাগের তরফে তথ্য প্রমাণ পেশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সহকারি শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ক্যাগের এই রিপোর্ট প্রকাশ হতেই এবার সংসদে এসএসসির দুর্নীতি তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷

রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলার আছে৷ ক্যাগের যে রিপোর্ট এসেছে, আপনারা সবাই জানেন৷ পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা ভয়ঙ্কর বিষয়৷ যতবার পরীক্ষা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগের প্রত্যেকবার কোন না কোন গণ্ডগোল হয়েছে৷ আর তার পরিণাম এই রিপোর্ট৷ এসএসসিতে ৪.০৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঠিকভাবে দেয়া হয়নি ৪৬ হাজার প্রার্থীর৷ সঠিকভাবে নাম্বার দেওয়া হয়নি৷ নম্বর বাড়ানো হয়েছে ৩২.৯ শতাংশের৷ ৩৩ হাজার লোকের নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ নম্বর কমানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার পরীক্ষার্থীর৷ এটা কত বড় বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে সমাজের কাছে৷ আমাদের যুব সমাজের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে৷ যারা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে৷ যারা গরিব পরিবার, তাঁদের বাবা-মা গয়না বিক্রি করে, জমি বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের পড়িয়েছেন৷ কিন্তু, আজ তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে৷ সেই ২০০৯ থেকে এই ছিনিমিনি খেলা চলছে৷ সিপিএমের আমলে শুরু হয়েছিল৷ সেই রোগটা এখন তৃণমূল সরকারের আমলে চলছে৷ ইচ্ছা করে এখানে গন্ডগোল করানো হয়েছে৷ যদি এটা চলতে থাকে তাহলে বাঙালি ভবিষ্যৎ কিন্তু দুর্বল হয়ে যাবে৷ আমরাও এটা দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাব৷ আমরা সহজে  ছাড়বো না৷ কারণ এটা পশ্চিমবঙ্গের মান সম্মান ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে৷’’

ক্যাগ রিপোর্টের উল্লেখ করা হয়েছে, একাধিক নিয়োগে পরীক্ষার্থীদের নম্বর কখন বাড়ানো, কখনও আবার কমানো হয়েছে৷ যোগ্য প্রার্থীদের নাম বাদ দিয়ে অযোগ্যদের ঢুকানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে৷ পরীক্ষা না দিয়ে নিয়োগ হয়েছে বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে৷

স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির প্রসঙ্গে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘এসএসসি নিয়ে দুর্নীতি যে আমলেই হোক তার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি আমরা৷ এবং বঞ্চিতদের উপযুক্ত সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে যোগ্যতার ভিত্তিতে ব্যক্তিরা একজনও যাতে বঞ্চিত না হন তা সুনিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষিত বেকারদের জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ হোক৷’’

ক্যাটের ২০১৮ সালের ৬ নম্বর রিপোর্টে বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে সহকারি শিক্ষক নিয়োগে ৩৭৬ জন অকৃতকার্য হয়েছে৷ কিন্তু পরে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে৷ একাদশ শ্রেণিতে সরকারী শিক্ষক নিয়োগে ৪২৬৬ জন পরীক্ষা দিয়েছেন৷ কিন্তু, তাঁরা কোন ভাষায় পরীক্ষা দিয়েছে তা এখনও অজানা৷ দশম ও একাদশে শিক্ষক নিয়োগের ৬৮৯ জনের নাগরিকত্বের কোন উল্লেখ করা হয়নি৷ এদের মধ্যে ১০জনকে আবার নিয়োগপত্র দিয়ে দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ একাদশে শিক্ষক নিয়োগে সিস্টেমে ১২৭২১ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতার নম্বর শূন্য৷ কিন্তু প্যানেলে নম্বর ভিন্ন৷ একাদশে শিক্ষক নিয়োগে অনলাইনে ৩৩০৫ জনের নম্বর দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, প্যানেলে সেই নাম্বর পরিবর্তিত হয়েছে৷  ক্যাগের রিপোর্ট দেখুন এই লিঙ্কে- https://cag.gov.in/sites/default/files/audit_report_files/Chapter_2_Performance_Audits_of_Report_No_6_of_2018_General_and_Social_Sector.pdf

রিপোর্টা বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকারকে তদন্ত করতে বলা হলেও তা হয়নি৷ এমনকি ২০১৮ সালের গোড়ায় ক্যাগ তার রিপোর্ট নবান্নে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও তা গত অধিবেশনের শেষ দিনে পেশ করা হয়৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসএসসি দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য প্রাপ্ত নম্বর অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে অথবা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ উত্তরবঙ্গের ১০ লক্ষ ২ হাজার ৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ২১ জনের নম্বরে গরমিল ধরা পড়েছে৷ ৬ হাজার ৫৬১ জনের নম্বর বাড়ানো হয়েছে৷ ৪ হাজার ৪৬০ জনের নম্বর কমানো হয়েছে৷ একাদশে শিক্ষক নিয়োগে এমন ২ হাজার ২৬৪ প্রার্থীর খোঁজ মিলেছে যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নম্বর ১ থেকে ২৪ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ একাদশে ৭ জন শিক্ষকের জাতী পরিবর্তন করে পর্যন্ত চূড়ান্ত প্যানেলে পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও রিপোর্ট পেশ করেছে ক্যাগ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + ten =