কলকাতা: হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ জানিয়েছিলেন, স্কুলে না গিয়ে আন্দোলন করলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা৷ জারি করা হবে সার্কুলার৷ এবার, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শো-কজের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে জারি চূড়ান্ত বিভ্রান্তি৷ স্কুলে গরহাজির থাকা শিক্ষকদের শো-কজের নোটিস সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷ জেলা প্রাথমিক সংসদের বা ডিপিএসসি’র বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া আলিপুরদুয়ার জেলা প্রাথমিক সংসদের বা ডিপিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত শিক্ষক বিগত কয়েক দিন যাবত স্কুলে আসেননি, তাঁদের কারণ কারণ দর্শাতে হবে৷ শো-কজের জবাব দিতে হবে আগাম ছুটি না নিয়ে স্কুলে গরহাজ থাকা শিক্ষরকদের৷ প্রয়োজনে তাঁদের হাজিরা খাতাও তলব করা হতে পারে৷ স্কুলে গরহাজির থাকা শিক্ষকদের জবাবে সন্তুষ্ট না হলে নেওয়া হতে পারে কড়া ব্যবস্থা৷
যদিও এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পদ্ধতি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পার্থবাবু৷ বুধবার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘কে দিয়েছে? কমিশনের নাম দিলেই কি হয়ে গেল? এটাও তো ভুল হতে পারে৷ এই নিয়ে আমি কোনও রিমার্ক করতে পারি৷ সই নেই, কিছু নেই৷ এটা দেখিয়ে আমি বলে দেব? আর আমরা এই ভাবে দিই না৷ আমরা আমাদের অফিশিয়াল ডকুমেন্টেশন করে দিই৷ আর মেলে যদি পাঠানো হয়ে থাকে, তাহলে নাম দিয়ে পাঠাতে হবে৷ ডিপিএসসি তো দিতে পারে না৷ ডিপিএসসিকে কেউ অনুমোদন দিয়েছে? আর আমি না দেখে এই নিয়ে কিছু বলতে পারব না৷’’
জেলা প্রাথমিক সংসদের তরফে এহেন বিজ্ঞপ্তি দেখে শিক্ষকমহলে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন৷ জানিয়েছেন তীব্র প্রতিবাদ৷
যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনক্রোম চালু ও ১৪ জন শিক্ষকের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারে দাবিতে টানা ৫ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ এখনও পর্যন্ত ১৯ জন শিক্ষক এই অনশনে অংশ নিয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ কিন্তু, এই পরিস্থিতির পরও আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ আলোচনার টেবিলে না বসে রাস্তায় বসে থেকে কোনও কাজ হবে বলে সাফ ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর৷ একই সঙ্গে স্কুলে না গিয়ে আন্দোলন করার জন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷ এই মর্মে সার্কুলার জারি করা হবে বলেও ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী৷
মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রাইমারি টিচারদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ আমি আপনাদের খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যাঁরা বসে আছে তাঁরা অকারণে বসে আছে৷ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যাতে আপনারা কতটা খবর করবেন তার উপর তাঁদের সাংগঠনিক জোর বাড়বে৷ এটা একেবারেই ভুল৷ সরকারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা লিখেছিলাম যে এদের একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেয়া হোক৷ এটা ওঁরাও চিঠিতেও প্রথমদিকে জানিয়েছিল৷ এখন নানা রকম দাবি তুলছেন এবং অনশন করছে৷ এখানে বসে আছেন৷ যে যা পারছে সে তাই করছে৷ চারটে লোক নিয়ে ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করবে৷ একটা অদ্ভুত প্রবণতা দেখা গিয়েছে৷ তারা আলোচনা রাস্তায় না গিয়ে রাস্তায় গিয়ে বসে পড়েছেন৷ রাস্তাতেই তারা বসে ভাবছেন এতে সরকার বোধহয় দুর্বল হয়ে পড়বে, আমাদের কথা শুনবে৷ যেটা বাস্তব সেটাই আগেও বলেছি, আমি আমরা অবশ্যই তাদেরটা ভেবে দেখব৷ শীঘ্রই আমরা প্রাইমারি টিচারদের মিটিং ডাকছি৷ সেখানে সরকারের তরফে যা বলার তা বলা হবে৷ এছাড়াও কয়েকটি সমস্যা আছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে সবুজ সংকেত নিয়ে আমরা শীঘ্রই নজরুল মঞ্চে আলোচনায় বসবো৷ যেহেতু ২১ তারিখ ধর্মতলা সভা আছে, তার আগে হয়তো সম্ভব হবে না৷ আর যদি তা না হয়, এই মাসেই আমরা তিনটি বিষয়ে সমাধানের পথে যাব৷ এছাড়াও প্রাইমারি প্রাইমারি টিচারদের গ্রেড পে নিয়ে যে একটা নিজেদের মধ্যে একটা অসন্তোষ আছে, সেটা সমাধান করব৷’’
বলেন,‘‘উস্তিদের সঙ্গে বহুবার বসেছি৷ যখন বিধানসভার চলছিল, তখন তাঁদের সঙ্গে বসেছি৷ ওদের মনে হচ্ছে যে, একটু দিচ্ছি আরও একটু যদি সরকারকে টাইট দেওয়া যায়৷ কিন্তু কোনও দিন যা বলিনি তাই আজ বলছি৷ স্কুল কামায় করে যারা আন্দোলনে বসছেন, তাঁদের কিন্তু এই অপশনের জন্য যদি কোনো ছুটি না থাকে, তাহলে কোন ছুটি এডজাস্ট হবে না৷ যারা ছাত্রদেরকে না পড়িয়ে দিনের পর দিন নানা ধরনের আন্দোলন করছেন, স্কুল কামাই করেছেন, তাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি, ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে কাজে ফিরুন৷’’