কল্যাণী: রাতে আলো বন্ধ করে অনশনরত শিক্ষকদের পিটিয়েছিল পুলিশ৷ এবার দিনের আলোয় থানা ঘেরাও আক্রান্ত শিক্ষকদের৷ কল্যাণী স্টেশন থেকে থানা পর্যন্ত বিশাল মিছিল করেন পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের সদস্যরা৷ শনিবার রাতে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে থানার সামনে বিশাল জমায়েত করে ধর্নায় বসে পড়েন কয়েক হাজার শিক্ষক৷ ওঠে, পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি৷ পুলিশের বিরুদ্ধে জানানো হয় ধিক্কার৷ শিক্ষক বিদ্রোহের আওয়াজ উঠতেই কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ৷ শনিবার রাতে শিক্ষক পেটানো পুলিশ কর্মীদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে৷
শনিবার রাতে পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেন পার্শ্বশিক্ষকরা৷ অনশন মঞ্চে পুলিশি তাণ্ডবের অভিযোগে তোলপাড় হয়ে ওঠে নদীয়া কল্যাণী৷ পার্শ্বশিক্ষকদের অভিযোগ, শনিবার সন্ধ্যায় অনশনমঞ্চের আলো নিভিয়ে শিক্ষিকাদের পোশাক ছিঁড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ৷ করা হয়েছে শ্লীলতাহানি৷ ছেঁড়া হয়েছে ব্লাউজ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগে সোমবার কর্মবিরতির ডাক পার্শ্বশিক্ষকদের৷ গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে নানা মহলে৷ সরব শিক্ষা মহল থেকে রাজনৈতিক মহল৷
পার্শ্বশিক্ষকদের উপর তাণ্ডবের প্রতিবাদে এই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদে সামিল হোন৷ গতকাল কল্যাণীতে যেভাবে পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশি বর্বরোচিত আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তাকে ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। যে কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা৷ এই নক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিত সর্বত্র। সকল শিক্ষক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের উদ্যোগে একক ভাবে বা যৌথভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করুন। যেখানেই যাঁরা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করবেন সেখানে দলমত নির্বিশেষে যোগ দিন। আমরা চাই এই নক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ হোক সর্বত্র।’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে পার্শ্বশিক্ষকদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এভাবে পুলিশি বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানাই। পার্শ্বশিক্ষকদের সম্মানজনক ভাতা ও মর্যাদার ব্যাপারে পূর্বতন সরকারের মত বর্তমান সরকারও চরম বঞ্চিত করছে। দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি পার্শ্ব শিক্ষককে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদে সামিল হওয়া উচিত৷’’
পার্শ্বশিক্ষকদের উপর পুলিশি তাণ্ডবের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷ রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা মন্তব্য, ‘‘পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণ সভ্যতার কলঙ্ক৷ ভাবতে লজ্জা করছে, এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী একজন মহিলা৷ ঐ নির্লজ্জ মন্ত্রীকে লজ্জিত বোধ করাতে সমস্ত শিক্ষক সমাজ রাস্তায় নামুন৷ সরকারের তোষামোদী করে নিজেদের সম্মান টিকিয়ে রাখতে পারবেন না৷’’
সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ন্যায্য দাবির আন্দোলনে নিশংস আক্রমণ চলেছে। নার্সদের পর এবার পার্শ্বশিক্ষক৷ সল্টলেকে জলকামান, ধর্মতলায় পুলিশের লাঠিচার্জ৷ এবার কল্যাণীতে রাতের আলো নিভিয়ে পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণ৷ অসহ্য নারী নির্যাতন৷ মন্ত্রীরা সব লাটসাহেব নাকি যে বিক্ষোভ করা যাবে না? মমতার সরকার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷ নিন্দার কোন ভাষা নেই৷’’
অভিযোগ, কোনও মহিলা পুলিশ কর্মী না আনিয়ে শিক্ষিকাদের উপর তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ৷ নির্বিচারে করা হয়েছে লাঠিচার্জ৷ পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে কল্যাণী স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ করে রেখেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ক্লাস বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের দাবি, আগাম কোনও অনুমতি না নিয়ে অনশন বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকরা৷ অনুমতি না নিয়ে জমায়েত করার অভিযোগে তাঁদের এলাকা ফাঁকা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এই নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষকদের মধ্যে খণ্ডযুব্ধ বাঁধে৷ অভিযোগ, নির্বিচারে লাঠি পোটা করা হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর৷
ছিল দীর্ঘ বঞ্চনার দাবিতে পথে নামার ডাক। নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে পথে নেমেছিলেন প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষক। জাতীয় পতাকা বুকে আগলে রাজপথেই গেয়ে ওঠেন ‘উই শ্যাল ওভার কাম।’ জাতীয় সংগীত গেয়ে শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, তাঁরা চান তাঁদের পূর্ণ অধিকার৷ বিকাশ ভবন অভিযানে বাঁধা পাওয়ার দুর্যোগ মাথায় নিয়ে খোল আকাশের নীচে রাত কাটানোর পর এবার শনিবার সকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসলেন পাশ্বশিক্ষকদের৷ কল্যাণি স্টেশন চত্বরে অদূরে বাসস্ট্যান্ডে অনশনে বসেন কয়েকশো শিক্ষক৷
শহর কলকাতা অনশন কর্মসূচি বাঁধা পেয়ে কল্যাণীতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করা হয় পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের তরফে৷ অভিযোগ, অনশন শুরু হওয়ার সাত ঘণ্টা পর তাণ্ডব চালায় পুলিশ৷ অনশন মঞ্চ ফাঁকা করতে বেপরোয়া লাঠিচার্জ করা হয়৷ বাদযাননি শিক্ষিকারাও৷ তাঁদেরও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ৷ পুলিশ-শিক্ষকদের খণ্ডযুদ্ধে এক শিক্ষিকার পোশাক ছিঁড়ে যায় বলেও অভিযোগ৷ লাঠিচার্জেও অভিযোগ ওঠে৷ আলো নিভিয়ে পুলিশি মারের প্রতিবাদে সোমবার থেকে পার্শ্বশিক্ষকরা ক্লাস বয়কট করবেন বলে ঘোষণা করেছে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ৷