মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ স্মরণ করাতে নবান্নে গণচিঠি শিক্ষকদের

কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ মনে করিয়ে দেওয়া জন্য নবান্নে গণচিঠি পাঠানোর ডাক দিলেন রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশ৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ৷ ওই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ১০ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ পূরণের দাবি জানিয়ে নবান্ন গণচিঠি পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে খবর৷ নবান্নে পাঠানো

মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ স্মরণ করাতে নবান্নে গণচিঠি শিক্ষকদের

কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ মনে করিয়ে দেওয়া জন্য নবান্নে গণচিঠি পাঠানোর ডাক দিলেন রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশ৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ৷ ওই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ১০ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ পূরণের দাবি জানিয়ে নবান্ন গণচিঠি পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে খবর৷ নবান্নে পাঠানো চিঠিতে ঠিক কী দাবি তোলা হয়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের তরফে?

পার্শ্বশিক্ষকদের অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া শিক্ষক মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগীরথ ঘোষ, প্রবীর দাস, বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়, মাসুদ হাসান জানিয়েছেন, ‘‘আজ ৬ ফেব্রুয়ারি৷ আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের এই দিনেই তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসলে তিনি পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ীকরণ করবেন৷ আজ সেই ‘প্রতিশ্রুতি’র ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে ‘পত্র ভরো’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সমস্ত পার্শ্বশিক্ষক-শিক্ষিকাকে জানানো হচ্ছে, আপনারা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়ে পার্শ্বশিক্ষকদের দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি স্মরণ করান৷’’

কী রয়েছে ওই চিঠিতে? ২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, রানি রাসমণি রোডে অনুষ্ঠিত পার্শ্ব শিক্ষকদের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও শিক্ষকদের দৈনিক জীবনের লড়াইয়ের বর্ননা দেওয়া হয়েছে৷ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঠিক কী বক্তব্য তুলে ধরতে চাইছেন তাঁরা? সংগঠনের তরফে প্রকাশিত গোটা বয়ানটি তুলে ধরা হল৷

‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,
পশ্চিমবঙ্গ সরকার

বিষয়: পার্শ্বশিক্ষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবী।

মহাশয়া,

আমি পশ্চিমবঙ্গের একজন পার্শ্বশিক্ষক। গত ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর দ্বারা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সর্বশিক্ষা প্রকল্পের অধীনে সরকারী এবং সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলিতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ঠিক রাখার জন্য ও স্কুলছুট শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার জন্য পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই ২০০৯ সালে ৬ই ফেব্রুয়ারী রাণি রাসমণি রোডে পার্শ্বশিক্ষকদের সভায় বিরোধী নেত্রী হিসাবে আপনি বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী করে দেবেন। ২০১১ সালে (ক্ষমতায় আসার পর) ৩রা জুন বলেছিলেন ৩ বছরের মধ্যে পার্শ্বশিক্ষকদের চাকরিতে স্থায়ী পদে নিযুক্তিকরণ করবেন। আজ ৮ বছর হয়ে গেল আজও সেই প্রতিশ্রুতি রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর কর্তৃক কার্যকর হয়নি। ২০১৫ সাল থেকে পার্শ্বশিক্ষকদের কর্মদিবস ৫ দিন এবং অতিরিক্ত ১ দিন ‘স্কুলছুট’ সংক্রান্ত কাজ অর্থাৎ সপ্তাহে ৬ দিন এবং ২০টা ক্লাস পার্শ্বশিক্ষকদের করতে হয়। অর্থাৎ স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী শিক্ষকের সমান কাজ করতে হয়। প্রসঙ্গত ২৬শে অক্টোবর ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মাননীয় জে. এস. কেহর এবং এস. এ. বোবদের বেঞ্চও (equal pay for equal work.) সমান কাজে সমান বেতনের পক্ষে রায় দেন। তাহলে কেন পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্বশিক্ষকেরা সমান বেতন পাবেন না? NCTE নিয়মানুসারে ২০১৫-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে পার্শ্বশিক্ষকেরা শিক্ষক প্রশিক্ষণ অর্থাৎ D.El.Ed. ও সম্পূর্ণ করেছেন। তবে কেন পার্শ্বশিক্ষকেরা আজও স্থায়ী শিক্ষকের মর্যাদা পাচ্ছেন না? শ্রম আইন অনুযায়ী ২৪০ দিনের বেশি কোনও কর্মীকে চুক্তিবদ্ধ রাখা যায় না। অথচ ২০১০ সালে পার্শ্বশিক্ষকদের ৬০ বছর চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে এবং ১৪ বছর ধরে বেতনের পরিবর্তে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এটা কি ন্যায় বিচারের পরিপন্থী নয় ? ১১ থেকে ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাবার পরেও বর্তমানে আপনার রাজ্যে প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক স্তরে পার্শ্বশিক্ষকদের ভাতা যথাক্রমে ১০ ও ১৩ হাজার টাকা; কোনো বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ও ডি.এ. নেই। অথচ ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে এই প্রকল্পের শিক্ষকদের বেতন পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্বশিক্ষকদের থেকে কয়েক গুণ বেশি। দিল্লি সরকার তো রাজ্য কর্মচারীদের ন্যুনতম বেতন বেঁধে দিয়েছে। সেখানে আপনার রাজ্যে কেন এই বেতন বৈষম্য? শিক্ষক মাত্রই জাতির মেরুদন্ড, পার্শ্বশিক্ষকরাও শিক্ষক। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে পার্শ্বশিক্ষকদের কি সেই সম্মান দেওয়া হয়? না। অথচ পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্বশিক্ষকদের আজ স্কুল এবং প্রশাসনিক সর্বক্ষেত্রেই ক্ষমতাহীন দায়িত্ব পালন করতে হয়। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য আজ পার্শ্বশিক্ষকদের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে। এরমধ্যেই শতাধিক পার্শ্বশিক্ষকদের প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। তা সত্ত্বেও ২০০৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারির আপনার দেখানো পরিবর্তনের ‘স্বপ্ন’ আজ দশ বছর পূর্তির অবসরে শত আক্ষেপেও ‘সত্য’ হওয়ার আশা রাখে। অতএব আপনার এই ‘প্রতিশ্রুতি’কে কার্যকর করে পশ্চিমবঙ্গের ৪৮ হাজার পার্শ্বশিক্ষকের জীবন ও মান উন্নয়নে পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দানের আবেদন জানাচ্ছি।

ধন্যবাদান্তে
পার্শ্বশিক্ষক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

চিঠি পাঠাবার ঠিকানা:Nabanna, Naora, Shibpur, Howrah, West Bengal 711102

চিঠির লিঙ্ক:https://drive.google.com/…/1mYzdmRdsVnkfNrTLt1zBEYsV_…/view…’’

দীর্ঘ ১০ বছরের বঞ্চনার প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই আজ থেকে পাঁচ দিনব ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দিবসে’র ডাক দেওয়া হয়েছে৷ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে’র অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে’র অভিযোগ তুললেন পার্শ্ব শিক্ষকরা? এবিষয়ে পার্শ্ব শিক্ষকদের অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ‘‘আপনারা সকলেই জানেন, ২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, রানি রাসমণি রোডে অনুষ্ঠিত পার্শ্ব শিক্ষকদের এক সভায় তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী তথা বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে পার্শ্ব শিক্ষকদের স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হবে৷ তিনি আরও বলেছিলেন, পার্শ্ব শিক্ষকদের দাবি ও আন্দোলন যুক্তিসঙ্গত৷ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ যার ১০ বছর পূর্তি হচ্ছে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়নি৷ ২০০৯ সালের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার প্রতিবাদে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের আহ্বানে আজ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দিবস পালন করব৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =