TET নম্বর বিভ্রাটে জাবাব SSC-র, অনিময় প্রমাণে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি

কলকাতা: দীর্ঘ মামলার জট কাটিয়ে প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের মেধা তালিকা৷ মেধা তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানান বিতর্ক৷ আর এই নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ৷ চাকরিপ্রার্থীদের সেই উদ্বেগ কাটিয়ে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার৷ একই সঙ্গে আজ বিকেল ডট কমকে ভূয়শী প্রশংসা করেছেন

TET নম্বর বিভ্রাটে জাবাব SSC-র, অনিময় প্রমাণে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি

কলকাতা: দীর্ঘ মামলার জট কাটিয়ে প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের মেধা তালিকা৷ মেধা তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানান বিতর্ক৷ আর এই নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ৷ চাকরিপ্রার্থীদের সেই উদ্বেগ কাটিয়ে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার৷ একই সঙ্গে আজ বিকেল ডট কমকে ভূয়শী প্রশংসা করেছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান৷

আজ কমিশনের চেয়ারম্যানকে আজ বিকেল ডট কমের তরফে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোনও বিষয়ে ক্যাটাগরিতে শূন্যপদ রয়েছে ৩৪টি৷ অথচ মেধাতালিকায় নাম রয়েছে ৪০০ জন চাকরিপ্রার্থীর৷ সেখানে কিভাবে ১:১.৪ অনুপাতে নিয়োগ করা হবে? জবাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের নিয়ম হচ্ছে ১:১.৪৷ ১০০টি পদের ক্ষেত্রে ১৪০ জনের নাম থাকবে৷ কিন্তু অন্য একটি নিয়মে বলা আছে, লাস্ট ক্যান্ডিডেটের নম্বর যতজনের এক থাকবে, তত জনের নাম প্রকাশ করতে হবে৷ উদাহরণ দিয়ে বলি, মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় সরকার ১০ জনকে পুরস্কৃত করে৷ কিন্তু দেখা গেল ওই ১০ জনের তালিকায় একই নাম্বার অনেকজন পেয়েছেন৷ তাঁদের নাম ও মেধা তালিকায় তোলা হয়৷ অর্থাৎ আমাদের নিয়ম হচ্ছে, প্যানেল হবে ১:১.৪ হিসাবে৷ আর দ্বিতীয় ক্লজে বলা আছে, শেষ চাকরিপ্রার্থীর নম্বর যত জন প্রার্থীর থাকবে, তাদের সবাইকে ডাকতে হবে৷ এটাই নিয়ম৷ আর সেটাই করা হয়েছে৷ ধরুন আপনি পেয়েছেন ১৯ নম্বর৷ আমি পেয়েছি ১৯৷ তাহলে আপনাকে কেন ডাকা হবে না?’’

TET-এর নম্বর বৃদ্ধি নিয়ে যে অভিযোগ কমিশনের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, সেবিষয়ে কমিশনের বক্তব্য কী? জবাবে সৌমিত্রবাবু জানিয়েছেন, ‘‘টেটের নম্বর নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে, তা আপনাকে একটু বিস্তারিত বুঝতে হবে৷ এই যে প্যানেল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দু’টি টেটকে কনফিগার করা হয়েছে৷ একটি ২০১৫ সালের টেট৷ আরেকটি ২০১২ সালের টেট৷ ২০১২ সালে হয়েছিল ৯০ নম্বরের৷ ২০১৫ সালের টেট হয়েছিল ১৫০ নম্বরের ভিত্তিতে৷ টেটের ওয়েটেজ হচ্ছে ৪০৷ এবার ১০০ নম্বরের যে মেধাতালিকা হয়েছে, তাতে টেটের ওয়েজেস ৪০৷ এবার বুঝুন, ২০১২ সালের টেটে ৯০ নম্বরের মধ্যে কেউ পেয়েছেন ৬০ নম্বর৷ ২০১৫ সালের ১৫০ নম্বরের টেটে কেউ পেয়েছেন ৭০ নম্বর৷ এই দু’জনের প্রাপ্ত নম্বর কি এক হল? এক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বরের নিরিখে প্রথমটির ক্ষেত্রে হবে ৬০-র ৯০ গুনিতক ৪০ ও দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে হবে ৭০-র ১৫০ গুণিতক ৪০৷ এখানে যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেটা হল, এই মেধা তালিকায় কোনও টেটের নম্বর দেওয়া হয়নি৷ দেওয়া হয়েছে টেটের ওয়েটেজ৷ চাকরিপ্রার্থীরা এখানে বুঝতে পারছেন না, টেটের নম্বর ও ওয়েটেজ এক জিনিস নয়৷ কমিশনের ওয়েবসাইটে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে, মেধাতালিকায় টেটের ওয়েটেজ প্রকাশ করা হয়েছে৷ টেটের নম্বর উল্লেখ করা হয়নি৷ কারন, আমার এখানে দু’রকমের টেট হয়েছে৷ ৯০ এবং ১৫০৷ ফলে আমি সংখ্যা দিয়ে এটা বিচার করতে পারব না৷ আমাকে অনুপাত বার করতে হবে৷ সেটাই নিয়ম৷’’

আর কি ভেরিফিকেশন বা ইন্টারভিউ হবে? কোনও অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী নিয়োগে ডাক পেয়েছেন? জবাবে সৌমিত্রবাবু জানিয়েছেন, ‘‘অনেকে বলছেন, অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীদের ডাকা হয়েছে৷ কিন্তু আমি চেয়ারম্যান পদে থেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছি, একটাও অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী মেধা তালিকায় নেই৷ আমি ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে জানিয়েছি, কোন অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীকে স্কুল সার্ভিস কমিশন ডাকেনি৷ এই হলফনামা জমা দেওয়ার পরও আমার কি কোনও দায়িত্ব নেই? আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছি, এই মেধাতালিকায় একটিও অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীর স্থান হয়নি৷ যারা যারা প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন, তাঁদের আমরা নম্বর দিতে বাধ্য৷ একজন চাকরিপ্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের নিয়ে সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছিলেন৷ সেখান থেকে সেই চিঠি মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তর হয়ে এসএসসির দপ্তরে এসে পৌঁছায়৷ সেখানে উল্লেখ করা হয়, এক চাকরিপ্রার্থী অপ্রশিক্ষিত হওয়া সত্বেও কীভাবে নিয়োগে ডাকা হয়েছে৷ আমি তথ্যভাণ্ডার থেকে পুরো জেরক্স খুঁজে দেখিয়ে দিয়েছি, ওই চাকরিপ্রার্থী প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট আমাদের কাছে জমা করিয়েছিলেন৷ ফলে কে কখন কোথা থেকে প্রশিক্ষণ করছে, সেটা আমাদের জানার কথা নয়৷ আমাদের কাছে সার্টিফিকেট দাখিল করলে আমরা তাদের নম্বর দিতে বাধ্য৷ আপনি প্রমাণ করে দেখান, একটিও অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীকে ডাকা হয়েছে৷ তাহলে আমি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যাব৷ এত বড় কথা বলে গেলাম৷’’

স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার আরও বলেন, ‘‘আমরা খুব পরিষ্কার করে জানিয়েছি, যার যা অভিযোগ আছে তাঁরা তাঁদের অভিযোগ জমা করুক৷ আমরা ছুটির দিনসহ ১০টা থেকে ৫ পর্যন্ত দপ্তর খোলা রেখে অভিযোগ সংগ্রহ করছি৷ আমরা লিখিত অভিযোগ নিচ্ছি৷ এখনও পর্যন্ত ১০০ কাছাকাছি অভিযোগ এসে জমা পড়েছে৷ আর এটাও ঠিক, অভিযোগ মানেই তো আর অভিযোগ নয়৷ আমি তো পড়ে দেখব কী অভিযোগ করছে৷ আমি যদি আপনাকে চরিত্রহীন বলি তাহলে তো আপনি চরিত্রহীন হয়ে যাচ্ছেন না৷ তার জন্য আমাকে প্রমাণ করতে হবে৷ আমি তো খুব পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, অভিযোগের সারবত্তা দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *