কলকাতা: দেশজুড়ে যখন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, কেন্দ্র ও রাজ্যের আক্রান্তের পরিসংখ্যান দিনে দিনে রেকর্ড যখন রেকর্ড গড়ছে, ঠিক তখনই শর্তসাপেক্ষে শিথিল হয়েছে লকডাউন৷ এসেছে আনলক তত্ত্ব৷ করোনা অবহেলা সরকারি কর্মকাণ্ড সচল করতে ইতিমধ্যেই অফিস খুলে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আগামী ৮ জুন থেকে শর্তসাপেক্ষে সরকারি অফিস খুলে যাচ্ছে৷ কিন্তু, লকডাউন শিথিল হলেও এখনও সচল হয়নি গণপরিবহন ব্যবস্থা৷ আর এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কীভাবে অফিসে পৌঁছাবেন কর্মচারীরা, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না কর্মচারীদের একাংশ৷
নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী ৮ জুন থেকে ৭০% কর্মী নিয়ে সরকারি অফিস খুলে যাচ্ছে৷ লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষা বিধি মেনে অফিস খোলার বিষয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও কিছু বাধ্যবাধকতা আনতে চলেছে নবান্ন৷ সূত্রে খবর, সপ্তাহে পাঁচ দিনের মধ্যে অন্তত ৩ দিন সরকারি কর্মচারীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক হতে পারে৷ ৭০% কর্মী দিয়ে কর্মচারী দিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজকর্ম শুরু করার প্রচেষ্টা শুরু হলেও গণপরিবহন ব্যবস্থা এখনও সচল না হয় চরম সমস্যায় পড়েছেন করতে চলেছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ৷
সরকারি দপ্তরে অধিকাংশ কর্মচারী শহর ও শহরতলির বাসিন্দা৷ অফিস করতে গিয়ে কমপক্ষে ঘণ্টাখানিক সফর করেন কর্মচারীদের একাংশ৷ এই সফরের মূল ভিত্তি ট্রেন ও বাস পরিষেবা৷ কিন্তু, আনলক ওয়ান পড়বে এখনও লোকাল ট্রেন চালু করার ছাড়পত্র দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ সুযোগ বুঝে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রবল দাবি তুলেছে বাস মালিক সংগঠনগুলি৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি বাস চালানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু তাতেও কুলাচ্ছে না৷ আজ মঙ্গলবারও বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে গিয়ে চমর সমস্যায় পড়েন যাত্রীদের একাংশ৷ বাস ধরতে প্রায় ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলেো যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ৷ কিন্তু ৮ জুন সরকারি অফিস-আদালত খুলে গেলে পথে আরও বাড়বে৷ ফলে ততক্ষণে বেসরকারি বাস যদি না চলে তাহলে কীভাবে সরকারি কর্মচারীরা অফিসে পৌঁছবেন কীভাবে? এই নিয়ে বেশ ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন কর্মচারীদের একাংশ৷ রাজ্য সরকারি অফিস খোলা প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে সরকারি কর্মচারী মহলে৷
কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদ মলয় মুখোপাধ্যায় নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘‘আগামী ৮ জুন থেকে সরকারি দফতরগুলিতে ৭০% কর্মী নিয়ে চালু করার নির্দেশ প্রকাশ পেয়েছে৷ করোনা ভাইরাস এক মারাত্মক রোগ৷ তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই৷ আবার এটাও আমরা বুঝি যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুর-পরিষেবা-সহ পুলিশ বিভাগের প্রায় সব ধরনের কর্মীরা করোনা প্রেক্ষিত নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে সদাব্যস্ত৷ সেখানে সাধারণ কর্মচারীরা ঘরে বসে থাকবে তা আমাদের কাছে বিবেকের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ তাই সরকারের কাছে আমাদের সংগঠন থেকে কী করা যেতে পারে তার কয়েকটা প্রশ্ন রাখলাম৷ লোকাল ট্রেন না চললে ৭০% কর্মী নিয়ে কীভাবে ৮ জুন থেকে অফিস চলবে? কনটেইনমেন্ট জোনে যে সমস্ত অফিস, সেখানে আপাতত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কর্মীদের অফিস গাড়িতে এনে দরকারি কাজগুলি সেরে নেওয়া যেতে পারে৷ লোকাল ট্রেন স্বাভাবিক হলে দু’ক্ষেত্রে অনেকটাই পরিস্থিতির হার বাড়ানো যেত৷ বর্তমানে কনটেইনমেন্ট জোনের বাইরে যে সমস্ত অফিসগুলি রয়েছে তার ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে যেসকল কর্মচারীদের বাসস্থান এবং অফিসের কাছাকাছি অনেক সরকারি আবাসন থাকেন, সেই সমস্ত কর্মচারীদের সাইকেল, বাইক, অটো, সর্তকতা অবলম্বন করে বাসে করে একদিন অন্তর একদিন ডেকে দফতরগুলিতে আসার কথা বলা যেতে পারত৷’’