কলকাতা: দীর্ঘ মামলার জট মাথায় নিয়ে চলছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্ব৷ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় ২৪ হাজার ৫৬৪ চাকরিপ্রার্থীকে ডেকেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর্যন্ত চলবে ইন্টারভিউ পর্ব৷ কিন্তু, এই ইন্টারভিউ পর্ব ঘিরে অভিসন্ধির অভিযোগ তুললেন ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়৷ সংবাদমাধ্যমে তিনি চাঞ্চল্যকর মন্তব্যও করেছেন৷
অভিযোগ, উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর লেখা হচ্ছে পেনসিলে৷ আর সেই নম্বর তালিকায় পেন দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের সই করতে বলা হচ্ছে৷ বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া অভিযোগ পেয়ে এই ব্যবস্থা বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়৷ সংবাদমাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিবাদের কথাও জানিয়েছেন৷ গোটা ঘটনার পিছনে অভিসন্ধির অভিযোগ তুললেন তিনি৷ এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এখনও কেউ কোনও অভিযোগ করেনি৷ তবে, তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন৷
কিন্তু, ইন্টারভিউয়ে কেন চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর লেখা হচ্ছে পেনসিলে? চাকরিপ্রার্থীর নম্বরের তালিকায় কেন পেন দিয়ে সই করতে বলা হচ্ছে? পরে কোনও সমস্যা হলে ওই নম্বরগুলি যাতে খুব সহজে মুছে ফেলা যায়? প্রশ্ন তুলছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ প্যানেল নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলে দিলেন এক কলেজ পড়ুয়ারা৷ কমিশনকে চিঠি লিখে অধ্যক্ষের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই তোলা হয়েছে প্রশ্ন৷
দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের পড়ুয়ারা এসএসসির চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, তাঁদের অধ্যক্ষার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই! ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলেও দাবি করা হয়৷ বিতর্কিত অধ্যক্ষকে ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান করার আগে খোঁজখবর নেওয়া প্রযোজন ছিল বলেও কমিশনকে দেওয়া হয়েছে পরামর্শ৷ সূত্রের খবর, ওই চিঠি শুধুমাত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পাঠানো হয়েছে, তা নয়৷ রাজ্যপাল থেকে শুরু করে ডিপিআই ও রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকের চিঠির কপি পাঠানো হয়েছে৷ তবে কলেজ পড়ুয়াদের চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে এসএসসি চেয়ারম্যানের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
আজ উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় নজিরবিহীন যুক্তি তুলে ধরল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ আর কমিশনের যুক্তিও কার্যত মান্যতা দিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ আর তার জেরে নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চা৷ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মেধা তালিকা প্রকাশের কথা ছিল কমিশনের৷ কিন্তু, আজ মামলার শুনানিতে মেধা তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে নয়া যুক্তি কমিশনের৷
আজ কমিশনের তরফে আদালতকে যুক্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করবে না কমিশন৷ ইন্টারভিউয়ের আগে প্রার্থীদের তালিকা নম্বর দিয়ে প্রকাশ করা হলে পরীক্ষক ব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে৷ তাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে৷ ফলে, ইন্টারভিউয় প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার পর্যন্ত তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়৷ কমিশনের এহেন যুক্তির প্রাথমিক মান্যতাও দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷
এসএসসিকে স্বচ্ছতা প্রমাণে শেষ সুযোগ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ ১০ জুলাই বিকেল ৫টার মধ্যে উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টার্ভিউয়ে ডাক পাওয়া ২৪ হাজার ৫৬৪ জনের নম্বর সহ নামের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ আজ ছিল এই মামলার শুনানি৷ কিন্তু, মামলার শুনানিতে কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তা কোনও ভাবেই এখন ওই মেধা তালিকা প্রকাশ করতে পারবে না৷
অন্যদিকে, আপারের ইন্টারভিউ পর্ব ঘিরে এবার অব্যবস্থার অভিযোগ স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ, দিন কয়েক ধরে বৃষ্টি চললেও চাকরিপ্রার্থীদেক মাথার উপর একটি ছাউনির ব্যবস্থা টুকু করা হয়নি৷ বৃষ্টি হোক কিংবা রোদ, রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের৷ তবে, অচার্য সদনের মধ্যে ছোট ছাউনি খাটিয়ে ২০-২৫টি বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হলেও দপ্তরের বাইরে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের৷ খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় উপর বসে বসেই ইন্টারভিউ পর্বের অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁদেক৷
সল্টলেক করুণাময়ীর আনন্দলোক হসপাতালের পাশে আচার্য্য সদনের অষ্টম তল পর্যন্ত উঠতে হচ্ছে সিঁড়ি ভেঙে৷ চাকরিপ্রার্থীদের লিফট ব্যবহারের কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ অসুস্থতার প্রমাণপত্র দেখালে তবেই মিলছে লিফট ব্যবহারের অনুমতি৷ হবু শিক্ষকদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণের তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার৷ এই নিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন৷