‘ভলেন্টিয়ার’ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি রাজ্যের, লাগবে না প্রশিক্ষণ, তুঙ্গে ‘ইন্টার্ন’ বিতর্ক

‘ভলেন্টিয়ার’ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি রাজ্যের, লাগবে না প্রশিক্ষণ, তুঙ্গে ‘ইন্টার্ন’ বিতর্ক

তমলুক: ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, শিক্ষক অপ্রতুলতা রুখতে সদ্য কলেজ উত্তীর্ণ স্নাতকদের ‘ইন্টার্ন শিক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর এবার কার্যত তা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে ‘ইন্টার্ন শিক্ষকে’র ভাবনা৷ এবার সরকারিভাবে ‘ভলেন্টিয়ার শিক্ষক’ নিয়োগ ও ক্লার্ক নিয়োগের জন্য জারি হয়েছে বিজ্ঞপ্তি৷

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, শিশু শ্রমিক উন্নয়ন সমিতির অধীনে চলা জেলার ৩০টি বিদ্যালয়ের জন্য ভলেন্টিয়ার শিক্ষক ও ভলেন্টিয়ার ক্লার্ক নিয়োগ করা হবে৷ নিয়োগ করবে জেলা প্রশাসন৷ এই মর্মে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তি৷ সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র স্নাতক যোগ্যতায় শিক্ষক নিয়োগ করা হবে৷ আপাতত নিয়োগ প্রার্থীদের এক বছরের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ভবিষ্যতে পদগুলির পুনর্নবীকরণ সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে৷ 

এই মুহূর্তে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএড বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু সেই সমস্ত বিধিকে পিছনে ফেলে গ্রাজুয়েশনে ৫০ শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রার্থীদের ভলেন্টিয়ার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে৷ মোট শূন্যপদ রয়েছে ১০টি৷ সংরক্ষিত চাকরিপ্রার্থীরা বয়সের ছাড় পাবেন৷ সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থীদের ওই এলাকার ব্লক ও পুরএলাকার বাসিন্দা হতে হবে বলে জানানো হয়েছে৷ চুক্তিভিত্তিতে ৭ হাজার টাকা প্রতি মাসে বেতন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ 

একইসঙ্গে ভলেন্টিয়ার ক্লার্ক নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশনে ৪৫ শতাংশ নম্বর থাকলেই চলবে৷ সঙ্গে এক বছরের কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের ডিগ্রি দেখাতে হবে৷ বয়স সীমা এখানে ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রাখা হয়েছে৷ চাকরিপ্রার্থীদের অবশ্যই পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা হতে হবে বলে জানানো হয়েছে৷ ভলেন্টিয়ার ক্লার্ক পদের জন্য ৩০টি শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে৷ চাকরিপ্রার্থীদের এক বছরের চুক্তিতে পাঁচ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে৷

অনলাইনে আবেদন করতে হবে৷ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটার মধ্যে আবেদন জমা করাতে হবে৷ আবেদনের ভিত্তিতে ভেরিফিকেশনে ডাকা হবে৷ এসএমএসের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের ডাকা হবে বলে জানানো হয়েছে৷ বাছাই করা চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা, কম্পিউটার টেস্ট, পার্সোনালিটি টেস্ট নেওয়া হবে৷ লিখিত পরীক্ষা হবে ৭০ নম্বরে৷ কম্পিউটার টেস্ট নেওয়া হবে ২০ নম্বরের ভিত্তিতে৷ ইন্টারভিউ হবে ১০ নম্বরের৷ সব মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ 

কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে জারি করা এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে তুমুল অসন্তোষ৷ NCTE-র নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিএড বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু সেই সমস্ত বিধি পালন না করে শুধুমাত্র গ্রাজুয়েশনের ৫০ শতাংশ নম্বরের শর্তে কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কেননা এই মুহূর্তে গোটা বাংলা জুড়ে কয়েক লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাকরি প্রার্থী রয়েছেন৷ অনিয়ম, মামলার গেরোয় এই মুহূর্তে থমকে শিক্ষক নিয়োগ৷ নতুন ভাবে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় সুযোগের অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্যের কয়েক লক্ষ চাকরিপ্রার্থী৷ আর এরই মধ্যে ভলেন্টিয়ার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েশনের শর্তে কীভাবে নিয়োগ করা হচ্ছে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষা মহলের একাংশ৷ প্রশিক্ষণ ছাড়া এভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হলে শিক্ষার মানের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷

শিক্ষক নিয়োগের এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো ইন্টার্ন শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপ৷ এর ফলে শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকবে৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *