কলকাতা: অনশন মঞ্চের অদূরে নারী দিবসে উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত সভা করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু, অনশনরত চাকরিপ্রার্থীদের দিকে ফিরেও তাকাননি দিদি! এবারও সেই অনশন মঞ্চের নাকের ডগায় দু’দিনের ধর্নায় বসেছে রাজ্য মহিলা তৃণমূল৷ রাজ্যবাসীকে ‘অপমানের’ জবাব দিতে ধর্মতলায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান-বিক্ষোভে চলছে৷ রাজ্যের ভোটকেন্দ্রগুলিকে অতি স্পর্শকাতর বলে ঘোষণার দাবি তুলে নির্বাচন কমিশনের বিজেপির অভিযোগের বুরুদ্ধে চলছে তৃণমূলের মহিলা শাখার উদ্যোগে ধর্না কর্মসূচি৷ কিন্তু, চাকরির দাবিতে টানা ১৬ দিন অনশন চালিয়ে যাওয়া প্রার্থীরা আজও ব্রাত্য৷ অনশনরত চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানো দূর, শাসকদের দলের ধর্নায় বিশাল মঞ্চ গড়া হলেও রাতভর অশক্ত শরীর নিয়েই বৃষ্টিতে ভিজতে হল বহু শিক্ষকদের৷ দেখুন ভিডিও, এই লিঙ্কে৷
একদিকে যখন শাসকদলের ধর্না মঞ্চে বিশাল আয়োজন চলছে, উপছে পড়ছে সংবাদ মাধ্যমের ভিড়, ঠিক তখই কোলে সন্তান নিয়ে ভেজা রাজপথে ত্রিপলের নীচে মাথা গুজতে বাধ্য হচ্ছেন মহিলা চাকরিপ্রার্থীরা৷ মাথা বাঁচাতে গিয়ে ভিজছে প্রয়োজনীয় লাগেজ, লাগেজ বাঁচাতে গিয়ে ভিজছে শরীর৷ তারউপর রয়েছে মশার দাপট৷ রাজপথের অন্ধকার কাটিয়ে মাথায় উপর ত্রিপল টাঙিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলার আপ্রাণ চেষ্টা৷ টানা ১৬ দিনের দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করতেও নিজেদের দাবিতে এখনও অনড় চাকরিপ্রার্থীরা৷
এই প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশের সর্তে এক চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘‘দিদি মানবিক৷ তিনি জনদরদি৷ লোকসভা ভোটে প্রথম প্রচারে নেমে নারীশক্তি থেকে কর্মসংস্থান, সবটাই বললেন দিদি৷ কিন্তু, আমাদের জন্য একটিও শব্দও বললেন না মুখ্যমন্ত্রী৷ দিদি মিছিল করে ধর্মতলা পর্যন্ত এসেছিলেন৷ কিন্তু, ধর্মতলা থেকে মেয়ো রোর্ড পর্যন্ত আর দু’পা বাড়াতে পারলেন না? আরমা ভেবেছিলান দিদি আসবেন৷ কিন্তু, এলেন না৷ ভেবে ছিলাম, দিদি এসে সমস্যা সমাধান করবেন৷ কিন্তু, ৪০০ অনশনকারী চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যতের কথা একবারও ভাবলেন না তিনি৷ অনশন মঞ্চের অদূরে ফের রাজকীয় কর্মসূচি পালন করছে শাসক দল৷ সেখানে মঞ্চ বাঁধার অনুমতি পাওয়া গেলেও আমাদের ত্রিপল টাঙাতেও দিচ্ছে না পুলিশ৷ আমরাও তো রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ধর্নায় বসতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু, আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এবার যখন তৃণমূল ধর্নায় বসলো, তখন কেন ঠালাও অনুমতি দিল পুলিশ৷ আমরা বেকার বলেই কি কুকুর ভাবে পুলিশ? ভবগান যদি থেকে থাকে, এর বিচার একদিন তিনি করবেন৷ যে শিশুটি আজ রাতভর ভিজল, তা দায় কী প্রশাসন নেমে? শিশু কান্না অভিষাপ দেবে প্রশাসন?’’
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, টানা ১৬ দিনের অনশন চললেও এখনও মাথার উপর ছাউনি তৈরির অনুমতি দেয়নি পুলিশ৷ খোলা আকাশের নীচে কোনক্রমে ত্রিপল টাঙিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ একদিনে শীতের প্রকোপ অন্যদিকে, গরম৷ দু’য়ে মিলে নরকযন্ত্রণায় সামিল চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ দিনে দিনে লাফিয়ে বাড়ছে অসুস্থ প্রার্থীর সংখ্যা৷ তার উপর ছড়িয়েছে ডেঙ্গু৷ নতুন করে বৃষ্টি হওয়ার জেরে ফের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা চাকরিপ্রার্থীদের৷
এমনিতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ পাশেই রয়েছে খোলা নর্দমা৷ একটু দুরের রয়েছে মশার আঁতুড়ঘর, জলাজমি৷ মাথার উপরে খোলা আকাশ৷ মাথা গোজার অবলম্বন এখন গাছের ছায়া৷ খবরের কাগজ পেতে রাজপথের এককোণে তৈরি হয়েছে বিছানা৷ পানীয় জল থেকে শুরু করে শৌচালয়, নেই রাজ্যের মধ্যেই টানা ১৬ দিন অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC চাকরিপ্রার্থীরা৷ এহেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে থেকে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন দুই চাকরিপ্রার্থী৷ চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, টানা অনশন চালিয়ে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়৷ নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে৷ এমনিতেই টানা অনশন চালিয়ে শয্যাশায়ী বহু চাকরিপ্রার্থী, তার উপর বৃষ্টি ও ডেঙ্গুর আক্রমণের ঘটনায় আতঙ্ক বাড়িয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের অন্দরে৷