কলকাতা: সরস্বতী পুজোর আগের স্কুল শিক্ষকদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখবর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা পর শিক্ষকদের নিজের জেলায় বদলির বিষয়ে মন্ত্রিসভা নীতিগত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে৷ মন্ত্রিসভায় শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্তের পর অবশেষে নড়েচড়ে বসল শিক্ষা দপ্তর৷ জারি নয়া বিজ্ঞপ্তি৷
মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্তের অনুমোদনের পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কর্মরত শিক্ষকদের এখন থেকে আর দূর জেলায় বদলি হতে হবে না৷ নিজের জেলার বাইরে চাকরি করতে যেতে হবে না স্কুল শিক্ষকদের৷ নিজের জেলায় স্কুলে শিক্ষকরা পাবেন পড়ানোর সুযোগ৷ ফলে, তাঁরা নিজের জেলায় কাজে সুযোগ পেলে কাজে ভালোভাবে মন দিতে পারবেন৷
আরও পড়ুন: পে কমিশন নিয়ে প্রতিদিন ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচানি করবেন না: মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও থমকে ছিল শিক্ষকদের বদলি৷ স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে পারস্পরিক বদলি জন্য গত বছর শেষের দিকে হেয়ারিং হলেও নতুন স্কুলে নিয়োগের ছাড়পত্র পাননি বহু শিক্ষক৷ কমিশন ও বিকাশ ভবনের সমন্বয়ের অভাবে বদলি থমকে বলেও অভিযোগ তুলছিলেন শিক্ষকরা৷ বদলির নির্দেশ থমকে থাকায় শিক্ষকদের সমস্যার কথা তুলে ধরে অন্তত ৪-৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজ বিকেল ডট কম৷
অবশেষে শিক্ষকদের জন্য সুখবর শুনিয়ে শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিকাশ ভবন৷ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘শিক্ষা দপ্তর মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে মিউচুয়াল ট্রান্সফারের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে৷ যাতে বদলির ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা না হয়৷ বিদ্যালয়গুলিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, লাইব্রেরিয়ান-সহ সকলকে মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য রিলিজ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে মিউচুয়াল ট্রান্সফার যাঁদের আটকে ছিল তাঁরা উপকৃত হবেন৷’’
আরও পড়ুন: এবার শিক্ষকদের ঘড়িতেও নিষেধাজ্ঞা পর্ষদের, জারি নয়া নির্দেশ
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে আমরা বহুবার বিকাশ ভবন থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পর্যন্ত ছুটে গিয়েছি৷ সংগঠনের তরফে লাগাতার শিক্ষক বদলির বিষয়ে গতি আনার দাবি জানিয়ে গিয়েছে৷ দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজ অবশেষে বিজ্ঞপ্তি৷ শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি এতদিন থমকে ছিল দপ্তরগুলির সমন্বয়ের অভাবে৷ আসা করি, এই নির্দেশের ফলে পর্ষদ আরও দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করবে৷ যা দপ্তরগুলি এতদিন বদির বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছিল, তারও তৎপর হবে৷ শিক্ষকরা যাতে দ্রুত বদলির সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে৷ যে কোনও সরকারি নির্দেশ কার্যকর হতে এমনিতেই শিক্ষা দপ্তরের খামখেয়ালি আছে৷ সে পে-প্রোটেকশন হোক, কিংবা হালের অপশন ফর্ম৷ সব কিছুতেই ১৩ মাসে বছর কাটিয়ে দিচ্ছে কোনও কোনও দপ্তর৷ তাতে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষকরা৷ আশা করি, এবাও যেন সেই অযথা হয়রানির মুখোমুখি হতে না হয় শিক্ষকদের৷’’
এর আগে শিক্ষকদের নিজের জেলায় বদলির প্রসঙ্গে টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘আমরা আমাদের শিক্ষক ও আমাদের ছাত্রদের জন্য গর্বিত৷ শিক্ষকরা হলেন প্রধান অভিভাবক৷ আমাদের আগামীকালকে সত্যিকারের নেতা হওয়ার জন্য আমাদের ছাত্রদের লালন-পালনের মাধ্যমে সমাজ এবং জাতি গঠনে তাঁদের বিশাল অবদান রয়েছে৷’’ দ্বিতীয় টুইটে শিক্ষক বদলির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘সরস্বতী পুজার প্রাক্কালে, আমাদের সকল শিক্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা৷ আমরা শিক্ষকদের নিজের জেলায় পোস্ট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর তৃতীয় টুইটে লেখেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি তাঁদের নিজের পরিবারের প্রতি যত্নবান হতে পারবেন৷ সমাজ গঠনের কাজে অবদান রাখার জন্য বেশি সময় দিতে পারবেন৷ শান্ত ও মনোযোগ নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করবে এই সিদ্ধান্ত৷ সকলকে আমার শুভেচ্ছা!’’
আরও পড়ুন:অন্ধকারে শিক্ষামন্ত্রী! মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে রাতারাতি বাতিল শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ
যদিও, এর আগে গতবছর ৩০ মে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা পারস্পরিক বদলি ও ট্রান্সফার অন স্পেশ্যাল গ্রাউন্ডে বদলির প্রক্রিয়া শুরু করার বিজ্ঞপ্তি দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য আবেদন গ্রহণের পর গত ৬ ডিসেম্বর কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত নতুন স্কুলে যোগ দিতে পারেননি স্কুল শিক্ষকদের বড়অংশ৷ পরে কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই প্রক্রিয়া আরও একমাস বৃদ্ধি করার ঘোষণা করে৷ এবার নতুন বছরে মুখ্যমন্ত্রীর নয়া বদলি নীতি ঘোষণা, মন্ত্রিসভার অনুমোদন, শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চ৷