কলকাতা: অনলাইন স্টাফ প্যাটার্ন প্রক্রিয়ায় ধোঁয়াশা কাটাতে গত ৩১ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷ এরপরেও শিক্ষকমহলে উঠছে নানান প্রশ্ন৷ শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দাবি, উদ্ভূত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে যে দাবিগুলো পেশ করা হয়েছিল তার কিছু অংশ পরিষ্কার করে জানানো হলেও কয়েকটি বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে সেই ক্লারিফিকেশনে৷ তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাতে নতুন কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়৷ সেবিষয়ে শিক্ষক মহলের যুক্তি সহ মতামত গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে সামগ্রিকভাবে একমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে৷
স্কুল শিক্ষা দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, নরমাল সেকশন টিচারদের হয় উচ্চ প্রাথমিক নাহলে মাধ্যমিক স্তরে দেওয়া যাবে৷ সেক্ষেত্রে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকশিক্ষিকাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব অপরিবর্তিত থাকবে৷ পুনর্নিমিত এই স্টাফ প্যাটার্নে পে-স্কেল ও অন্যান্য শর্তাবলীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না৷ উপযুক্ত যোগ্যতার নিরিখে যেকোনো শিক্ষক শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকা পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷
শিক্ষক মহলের বক্তব্য, স্কুল শিক্ষা দপ্তর বর্তমান সময় পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে স্কেলে রয়েছেন সে ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে ক্লারিফিকেশনে জানিয়েছে৷ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে যেকোনো ক্যাটাগরি থেকে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষিকার পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না৷ কিন্তু ট্রান্সফারের বিষয়ে কোনো উল্লেখ সেখানে নেই৷তাদের মনে হয়েছে, এবিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে মতামত অত্যন্ত জরুরি৷ বিষয়টি ভালো করে না জেনে, বুঝে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত তারা ঘোষণা করতে চাইছেন না৷ বিগত দিনে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আপার প্রাইমারি সেকশন শিক্ষাব্যবস্থায় ছিলনা৷ তখন নরমাল সেকশনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করা হতো৷ রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট এর পর আপার প্রাইমারি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ বর্তমানে তাই প্রাথমিক শিক্ষার পর বিদ্যালয় শিক্ষায় তিনটি বিভাজন এসে গিয়েছে৷ একটি হল আপার প্রাইমারি, দ্বিতীয়টি হল সেকেন্ডারি, তৃতীয়টি হল হায়ার সেকেন্ডারি৷ যদিও নিউ এডুকেশন পলিসি – ২০১৯ তে উচ্চমাধ্যমিক ব্যবস্থাকে বিলোপ করার প্রস্তাবও রয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবে ২০১৬ সালের আগে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে যাঁরা নিয়োজিত হয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই নরমাল সেকশনে নিয়োজিত হয়েছিলেন, বাকিরা হায়ার সেকেন্ডারি সেকশনে৷ তাঁদের মধ্যে কেউ পাশ, কেউ অনার্স, কেউ বা পিজি স্কেলে রয়েছেন৷ ক্যাটাগরি ভিন্ন থাকলেও বিভিন্ন শ্রেণীতে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে আজ পর্যন্ত কোন অসুবিধা হয়নি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে৷
বর্তমানে পে প্রটেকশন ঘোষণার পর এই নতুন বিভাজিত অবস্থায় যদি শিক্ষকশিক্ষিকারা কেউই আপার প্রাইমারিতে না যাওয়ার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাহলে হায়ার সেকেন্ডারিতে নিয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাদ দিয়ে বাকি সবাই সেকেন্ডারি সেকশনে থেকে যাবেন৷ আপার প্রাইমারিতে শিক্ষক পদ শূন্য থেকে যাবে কিন্তু সেকেন্ডারিতে বিপুল পরিমাণ শিক্ষক শিক্ষিকা উদ্বৃত্ত হয়ে যাবেন৷ তখন সরকার ওই উদ্বৃত্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র বদলি করতে পারে কিনা সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ বর্তমানে জুনিয়র স্কুলগুলিতে নিয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই রয়েছেন যাঁরা অনার্স/পিজি স্কেল পাচ্ছেন৷ তাঁরা তো সবাই আপার প্রাইমারি৷
এছাড়া ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে কিনা সেটাও ভালো করে জেনে নেওয়া দরকার বলেও মত পোষন করেছে শিক্ষকমহল৷ গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলি ভালো করে না জেনে স্টাফ প্যাটার্ন দাখিলের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা এ বিষয়ে যে প্রশ্নগুলি আমাদের কাছে আসছে তার উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়৷ তাই আমাদের আরও একটু সময় নিয়ে এ বিষয়ে গভীরভাবে ভেবে বা খোঁজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন৷
এবিষয়ে যাঁরা প্রকৃত অভিজ্ঞ এবং সমস্ত বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যুক্তি সহকারে রাখতে পারেন তাঁদের কাছ থেকে সাজেশান নিতে চাইছেন তারা৷ শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের তরফে শিক্ষক মহলের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে, এবিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যারা তাঁরা যেন যুক্তি সহকারে তাদের মতামত ব্যক্ত করে৷