কলকাতা: আপার প্রাইমারি চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল মহানগরের রাজপথ৷ আন্দোলনের জোয়ারে মৃতপ্রায় আপার প্রাইমারি নিয়োগের ইস্যুটি ‘দাবানলে’র মতো গোটা বঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছিল আপার প্রাইমারি চাকরি প্রার্থী মঞ্চ৷ দ্রুত নিয়োগের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় তাঁদের এই অন্দোলন৷ রাতভর অবস্থান বিক্ষোভ চলার পর বুধবারও নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু অভিযোগ, বুধবার রাতে তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ ভেঙে দেয় পুলিশ৷ মধ্যরাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে তাঁদের চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে৷ এর পর রীতিমতো তাঁদের ‘আন্দোলন ভেঙে’ পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় শিয়ালদহ স্টেশনে৷ হবু শিক্ষকদের আন্দোলন ভেঙে কার্যত ‘হিরো’ পুলিশ, মত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের৷ কিন্তু রাজ্যের হবু শিক্ষকদের এই করুন পরিণতিতে ‘লজ্জিত’ শিক্ষক মহল৷
আরও পড়ুন- শিক্ষামন্ত্রীর নিয়োগ আশ্বাসেও কাটল না জট! পাল্টা কৌশল চাকরিপ্রার্থীদের
চাকরি প্রার্থী মঞ্চের তরফে বলা হয়, ‘‘এই আন্দোলনে কম করে ৫ হাজার প্রার্থীর উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ কিন্তু সেখানে ছিল মাত্র ৫০০ জন৷ এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই প্রশাসন রাত ১ টায় ৮টি ভ্যান এবং একটি জল কামান নিয়ে এসে আমাদের অস্থায়ী তাবু ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়৷ নিমেষে ভ্যানে তুলে শিয়ালদহ নামিয়ে দেয় হয় আমাদের।’’ আন্দোলনরত চাকরি প্রার্থীদের পুলিশ শিয়ালদহ স্টেশনে নামিয়ে দেওয়ার পর সকাল ৬টা পর্যন্ত সেখানেই অপেক্ষা করেন তাঁরা৷ এরপর শিয়ালদহ স্টেশনেই সাংবাদিক বৈঠক করা হয়৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দফায় দফায় আন্দোলনে চলবে। এদিন পুলিশের ভ্যানে না উঠলে হয়তো তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করা হত বলে অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের৷ পুলিশের দাবি, ১৪৪ ধারা জারি থাকার কারণে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
আপাতত আন্দোলনের এই পর্ব স্থগিত করলেও আগামী দিনের জন্য তাঁরা যে প্রস্তুতি নেবে, এদিন সে কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়৷ তাঁরা জানায়, মঞ্চ এই লড়াই জারি রাখবে৷ ১ ডিসেম্বর স্কুল সার্ভিস কমিশনের ইতিহাসে আপার প্রাইমারি আন্দোলন দিবস হিসেবে থেকে যাবে৷
আরও পড়ুন- ঠাণ্ডার মধ্যেই রাতভর অবস্থান বিক্ষোভ আপার প্রাইমারি চাকরি প্রার্থীদের
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘গতকাল রাতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের উপর পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি৷ আন্দোলনকারীদের চাকরি প্রার্থীদের দাবি অনুযায়ী তাঁদের দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানাই। কোনও অজুহাতেই দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা চলতে পারে না৷’’ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা বলেন, ‘‘চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক। ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে সমস্ত শূণ্যপদ পূরণ করা হোক৷’’ রাতের অন্ধকারে আপার প্রাইমারি চাকরি পার্থীদের যে ভাবে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হল, তা চরম নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষক প্রতিনিধি চন্দন গরাই৷
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘সরকার যখন দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করছে, সে সময় সমস্ত বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী নিয়োগের দাবিতে রাজপথে হাহাকার করছে। আন্দোলনের ন্যূনতম পরিষেবা টুকু না পেয়ে খোলা আকাশের তলায় ঠান্ডার মধ্যে গভীর রাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় অতর্কিত পুলিশি উচ্ছেদের ঘটনা তীব্র নিন্দনীয়। হবু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি এমন আচরণ কোনভাবেই মানা যায় না। বারবার কোর্টের দোহাই না দেখিয়ে সমস্ত জটিলতা নিরসন করে দ্রুত স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’’
গত সাত বছরে বহু প্রতিশ্রুতি মিললেও নিয়োগপত্র হাতে পাননি আপার প্রাইমারির চাকরি প্রার্থীরা৷ দ্রুত নিয়োগের দাবি তুলে মঙ্গলবার পথে নেমেছিলেন তাঁরা৷ সারা দিন আন্দোলনের পর ঠাণ্ডার মধ্যেই রাতভর রাজপথে অবস্থান বিক্ষোভ করেন৷ বুধবারও চলে সেই আন্দোলন৷ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের চাকরি প্রার্থীরা সাফ জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ চলবে৷ প্রয়োজন পড়লে তাঁর অনশনের পথে হাঁটতেও তৈরি৷ কিন্তু গতকাল মধ্যরাতে তাঁদের পুলিশ দিয়ে ‘খেদানো’ হল, যা চরম ‘লজ্জা’র বলে মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷