কলকাতা: ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি জানাল রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি৷ একই সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ‘সার্ভেন্ট’ বলে উল্লেখ করায় তুঙ্গে বিতর্ক৷ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের এখনও পর্যন্ত সাতটি বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে৷ সাতটি বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্র সরকার৷ এই রাজ্যে বিগত সময়ে পাঁচটি বেতন কমিশন হওয়ার পর সমস্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ এমনকী, দেশের সব রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা বেতন কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে এনেছে৷ এবার ব্যতিক্রম ঘটল বাংলায়৷ প্রকাশ্যে আনা হয়নি বেতন কমিশনের রিপোর্ট৷ আর এরই প্রতিবাদে ফের অসন্তোষ সরকারি কর্মচারী মহলে৷
বেতন কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা হলে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার সুযোগ থাকে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রকাশিত হলে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারবেন কর্মচারীরা৷ বেতন কমিশন গঠন হওয়ার পর কর্মচারী সংগঠন কমিশনের কাছ থেকে তাঁদের বক্তব্য পেশ করার জন্য আর্জি জানায়৷ সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে কমিশন কর্মচারী সংগঠনগুলিকে শুনানিতে ডাকে বক্তব্য শোনার জন্য৷ ব্যক্তিগতভাবে কর্মচারীরা বেতন কমিশনের শুনানিতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করেন৷ সবমিলিয়ে কমিশন কী সুপারিশ করল, আর সেই সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার কত তা গ্রহণ করল, তা জানার সুযোগ থাকে৷ কিন্তু এবার নজিরবিহীনভাবে বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশে আনা হয়নি৷ এই নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সরকারি কর্মচারীদের৷
ব্রিটিশ সার্ভিস কন্ডাক্ট রুলে সরকারি কর্মচারীদের ‘সার্ভেন্ট’ বলে উল্লেখ করা হত৷ সরকারি কর্মচারীদের চিঠিতেও সম্বোধন করা হত ‘সার্ভেন্ট’ হিসাবে৷ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ১৯৮০ সালে সেই থেকে শব্দটি বাদ দিয়ে ‘গভমেন্ট এমপ্লয়িজ’ যোগ করা হয়৷ কিন্তু এখন থেকে ফের ‘সার্ভেন্ট’ শব্দটি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ কর্মীদের৷ রোপা বিধির ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে ব্যবহার করা হয়েছে সার্ভেন্ট শব্দটি৷ ‘সার্ভেন্ট’ শব্দটি ব্যবহার করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন৷ এমনকী, কর্মচারীদের জন্য পে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তারা৷
সংগঠনের দাবি, বকেয়া ৪১ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা না মিটিয়ে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের কার্যকর করার আদেশ নামা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার৷ গত জুলাই মাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আরও এক কিস্তি মহার্ঘ ভাতা হয়েছে৷ এটাকে যুক্ত করলে কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ৫০ শতাংশের বেশি৷ বিগত চার বছরে বকেয়া অর্থ না দিয়ে কর্মচারীদের আর্থিকভাবে বঞ্চিত করার অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ সপ্তম বেতন কমিশন প্রয়োজনভিত্তিক ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করে ১৮ হাজার টাকা৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতন হওয়া উচিত৷ অথচ রাজ্যে নতুন বেতন করা হয়েছে ১৭ হাজার টাকা৷
অভিযোগ, বাড়িভাড়া বাবদ ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে৷ তার ফলস্বরূপ এতদিন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যে সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন, তার ওপর আঘাত আনা হয়েছে বলেও দাবি তুলেছেন সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন৷ ২.৫৭ মেট্রিস অনুযায়ী বেতন নির্ধারিত করা হয়েছে৷ অথচ বিভিন্ন ভাতার হার সেই ম্যাট্রিক্স অনুযায়ী নির্ধারণ না করে খুশিমতো বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশনের বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য নেই বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা৷