কলকাতা: একের পর এক সমস্যার মুখোমুখি হয়েই চলেছেন চাকরির দাবিতে টানা ২০ দিন অনশন চালিয়ে যাওয়া SSC চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অনশনে বসা ৪০০ চাকরিপ্রার্থী৷ অনশন মঞ্চে বসে গর্ভের সন্তানও হারিয়েছেন৷ একের পর এক সমস্যার কাটিয়ে তবুও জারি লড়াই৷ এবার অনশন মঞ্চে বসেই সর্বস্ব খোয়ালেন তিন এসএসএসসি চাকরি প্রার্থী৷
রাতের অন্ধকারে চুরি গেল চাকরিপ্রার্থীদের তিন ব্যাগ৷ টাকা-পয়সা, পোশাক ও দরকারি নথিপত্র খুইয়ে খোলা আকাশের নীচে চূড়ান্ত হতাশা এবার গ্রাহ করেছে অনশন মঞ্চে৷ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সহ তিনটি ব্যাগ খোলা গিয়েছে বলে SSC ছাত্র যুব মঞ্চের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ ময়দান থাকায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ৷
অনশনরত চাকরি-প্রার্থীদের মঞ্চে চুরির উপদ্রব বাড়তে থাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তারও দাবি তুলেছেন চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ চাকরি-প্রার্থীদের তরফে কপিল মিস্ত্রি জানিয়েছেন, ‘‘পর পর দু’দিনে তিনটি ব্যাগ চুরি হয়েছে৷ ব্যাগের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি খোয়া গিয়েছে৷ অনশন করতে গিয়ে ব্যাগে থাকা নথি হারিয়ে চূড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়েছেন তিন জন৷ আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি৷ পুলিশের তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও আমরা অনশন মঞ্চের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দাবি তুলছি৷ কারণ, এভাবে যদি নথিপত্র চুরি হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকে, তাহলে আমরাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোনও পথ থাকবে না৷ আমাদের আর্জি, অবিলম্বে আমারদের নিরাপত্তা বাড়ানো হোক৷’’
অন্যদিকে, অনশনরত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবসু৷ সোমবার বামফ্রন্টের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিমান৷ শুরুতেই অনশনরত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের প্রসঙ্গ তুলেন তিনি৷
চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে বিমানবাবু বলেন, ‘‘আজ টানা ১৯ দিন SSC-র চাকরিপ্রার্থীরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ চাকরির দাবিতে না খেয়ে পথে বসে রয়েছেন SSC চাকরিপ্রার্থীরা৷ অনশনরতদের নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ লেখালেখি করলেও অনেকেই কিছুই করছে না৷ বরং তাঁদের কাছে প্রধান গুরুত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রার্থীরা কে কী খাচ্ছেন, কীভাবে নিজেকে ফিট রাখছেন৷ কিন্তু, না খেয়ে যাঁরা রাস্তায় পড়ে রয়েছে, তাঁদের নিয়ে কেন কিছু বলা হচ্ছে না? আমার মনে হয়, তাঁদের দাবিগুলিও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে উচিত৷’’ তবে, এদিন বিমানবাবু সংবাদ মাধ্যমকে কাঠগড়ায় তুললেও ‘আজ বিকেল’ সহ বাংলার প্রায় সমস্ত সংবাদমাধ্যমই অনশনরত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা তুলে ধরেছে৷
অন্যদিকে, অনশনকারত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ খোলা চিঠি মীরাতুন নাহারের৷ অনশন মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘আক্রান্ত আমরা’রাও৷ চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়ে শঙ্খ ঘোষ এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের প্যাডে লিখেছেন, “রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে এঁদের মধ্যে জনা পঞ্চাশেক গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে সবারই চোখের সামনে এমনও যে ঘটে চলেছে, তার জন্য রাজ্যবাসী হিসেবে লজ্জা হওয়া উচিত৷’’ খোলা চিঠিতে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে বলেও জানান মীরাতুন নাহার৷
সম্প্রতি, অনশনকারীদের তরফে শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে গিয়ে কবির সঙ্গে দেখা করেন৷ শঙ্খবাবু তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনেন। তার পরে চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন৷ কেঁদেও ফেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ চাকরিপ্রার্থীদের দাবি-দাওয়া সরকারকে কাছে তুলে ধরারও আশ্বাস দেন তিনি৷
বিগত কয়েক দিন যাবত বৃষ্টিতে অনশনরত চাকরিপ্রার্থীরা খোলা আকাশের নীচে ভিজেছেন৷ জানা গিয়েছে, এলাকাটি সেনাবাহিনীর আওতায় থাকায় ওখানে খুঁটি পুঁতে ত্রিপল টাঙানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ ফলে ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচা যায়নি বলে জানান প্রার্থীরা৷ রবিবার সন্ধ্যার পরে শিলাবৃষ্টিতেও তাঁদের নাকাল হতে হয় চাকরিপ্রার্থীদের৷
আন্দোলনকারীদের দাবি, বিভিন্ন জেলার স্কুলে স্কুলে বহু পদ খালি। তা সত্ত্বেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বহু শিক্ষকপদে প্রার্থীর নাম ওয়েটিং লিস্টে তুলে এসএসসি-কর্তৃপক্ষ চুপচাপ বসে আছেন। শূন্য পদের বিষয়টি ‘আপডেট’ করা হচ্ছে না। ফলে প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অবিলম্বে তাঁদের নিয়োগের ব্যবস্থা করার দাবিতে মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে বসে অনশন করছেন অন্তত ৪০০ চাকরিপ্রার্থী। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৫৫ জন অনশনকারী। যদিও কমিশনের এ সবে হেলদোল নেই। কমিশন দাবি করেছে, কাউন্সেলিং চলছে। ধাপে ধাপে সবটাই হবে। সেই সঙ্গে এটাও জানানো হয়, ওয়েটিং লিস্টে থাকা সকলে চাকরির সুযোগ না-ও পেতে পারেন৷