কলকাতা: উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের মেধা তালিকায় অনিয়ম৷ মেধা তালিকা প্রকাশ হতেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের দপ্তরে জমছে পাহাড়-প্রমাণ অভিযোগ৷ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগে জেরে প্রশ্নের মুখে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা৷ আর এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে উচ্চ প্রাথমিকে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী৷
দু’পাতার একটি চিঠি লিখে সুজনবাবু উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন৷ নিয়োগের অনিয়মের প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন চিঠি৷ মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো সুজনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো সম্প্রতি এই রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সফল পরীক্ষার্থীরা সোচ্চার হচ্ছেন৷ তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন৷ গত কয়েক বছর ধরে টেট, স্কুল সার্ভিস কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি এবং নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ যেভাবে বেড়ে চলেছে তা রাজ্যের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করছে৷ একাধিকবার এই সংক্রান্ত বিষয়ে আপনাকে জানিয়েছি৷ কিন্তু বাস্তব কার্যকরী কোন পদক্ষেপ করা হচ্ছে না৷ ফলে, উদ্বেগ নিয়ে তাই আপনাকে আবারও জানাচ্ছি৷’’
‘‘২০১২ থেকে ২০১৫ সালে টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের জন্য যোগ্যতা অর্জন করার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়৷ সবাই অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ আবেদন জানান৷ কিন্তু তথ্য যাচাই ও ইন্টারভিউ শুরু করতেই তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল৷ এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হল কেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ওঠে৷ তথ্য যাচাই ও ইন্টারভিউয়ের পর সফল প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হল৷ সেটাও আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে৷ কিন্তু কেন প্রকাশিত তালিকার ছত্রে ছত্রে ভুল রয়েছে৷ ইতিমধ্যেই অন্তত ৫ হাজার অভিযোগ কমিশনের দপ্তরে জমা পড়েছে৷ কেন এত বিভ্রান্তি? আমি যতটুকু জানি বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ খুবই স্পষ্ট৷’’
‘‘অনলাইনে আবেদনের তারিখ শেষ হওয়ার পরেও ঘুরপথে দরখাস্ত জমা নেওয়া হয়েছে৷ সংরক্ষণ তালিকায় গরমিল যথেষ্ট৷ এমনকী পার্শ্ব শিক্ষক এবং এসএসকে, এমএসকে শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও৷ টেট পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর হিসাবের ক্ষেত্রে ইচ্ছামত বাড়ানো বা কমানো হয়েছে৷ একাডেমিক নম্বর যাদের বেশি, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ইন্টারভিউয়ের নম্বর কমানো হয়েছে৷ কম থাকলে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ইন্টারভিউ বোর্ডের গঠন ও ইন্টারভিউয়ে পরীক্ষার্থী নম্বর দেওয়ার অস্বচ্ছতার বহু উদাহরণ ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ যোগ্যতার পরিবর্তে অন্য কোনও অসত্য এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কি ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে?’’
‘‘একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, উপরের অভিযোগগুলি সবই সত্য৷ চাকরিপ্রার্থী শিক্ষিত যোগ্য যুবক-যুবতীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের বঞ্চনা চলতে দেওয়া যায় না৷ বাস্তবে এটা তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল৷ বস্তুত, রাজ্যের শিক্ষিত এবং যোগ্য যুবক-যুবতীদের সরকারের নিয়োগের ব্যবস্থা উপর ভরসা ক্রমশ কমছে৷ মেধা ও যোগ্যতার সঙ্গে আপোষ করছে৷ কোনভাবে এবং কোন স্তরেই শিক্ষিত, যোগ্য প্রার্থীদের যাতে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির শিকার হতে না হয়, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের৷’’
‘‘যত দ্রুত সম্ভব অনধিক তিন মাসের মধ্যে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে৷ ইতিমধ্যেই সৃষ্ট শূন্যপদ-সহ শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷ মেধা তালিকার বিষয়ে যে অভিযোগ জমা হয়েছে, তা যাচাই করে মেধাতালিকা ত্রুটিমুক্ত করতে হবে৷ যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে৷ কোনও বিভ্রান্তি থাকলে তা খতিয়ে দেখা এবং যাচাই করার সুযোগ প্রার্থীদের দিতে হবে৷ স্বচ্ছতার সঙ্গে বছরভিত্তিক টেট পরীক্ষা নিতে হবে৷ শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে৷ নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছতা সম্পর্কে বিশেষ করে চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা যেভাবে যেভাবে কমে যাচ্ছে, তা দূর করার জন্য এই ব্যবস্থা ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে৷ আশা করি বুঝবেন এবং যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন৷ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবিলম্বে স্বচ্ছভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করুন৷ এটাই আবেদন৷’’