শিক্ষক নিয়োগে আমূল বদল! নয়া বিধিতে নিয়োগ আদৌ হবে? সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা!

শিক্ষক নিয়োগে আমূল বদল! নয়া বিধিতে নিয়োগ আদৌ হবে? সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা!

3335b1fa2bf6f757c79338d4ceeba58e

কলকাতা: গতবছর থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। একাধিক আইনি জটিলতা, বিভ্রান্তি ও অসচ্ছতা কাটিয়ে উঠতে এবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ প্রক্রিয়া সরলীকরণ করার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য। নিয়োগ প্রক্রিয়া, শিক্ষকদের পোস্টিংদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মবিধি ইতিমধ্যেই ছাড়পত্র পেয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভায়৷ কিন্তু, নিয়োগের চলতি বিধি বদলে নতুন নিয়মে নিয়োগ ঘিরে সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা করছেন শিক্ষক ও চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ নতুন বিধি চালু করে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিক্ষক নিয়োগ আদৌ সম্ভব?

নয়া বিধি এনে শিক্ষক নিয়োগে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য৷ এখন থেকে শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার ওপরই জোর দেওয়া হবে৷ সেই মেধা তালিকার ভিত্তিতেই আগামী দিনে শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়োগ করা হবে৷  নতুন নিয়মে টেটে উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পাবেন প্রার্থীরা৷ ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় মাতৃভাষা ও ইংরেজির দক্ষতা যাচাই করা হবে৷ পাশাপাশি, নির্দিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষাতেও বসতে হবে প্রার্থীদের৷ ওএমআর শিটে সেই পরীক্ষা নেওয়া হবে৷

একইসঙ্গে নয়া বিধিতে ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে৷ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে৷ শিক্ষকদের পোস্টিংদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে৷ সূত্রের খবর, এখন থেকে শিক্ষকদের শিক্ষকদের পোস্টিং দেওয়া হবে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ধাঁচে৷ পাশাপাশি, শিক্ষকদের কীভাবে নিজেদের জেলায় পোস্টিং দেওয়া হবে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখছে শিক্ষা দপ্তর৷ এতদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাস, অনার্স, মাস্টার্সের পৃথকভাবে বিভিন্ন স্কেলে এসএসসি পরীক্ষা দিতে হত৷ এখন থেকে যে কোনও শ্রেণিতে নিয়োগের পরীক্ষার জন্য একবারই আবেদন করবেন প্রার্থীরা৷ অর্থাৎ নতুন নিয়মে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ধাঁচে একইসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ তবে তিনটি পর্যায়ের পরীক্ষা একইসঙ্গে কীভাবে হবে, তা এখনও বিশদে জানানো হয়নি৷

তবে, গোটা বিষয়টি এখন পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে৷ এখনও এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও থাকছে সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা৷ কেননা, চলতি নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে নতুন করে নিয়োগ বিধি রূপায়ণ, তা কার্যকর করা, পরীক্ষার্থীদের তা জানাতে ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেও বেশ কিছুটা সময় লেগে যেতে পারে৷ তারপর রয়েছে মামলার গেরো৷ নয়া নিয়োগ বিধিতে কোনও ত্রুটি থাকলে রয়েছে মামলার ঝুঁকি৷ একই সঙ্গে রয়েছে পুরানো ব্যবস্থায় ঝুলে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ সেই নিয়োগ শেষ না করে নতুন মামলা কীভাবে সম্ভব? ফলে, পুরসভা নির্বাচন ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন বিধিতে আদৌ নিয়োগ সম্ভব কি না, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷

নয়া নিয়োগ বিধির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা কিছু ক্ষেত্রে আপাতভাবে ভালো মনে হলেও আমার মনে হয়, শিক্ষক নিয়োগের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সুসম্পন্ন করতে হলে কেবল কিছু নিয়ম পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই তা হবে না, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সুসম্পন্ন করতে হবে৷ সেটি সুনিশ্চিত হবে কি না সেটাই আসল বিষয়৷ তাই সবার আগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনলাইন এক্সামিনেশন চালু হোক৷ এতে দুর্নীতি অনেকটা কমবে৷’’

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ জেলা কমিটির সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘মৌখিক পরীক্ষা তুলে দিলে কীভাবে চলবে? সেই প্রার্থী শিক্ষাদানে উপযুক্ত কি না, তা কীভাবে বিবেচনা করা হবে৷ আমার মনে হয়, মৌখিক পরীক্ষা তুলে দিলে চলনে না৷ প্রয়োজনে ১০ নম্বরের পরিবর্তে তা ৫ নম্বর করা হোক৷ তাদে দুর্নীতি অভিযোগ কমবে৷ আর, শিক্ষক নিয়োগে নিময় যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে সরকার কেন স্বীকার করছে না, তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা রয়েছে৷ কোন কোন বিষয়ে অস্বচ্ছতা রয়েছে সেটা আগে প্রকাশ করা হোক৷ তারপর নতুন বিধি চালু করা হোক৷ শিক্ষামন্ত্রী বলছেন নিয়োগ সরলীকরণ করা হবে৷ কিন্তু, কতটা সরলীকরণ চাইছেন শিক্ষামন্ত্রী, সেটা জানা জরুরি৷ প্যানেল তৈরির পর কোন প্রার্থী কোন স্কুলে নিয়োগ হবেন তা নির্ধারণের জন্য ব়্যাঙ্ক অনুযায়ী কাউন্সিলিং একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া৷ সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করলে স্কুল বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ হবে৷’’

শিক্ষা দপ্তর মনে করছে, নয়া এই ব্যবস্থা যদি কার্যকর করা যায়, তাহলে চাকরিপ্রার্থীদের হেনস্থা কমবে৷ নিয়োগে জটিলতা কমবে৷ বাঁচবে সময়৷ তবে, মৌখিক পরীক্ষা বা কাউন্সেলিং ব্যবস্থা তুলে প্রার্থীর তথ্য যাচাই কীভাবে হবে? তাহলে কি মুড়ি-মুরকি এক হয়ে যাবে না তো? সেক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক নম্বর কীভাবে বিবেচনা করা হবে? যদি তা তুলে দেওয়া হয়, তাহলে মধ্যমেধার রমরমা বাড়বে না তো? মৌখিক পরীক্ষা উঠে গেলে সফল প্রার্থী আদৌও পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে কি না, তা শিক্ষা দানের পদ্ধতি যাচাই করা আদৌ সম্ভব হবে? প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *