কলকাতা: প্যানেলে নাম আছে৷ কিন্তু, জোটেনি চাকরি৷ সুযোগ সুবিধা চলে যাচ্ছে অন্যদের হাতে। সব দেখেও চোখ বুজে থাকছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে টানা ২৫ দিন অনশনের মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করে চলেছেন প্রার্থীরা৷ টানা আন্দোলন চালাতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬০ জন চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়েছে পড়েছে৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনশনে বসে ডেঙ্গু, রক্তআমাশা, গর্ভপাতের পর এবার মারণ রোগের মুখোমুখি চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ একদিকে, যখন চাকরির দাবিতে টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC-র চাকরিপ্রার্থীরা, ঠিক তখন বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে ‘সাফল্যে’র খতিয়ান তুলে ধরল তৃণমূল৷ প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরে একাধিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তৃণমূলের ওয়েবসাইটে৷
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তৃণমূল সরকারের আমলে ৬৩,৫১০ জন স্থায়ী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে৷ যদিও, কত এক বছর পেরিয়ে গেলেও TET পরীক্ষার আবেদন জমা নেওয়া হলেও নিয়োগ পরীক্ষা এখনও নিতে পারিনি পর্ষদ৷
৩০,৬১৮ জন স্থায়ী উচ্চ প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক সহ৷ যদিও, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও উচ্চ প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগে একাধিক মামলা ঝুলে রয়েছে৷ সাফল্যের দাবি করা হলেও মেধা তালিকায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, ১০০ শতাংশ বিদ্যালয়ে মেয়েদের শৌচাগার এবং ছেলেদের ভিন্ন শৌচাগার তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু, বাংলার কোনও স্কুলেই সুইপার পদই নেই৷ ৮৭ শতাংশ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নত কম্পিউটার পরিষেবা চালু হয়েছে৷ কিন্তু, রাজ্যজুড়ে কম্পিউটার শিক্ষকদের একাধিক দাবি-দাওয়া রয়েছে৷ বেতন বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দাবিও রয়েছে কম্পিউটার শিক্ষকদের৷
২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লক্ষ শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার অধিকার আইন মোতাবেক ৮৯,০৯৫ জন শিক্ষকের ডিএলএড যোগ্যতা প্রদান করা হয়েছে৷ কিন্তু, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকদের যোগ্যতা বাড়ানো হলেও বাড়েনি বেতন৷ এই নিয়ে একাধিকবার রাজপথে নেমেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ এমনকী, দিল্লির রাজপথে ধর্নায়ও দিয়েছেন বাংলার শিক্ষকরা৷
বলা হয়েছে, ছাত্র শিক্ষক অনুপাত এখন প্রাথমিকে পূর্বতন ২৯.৭০ থেকে কমে ২০.০০ এবং উচ্চ প্রাথমিকে পূর্বতন ৪৮.০৭ থেকে কমে ৪২.০০ হয়েছে৷ স্কুল ছুটের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম৷ প্রাথমিক স্তরে স্কুল ছুটের হার এখন (-২.১২) (পূর্বতন ৩.৪৫)৷ উচ্চ প্রাথমিক স্তরে স্কুল ছুটের হার এখন (-০.১৭) (পূর্বতন ৫.৩)৷ মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ছুট এর হার এখন ১৪.৬৪ (পূর্বতন ১৭.৫০)৷ উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ছুট এর হার এখন ১১.০৪ (পূর্বতন ১৭.৪৮)৷ শিক্ষার্থী ধরে রাখার হার প্রাথমিক স্তরে ১০৫.৯৮ এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ৯১.০৬৷ বাংলায় শিক্ষক নিয়োগ সমস্যা ও পরিকাঠামো উন্নয় সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ রয়েছে বিরোধীদের৷
উচ্চ শিক্ষায়, ২০১১ পর্যন্ত রাজ্যে ছিল ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে গত সাত বছরে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩০। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে উত্তর ২৪ পরগনায় হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়, নদীয়ার কৃষ্ণনগরে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় এবং হুগলী জেলায় গ্রীন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে। দার্জিলিং জেলায় সরকারি স্পন্সর্ড আরও দুটি কলেজ চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে মোট সরকারি স্পন্সর্ড কলেজের সংখ্যা হল ৪৫০। সরকারি কলেজের সংখ্যা ৫৭ এবং সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা হল ৮। আলিপুরদুয়ার জেলায় আরও একটি নতুন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তৈরি হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন হলেও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে৷
দুঃস্থ এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রী যারা স্নাতক এবং স্নাতোকত্তর স্তরে পড়ছে, তাদের স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ প্রকল্পে তাদের বৃত্তি দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ ২০১৫-১৬ সালে ৪৫ কোটি টাকার তুলনায় বাড়িয়ে ২০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এই বৃত্তি ফুল টাইম নন নেট স্কলার যারা এমফিল, পিএইচডি করছেন এবং কন্যাশ্রীর মেয়েরা যারা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে, তাদের পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
২০১০-১১ সালের গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও ১২.৪ এর তুলনায় ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ১৮.৭। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় অনুপাত ২০১০-১১ সালে ৪২ শতাংশের তুলনায় ২০১৬-১৭ তে বেড়ে হয়েছে ৪৭.৩ শতাংশ। ২০১০-১১ সালের ১৩.২৪লক্ষের তুলনায় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০.৩৬ লক্ষ। মস্ত সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণসময়ের শিক্ষকদের পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। মহিলা শিক্ষিকাদের জন্য চাইল্ড কেয়ার লিভ ও পুরুষ শিক্ষকদের জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি শুরু করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা খাতে আগামী শিক্ষা বর্ষে ৩৯৬৪ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।