কলকাতা: বাংলার ছাত্র আন্দোলনের সমস্ত ‘অনশন’ কর্মসূচিকে ছাপিয়ে গেল SSC চাকরি-প্রার্থীদের অনশন৷ আজ, ২১ দিনে পড়ল চাকরি-প্রার্থীদের অনশন কর্মসূচি৷ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তিন বার বৈঠকে বসেও মেলেনি সমাধান সূত্র৷ ফলে, নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন হবু শিক্ষকদের একাংশ৷ সাম্প্রতিক কালে বাংলার সমস্ত ছাত্র আন্দোলনকে ছাপিয়ে গেল SSC যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের কর্মসূচি! এবার টার্গেট কি সিঙ্গুরে ঐতিহাসিক অনশন কর্মসূচিকে টেক্কা দেওয়া?
রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক আন্দোলনের ইতিহাস বলছে, টানা ১৯ দিন অনশনের পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন পতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল৷ সরকারি চাকরিতে পতিদার সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ ও কৃষকদের ঋণ মুকুবের দাবি জানিয়ে ১৯ দিন ধরে আমরণ অনশনে বসেছিলেন হার্দিক প্যাটেল৷
মেডিক্যাল কলেজ একটি প্রাচীন, ঐতিহ্যমণ্ডিত কলেজ। এই মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ুয়াদের অনশন ওঠে ১৪ দিনের মাথায়৷ চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি ১২ দিন পর অনশন কর্মসূচি তুলে নেন কল্যাণী আইআইআইটি পড়ুয়ারা৷
সিঙ্গুরের জমি পুনরুদ্ধারে টানা ২৬ দিন অনশন, ধরনায় ছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই আন্দোলন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম মাইলস্টোন৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, সে ধরনা-অনশন তাঁকে বাংলার মসনদে পৌঁছে দিতে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল৷ উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা বাংলা৷ পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিভিন্ন দল ও ব্যক্তিত্ব৷
অন্যদিকে অনশনের ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের সহকর্মী যতীন দাশ টানা ৬৩ দিনের অনশন করে মৃত্যু বরণ করেছিলেন৷ ব্রিটিশ আমলে প্রতিবাদ স্বরূপ তাঁর এইভাবে মৃত্যুবরণ করার ফলে রাজবন্দীদের উপর অত্যাচার অনেকটা প্রশমিত হয়েছিলো বলে শোনা যায়৷
স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে কৃষকের জমি পুনরুদ্ধার, কিংবা সংরক্ষণ ইস্যু৷ দাবি আদায়ে শেষ ও চূড়ান্ত অস্ত্র অনশন৷ কিন্তু, রাজপথে দাঁড়িয়ে চাকরির দাবিতে টানা ২১ দিনের অনশন কর্মসূচি বাংলার ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ চাকরি-প্রার্থীদের দাবি, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই দাবি চলবেই৷ নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক চাকরি-প্রার্থী জানান, ‘‘প্রয়োজনে আমরা কৃষকের জমি পুনরুদ্ধারের দাবিতে বাংলার ঐতিহাসিক ২৬ দিনের অনশন কর্মসূচিকেও ভেঙে দেব৷ যতদিন না আমাদের দাবি পূরণ না হচ্ছে, ততদিন আমরা অনশন চালিয়ে যাব৷ তাতে যদি বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যায়, যাবে৷ তবে, আমরা এখনও মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় আছি৷ মুখ্যমন্ত্রীই পারেন আমাদের সমস্যা সমাধান করতে৷’’
ওয়েটিং লিস্টে থাকা এই প্রার্থীরা ২১ দিনেরও বেশি সময় ধরে অনশন করছেন। তাঁদের দাবি, সবাইকে চাকরি দিতে হবে। এদিকে, এসএসসি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে যে হাজার তিনেক শূন্য পদে তৃতীয় কাউন্সেলিং করার কথা ঘোষণা করেছে, এই প্রার্থীদের অধিকাংশ তার বাইরে রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের ব়্যাঙ্ক আরও নীচে রয়েছে বলে সরকার এবং এসএসসি সূত্রে দাবি।