কলকাতা: কোচবিহারের পর এবার হাওড়া৷ ভোটের কাজে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ভোটকর্মীদের বিক্ষোভ৷ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা চেয়ে বিক্ষোভ দেখান শ’পাঁচেক ভোট কর্মী৷ শনিবার হাওড়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোট কর্মীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা৷
ভোট কর্মীদের দাবি, প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না হলে ভোট করাতে যাবে না তাঁরা৷ কারণ, ভোটের কাজে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হলে এর দায় নেবে কে? নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভোটের প্রশিক্ষণ ও কাজ বন্ধ রাখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা৷ তাঁদের দাবি, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদ আমাদের প্রত্যেকের জীবন রক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা মনে করি প্রকৃত নিরাপত্তা ছাড়া এই ভোটকর্মী হিসেবে শিক্ষক নিযুক্তিকরণ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অমানবিক। তাই আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই ঝুঁকিপূর্ণ ভোটের কাজ অত্যাবশ্যক হতে পারে না৷’’
শুক্রবার ভোট প্রশিক্ষণ বয়কট করে কোচবিহারে ভোটকর্মীরা বিক্ষোভ দেখান৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা হয়৷ নিরাপত্তার দাবিতে পৃথক তিনটি স্থানে পথ অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ ভোটকর্মীদের একাংশ৷ শুক্রবার ভোটের প্রশিক্ষণ বানচাল করে নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কোচবিহারের তিন প্রাণকেন্দ্রের রাজপথে বসে পড়েন ভোটকর্মীদের একাংশ৷ ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করাতে যাচ্ছি না, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে চলবে এবার ভোট বয়কটের পালা’- এই স্লোগান তুলে আজ পৃথক পৃথক ভাবে শহর কোচবিহার, মাথাভাঙা ও দিনহাটায় দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করে রাখানে ভোটকর্মীদের একাংশ৷ অবরোধের জেরে সপ্তাহ শেষে নাকাল হন সাধারণ যাত্রীরা৷
‘লোকসভা নির্বাচনে আবার হতে চাই না রাজকুমার৷’ এই স্লোগান তুলে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ভোটকর্মীদের৷ পর্যাপ্ত কেন্দ্র বাহিনী ছাড়া কোনও ভাবেই ভোটের কাজ করা হবে না, শুক্রবার এই দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখালেন শ’পাঁচেক ভোটকর্মী৷ কোচবিহার জেলা শাসকের দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ ভোটকর্মীদের৷ নিরাপত্তা সংক্রান্ত লিখিত জবাব না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে বলেও ভোটকর্মী ঐক্যমঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে৷ এদিন নিরাপত্তার দাবিতে পথ অবরোধও করেন ভোটকর্মীদের একাংশ৷
প্রতিটি বুথকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে, এই দাবিতে এদিন কোচবিহার ভোটকর্মী ঐক্যমঞ্চের কোচবিহারের মাথাভাঙা শহরে বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া রাজ্যের পুলিশ দিয়ে ভোট করানো হলে কাজ বয়কচটেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে৷ তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের বাহিনী দিয়ে ভোট করালে কোনও ভোটকর্মী ভোট করাতে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাবেন না৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গত ১৪ মে ইটাহারে ভোট গ্রহণের কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৪৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার রায়গঞ্জের বাসিন্দা রাজকুমার রায়। পরদিন ১৫ মে সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের সোনাডাঙা এলাকায় রেললাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
এই ঘটনায় পর ভোটকর্মীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনও রাজকুমার রায়ের মৃত্যু রহস্য প্রকাশ্যে আসেনি৷ এবারের নির্বাচনেও যাতে এমন কোনও ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপ্তার দাবি জানিয়ে এসেছেন ভোট কর্মীদের একাংশ৷ কিন্তু, বারবার অভিযোগ জানানো হলেও মেলেনি সমাধান৷ মূলত, এবারের নির্বাচনে পর্যপ্ত নিরাপ্তা নিশ্চিত করতে আজ বিক্ষোভ দেখান ভোটকর্মীদের একাংশ৷
অন্যদিকে, ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আগামী ৮ এপ্রিল শহর কলকাতার বুকে মহামিছিলে ডাক ভোট কর্মীদের একাংশের৷ রাজ্যের সমস্ত জেলায় শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে৷ আগামী ৮ এপ্রিল, দুপুর ১২টায় কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ঐক্য মঞ্চের প্রতিবাদ মিছিল ও নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ডেপুটেশন নেওয়া হয়েছে বলে খবর৷
প্রতিটি জেলা থেকে ভোট কর্মীদের সংগঠিত করে সারা রাজ্যজুড়ে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে তা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, আগামী ৮ এপ্রিল সারা জেলার আন্দোলনের ধারা কলকাতায় মিলিত হয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করবে। নিজেদের নিরাপত্তা মান মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে এই মিছিলে সকলকে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে৷