আরও বাড়ছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ? তুঙ্গে অসন্তোষ

কলকাতা: ছ’মাসের বেতন কমিশন। ৪২মাস গড়িয়ে গিয়েছে। বকেয়া রয়েছে বিরাট পরিমাণ মহার্ঘ ভাতা। এর ওপর রয়েছে চোখরাঙানি। প্রতিহিংসার বদলি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত অবস্থার কোনও পরিবর্তন ২০১১ সালের পর আর হয়নি৷ মহার্ঘভাতার দাবি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বহুবার দরবার করে কোনও লাভ না হওয়ায় কর্মচারীরা আদালতে গিয়েছেন৷ কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ কার্যকরী

আরও বাড়ছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ? তুঙ্গে অসন্তোষ

কলকাতা: ছ’মাসের বেতন কমিশন। ৪২মাস গড়িয়ে গিয়েছে। বকেয়া রয়েছে বিরাট পরিমাণ মহার্ঘ ভাতা। এর ওপর রয়েছে চোখরাঙানি। প্রতিহিংসার বদলি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত অবস্থার কোনও পরিবর্তন ২০১১ সালের পর আর হয়নি৷ মহার্ঘভাতার দাবি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বহুবার দরবার করে কোনও লাভ না হওয়ায় কর্মচারীরা আদালতে গিয়েছেন৷ কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ কার্যকরী করতেও রাজ্য সরকারের কোনও সদিচ্ছাও অমিল৷ আর এই নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ৷

সরকারি কর্মীদের দীর্ঘ দাবি ছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু করা৷ গত ২৫ নভেম্বর বেতন কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ ছ’মাসের জন্য বৃদ্ধি করা হয়৷ সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে আগামী রবিবার৷ বেতন কমিশন এখনও বিকাশ ভবনের অফিসে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ সূত্রের খবর, কর্মী ও আধিকারিকদের নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলির বক্তব্য শোনার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি৷ এই পরিস্থিতিতে কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ ফের বৃদ্ধি করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সূত্রের খবর, বেতন কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে। লোকসভা ভোটের পর্ব শেষ হওয়ার পর কমিশন বেতন সংক্রান্ত প্রথম পর্যায়ের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করলেও অন্যান্য কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করতেই হবে বলে সরকারি মহল মনে করছে৷ তবে, ভোটের ফলাফল দেখে মেয়াদ বৃদ্ধির ঝুঁকি আদৌ রাজ্য নেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷

দেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এরাজ্যের কর্মচারীরা কোনদিন বেতন কমিশনের মুখ দেখেননি। ১৯৭৭ সালে বাম সরকারের আমলে পাঁচটি বেতন কমিশন করা হয়৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সরকার ষষ্ঠ বেতন কমিশন তৈরি করেছে। সেই বেতন কমিশনের সুপারিশ ৪২ মাসেও জমা পড়েনি। রাজ্য সরকারের কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগামী ২৬ মে সেই বাড়ানো সময়ের মেয়াদ আবার শেষ হয়ে যাবে।

ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু না হওয়ায় ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বেশ কয়েক বারবার খোঁচা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি৷ বিজেপি ক্ষমতায় এলে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করার আশ্বাসও দিয়েছেন নমো৷ তার প্রভাবও পড়েছে ভোটের ফলাফলে৷ পোস্টাল ব্যালট গণনায় দেখা গিয়েছে বিজেপির দখলে গিয়েছে ৩৯টি আসন৷ নির্বাচন কমিশনের এই তথ্য দেখে মাথায় হাত শাসক শিবিরে৷

দেশের অধিকাংশ রাজ্যে যখন মহার্ঘভাতা বকেয়া ফেলে রাখা নেই, অধিকাংশ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা যখন বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন তখন এরাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কেন? প্রশ্ন সরকারি কর্মীমহলে৷ পরিসংখ্যান বলছে, এরাজ্যের কর্মচারীরা এখনও ৪১ শতাংশ মহার্ঘভাতা কম পান। একই সঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ না মেলায় পঞ্চম বেতন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে দীর্ঘ কয়েক বছর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি হয়নি। বর্তমান বেতন তার সঙ্গে মহার্ঘভাতা এবং তার সঙ্গে বেতন কমিশনের বেতন বৃদ্ধির বুস্টিংয়ের সুযোগ সুবিধা থেকে এরাজ্যের কর্মচারীরা বঞ্চিত রয়েছেন। একদিকে অভিরূপ সরকারের বেতন কমিশনকে সরিয়ে রাখা অন্যদিকে মহার্ঘভাতা দেওয়া সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের মান্যতা না দেওয়ার কৌশল একই সঙ্গে জারি রয়েছে।

২০১৭ সালে কর্মচারীরা মহার্ঘভাতার দাবি নিয়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (স্যাট) মামলা দায়ের করেছিলেন। রাজ্য সরকারের তৈরি করা এই ট্রাইব্যুনাল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দেবার আবেদন অগ্রাহ্য করে। স্যাট তার রায়ে বলে, মহার্ঘভাতা রাজ্য সরকারের দয়ার দান। মহার্ঘভাতা পাবার আইনগত অধিকার কর্মচারীদের নেই। স্যাটের সেই রায়কেই চ্যালেঞ্জ করে কর্মচারীরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ স্যাটের রায়কে নস্যাৎ করে নির্দেশ দেয় মহার্ঘভাতা পাবার অধিকার কর্মচারীদের আইনসিদ্ধ অধিকার। মহার্ঘভাতা দয়ার দান নয়। কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়ে মামলাটি স্যাটে পাঠিয়ে দিয়ে বলেছিল, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা পাবার বিষয়টি স্যাট ঠিক করবে। কী হারে মহার্ঘভাতা পাবেন তা ঠিক করতে হবে এবং দিল্লি ও চেন্নাইয়ে এরাজ্যের কর্মচারীরা যে হারে মহার্ঘভাতা পেয়ে থাকেন তা এরাজ্যের কর্মচারীরা কীভাবে পাবেন তাও স্যাটকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই মামলা নিষ্পত্তি করতে স্যাটকে দু’মাস সময় দিয়েছিল হাইকোর্ট। রাজ্য সরকার মামলা বিলম্বিত করতে প্রথমেই স্যাটে জানায় দিল্লি ও চেন্নাইয়ে এরাজ্যের কর্মচারীরা যে মহার্ঘভাতা পান তার ফাইল হারিয়ে গেছে। সেই ফাইল খুঁজতেই বেশ কয়েকমাস সময় রাজ্য সরকার কাটিয়ে দিল। এরপরই আরও সময় নষ্ট করার জন্য রাজ্য সরকারের হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্ট সরকারের সেই রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি আবার স্যাটে পাঠিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়। স্যাটের বিচারকরা সেই মামলার এখনও শুনানি গ্রহণ করছেন। ফলে গত আগস্ট মাসে দেওয়া কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা সংক্রান্ত নির্দেশ বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। এই অবস্থার মধ্যেই সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে হাঁটছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =