নিয়োগের দাবি তুলতেই চিকিৎসকদের জেলে ভরল পুলিশ

কলকাতা: জানাতে গিয়েছিলেন দাবি৷ নিয়োগের জন্য আর্জি জানিয়ে ছিল পশুচিকিৎসকদের ডেপুটেশন৷ কিন্তু, সপ্তাহের প্রথম দিনেই দপ্তরে গরহাজির মন্ত্রী থেকে আমলা৷ অগত্যা, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টরকে ডেপুটেশন জমা দিতেই এবার পশুচিকিৎসকদের জেলে জেলে ভরল পুলিশ৷ টানা ৪ ঘণ্টা জেলে ভরে অবশেষে পশুচিকিৎসকদের ছাড়া হল পিআর বন্ডে৷ ডেপুটেশ কর্মসূচিতে গিয়ে বিধাননগর পুলিশের সৌজন্যে জেলে বন্দি

নিয়োগের দাবি তুলতেই চিকিৎসকদের জেলে ভরল পুলিশ

কলকাতা: জানাতে গিয়েছিলেন দাবি৷ নিয়োগের জন্য আর্জি জানিয়ে ছিল পশুচিকিৎসকদের ডেপুটেশন৷ কিন্তু, সপ্তাহের প্রথম দিনেই দপ্তরে গরহাজির মন্ত্রী থেকে আমলা৷ অগত্যা, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টরকে ডেপুটেশন জমা দিতেই এবার পশুচিকিৎসকদের জেলে জেলে ভরল পুলিশ৷ টানা ৪ ঘণ্টা জেলে ভরে অবশেষে  পশুচিকিৎসকদের ছাড়া হল পিআর বন্ডে৷ ডেপুটেশ কর্মসূচিতে গিয়ে বিধাননগর পুলিশের সৌজন্যে জেলে বন্দি হতে হল পশুচিকিৎসকদের৷ গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষুব্ধ পশুচিকিৎসকদের একাংশ৷

ঠিক কী ছিল পশুচিকিৎসকদের দাবি? আর তার জেরে তাঁদের ভরা হল জেলে? আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বন্ধ নিয়োগ৷ দক্ষ পশুচিকিৎসকদের অভাবে ধুঁকছে গ্রামবাংলার অন্তত ২ হাজার ৬৫২টি পশুচিকিৎসা কেন্দ্র৷ আর তাতেই মার খাচ্ছে বাংলার পশুপালন থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার অর্থনীতি৷ কর্মীর অভাবে ধুঁকতে থাকা পশুচিকিৎসা কেন্দ্রের হাল ফেরাতে ও প্রশিক্ষিতদের নিয়োগের দাবিতে আজ  প্রাণী সম্পদ বিকাশ ভবনের সামনে ধর্না ও ডেপুটেশন কর্মসূচির ডাক দেন পশুচিকিৎসকদের একাংশ৷

নিয়োগের দাবি তুলতেই চিকিৎসকদের জেলে ভরল পুলিশপশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশের অর্থনীতিতে কৃষিকাজের সঙ্গে পশুপালন বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু এই পশুপালন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে৷ যার অন্যতম কারণ উপযুক্ত মাত্রই প্রশিক্ষিত লোকের অভাব৷ আর সেই কারণে কোথাও যেন খামতি থাকছে পশুপালনের উদ্যোগ৷ দু’টি গোরু ১০টি হাঁস, খরচ জোগাবে ১২ মাস, সরকার কর্তৃক গৃহীত এই পদক্ষেপ গুলিরও মার খাচ্ছে৷ রাজ‍্যের প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েত স্তরে একটি করে পশুদের জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে৷ যার সংখ্যা ২ হাজার ৬৫২টি৷ এগুলি প্রায় ধুঁকছে দক্ষ কর্মীর অভাবে৷ খাতায় কলমে খোলা থাকলেও বাস্তব বলছে অন্য কথা৷ ফলে, কৃষকে ছুটতে হচ্ছে গ্রাম থেকে দূরে ব্লক প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ কিংবা রাজ‍্য প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷

নিয়োগের দাবি তুলতেই চিকিৎসকদের জেলে ভরল পুলিশবর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এই অভাব মেটাতে ১১০০ কর্মী নেবেন৷ কিন্তু, তখনও পর্যন্ত বাংলায় ১ হাজার ১০০ প্রশিক্ষিত কর্মী ছিল না৷ ফলে, ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় প্রশিক্ষণ দেওয়া কাজ৷ বাম আমলে আসন সংখ্যা ছিল ৭০৷ তা বাড়িয়ে করা হয় ৪১০৷ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি প্রাণী সম্পদ বিকাশ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে৷ কিন্তু আজ ছবিটা একই৷ বরং প্রতি বছর অবসর নিচ্ছেন অনেক কর্মী৷ কিন্তু নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি৷ ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ মহাশয়ের কাছে বহু বার আবেদন করলেও আজও কিছু আশার আলো দেখা যায়নি৷ এই মুহূর্তে প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা ১ হাজার ২০০ বেশি৷ শেষ নিয়োগ হয় ২০১২ সালে৷

নিয়োগের দাবি তুলতেই চিকিৎসকদের জেলে ভরল পুলিশএবিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সজ্বল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমিও এই প্রশিক্ষণ নিয়েছি৷ কিন্তু, আজ পশুচিকিৎসার হাল খুব বেহাল৷ কিছু হাতুড়ে লোক দিয়ে চিকিৎসা করতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছে গ্রামের সাধারণ কৃষক৷ গত বছর FMD (FOOTH AND MOUTH Disease) বা এঁসো বা খুরাই রোগের নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প চালু করা হয়৷ কিন্তু অপ্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করায় এই প্রকল্প সাফল্য পায়নি৷ ফলে গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মারা গিয়েছে অসংখ্য গবাদিপশু৷ এই ভেঙে পড়া পরিস্থিতিকে ফিরিয়ে আনতে আর আমাদের নিয়োগের দাবিতে আমরা আজ প্রাণী সম্পদ বিকাশ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভের দেখাচ্ছিলাম৷ কিন্তু, দপ্তরে কোনও মন্ত্রী-আমলা না থারায় আমারা অ্যাডিশনাল ডিরেক্টরকে ডেপুটেশন জমা দিই৷ তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন৷ কিন্তু, ডেপুটেশন জমা দেওয়ার পরই বিধাননগর পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে থানায় তুলে যায়৷ সেখানে আমাদের আটকে রাখা হয়৷ আরআর বন্ডে সই করিয়ে আমাদের মুক্তি দেওয়া হয়৷ এমনটা যে হবে, তা আগেই আমাদের পুলিশ ফোন করে হুমকি দিয়ে রেখেছিল৷ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করারও হুমকি দেওয়া হয়েছি৷ কিন্তু, আমরা সেই হুমকি উপেক্ষা করে আজ আমরা আমাদের দাবি জানাতে গিয়েছিলাম৷ এই প্রথম আমরা জেলের মধ্যে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম৷ নিয়োগের দাবি জানানো কী এই রাজ্যে অবরাধ?’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =