আগরতলা: চাকরি খোয়াতে চলেছেন ত্রিপুরার প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক৷ ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জেরে জনরোষের মুখে বিপ্লবের বিজেপি সরকার৷
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংকটে থাকা শিক্ষকদের চাকরির স্থায়ী করা হবে বলে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, সরকার দখলের দু’বছর পর প্রতিশ্রুতি দেওয়া সেই শিক্ষকদের এখন ‘পাপের বোঝা’ বলে মনে করছে ত্রিপুরা বিজেপি৷ শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথের বক্তব্যে ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক৷
প্রতিশ্রুতি দেওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘সিপিএমের পাপে বোঝা বইতে হচ্ছে আমাদের৷ এই শিক্ষকদের চাকরিতে রাখলে এবার আমাকে জেলে যেতে হবে৷ সেটা আমি চাই না৷’’কিন্তু, কেন এই মন্তব্য, জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মার্চের পর এই শিক্ষকদের আর চাকরিতে রাখা যাবে না৷ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীর দায়ে এবার চূড়ান্ত বিপাকে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষক৷
কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে ভোটের আগে এই শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে কেন তখন ভিশন ডকুমেন্ট দিয়েছিল বিজেপি? কেন শিক্ষকদের স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল? দু’বছর পর কেন উল্টো সুর? সরকার দায় না নিলে কী হবে ১০ হাজার শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ? এই প্রশ্ন তুলে আগরতলা কাঁপিয়ে বিদ্রোহ শুরু করলেও মেলেনি শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের পথ৷ সমনস্যা থাকলে শিক্ষকদের বিকল্প চাকরি দেওয়ার বিষয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জানিয়েছেন, সরকার কোনও পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষক ও তাঁর পরিবার-সহ ৫০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন৷ এঁদের তো কোনও অপরাধ ছিল না৷
কিন্তু, হঠাৎ কেন কাজ হারাতে চলেছেন ১০ হাজার শিক্ষক? জানা গিয়েছে ২০১৪ সালে শিক্ষক নিয়োগ করে তৎকালীন বাম সরকার৷ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দায়ের হয় মামলা৷ মামলা যায় দেশের শীর্ষ আদালতে৷ ত্রিপুরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয়৷ চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষক৷ পরে ওই শিক্ষকদের চাকরি বহাল রাখতে বাম সরকার ১৩ হাজার শিক্ষাকর্মীর পদ তৈরি করে৷ তাও সুপ্রিম কোর্ট ধাক্কা খায়৷ এই নিয়ে শুরু হয় নির্বাচনী যুদ্ধ৷ কাজ হারানোর আশঙ্কায় থাকা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেয় বিজেপি৷ কিন্তু, সরকার বদলের পর বিজেপি ওই ১৩ হাজার পদের নিয়োগ পাওয়া শিক্ষাকর্মীদের অনুমোদন না দেওয়ার কথা ঘোষণা করে৷ সুপ্রিম কোর্টের বিজেপি সরকার কিছুটা সময় প্রার্থনা করে৷ সুপ্রিম কোর্ট ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষকদের বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়৷ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, এরপর আর কোনও আবেদন শোনা হবে না৷ আর তাতেই বাড়ে বিপত্তি৷