কলকাতা: বেতন কাঠামোর দাবি টানা ২৬ দিন ধরে ধর্না ও ২২ দিনের অনশন কর্মসূচির পর শিক্ষামন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারির গেরোয় কার্যত পিছু হটল পার্শ্ব শিক্ষকরা৷ আপাতত কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার ঘোষণা পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের৷ যদিও, অনুমতি ছাড়া গত ১১ নভেম্বর থেকে স্কুলে গরহাজির কারণ জানতে পার্শ্ব শিক্ষকদের চিঠি ধরিয়েছে স্কুল৷ গরহাজিরা নিয়েও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং৷
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ দিনের জন্য স্কুল বয়কটের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে৷ এরপরও যদি সরকার পার্শ্ব শিক্ষকদের দাবি না মানে, তাহলে আরও বড় কর্মসূচি নেওয়া হবে৷ ক্লাস কয়কট প্রসঙ্গে ভগীরথ ঘোষের ঘোষণা, ‘‘গত ১৮ তারিখ থেকে স্কুল বয়কট ও চাইল্ড রেজিস্টার বয়কট ডাক দিয়েছিলাম আমরা৷ কিন্তু আজ আমরা সমস্ত সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে৷ স্কুল যেহেতু আমাদের কর্মস্থল সেই জায়গার কথা ভেবে, এই নির্লজ্জ সরকার কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আমরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে শুধুমাত্র স্কুল বয়কটের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে তুলে নিচ্ছি৷ যদি প্রয়োজন হয়, আবারও আমরা আগামী সপ্তাহে বুধ-বৃহস্পতিবার এটা নিয়ে আলোচনায় বসব৷ আপাতত আমরা স্কুল বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে৷’’ কিন্তু, টানা ২৬ দিন ধরে ধর্না ও ২২ দিনের অনশনের পর ১৯ দিনের বয়কট কর্মসূচি তুলে নেওয়া সিদ্ধান্ত আদৌ আন্দোলনের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে? নাকি, কোথাও সমঝোতা? আর তাই যদি করতে হত, তাহলে কেন ক্লাস বয়কট? বয়কটের পরও আন্দোলনের মাঝপথে কেন পিছু হটার সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন তুলছেন পার্শ্ব শিক্ষকদের একাংশ৷
অন্যদিকে, আজ শিক্ষামন্ত্রীর কড়া চ্যালেঞ্জের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় চাইল পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ৷ চূড়ান্ত কর্মসূচি নেওয়ার পরও কেন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করতে পারলেন না, তার কারণ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মধুমিতা বন্দোপাধ্যায় ও ভগীরথ ঘোষ একটি চিঠি লিখে শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ‘‘গত ১১ নভেম্বর থেকে আমাদের ঐক্য মঞ্চ বিকাশ ভবনের অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে আন্দোলন করছে৷ গত ১৪ নভেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করছে৷ আমরা আপনার সঙ্গে আলোচনার জন্য গত ১৩ নভেম্বর আপনার দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছিলাম৷ কিন্তু আপনার মূল্যবান সময় এযাবৎকাল পর্যন্ত আমরা পাইনি৷ সুতরাং আপনার কাছে আবার আবেদন জানাচ্ছি যে, আপনি আপনার মূল্যবান সময় প্রদান করে বর্ধিত করবেন৷’’
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে শিক্ষা মন্ত্রী জানান, যদি কেউ কেন্দ্রের হারে বেতন পেতে চান তাহলে তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরজা খোলা আছে৷ তাঁরা কেন সেখানে যাচ্ছেন না? শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, আন্দোলনকারী শিক্ষকরা যদি প্রমাণ করে দিতে পারেন, কেন্দ্র সরকার টাকা দিচ্ছে, কিন্তু সেই টাকা রাজ্য সরকার দিচ্ছে না তাহলে তা নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন৷ পার্শ্ব শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পার্শ্বশিক্ষকদের যদি তথ্য-প্রমাণ দাখিল করতে পারেন তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট মহলে তা তুলে ধরবেন৷
শিক্ষামন্ত্রী এদিন শিক্ষকদের সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ তোলেন৷ পড়ুয়াদের কথা না ভেবে শুধুমাত্র নিজেদের আর্থিক সমস্যা মেটানোর জন্য শিক্ষকরাররাজপথে নেমেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ সাফ জানিয়ে দেন, কেন্দ্র কাছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে৷ সেই পাওনা টাকা কেন কেউ এনে দিতে পারছে না৷ শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে সংসদে যারা কথা বলছেন, তাঁরাও কেন বলছেন না, রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের প্রাপ্য ১৭ হাজার কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে৷ কেন্দ্র টাকা দিলেই রাজ্য সরকার সেই টাকা মেটাবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আর্থিক অনটনে থাকা সত্ত্বেও সরকার বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি করছে৷ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়াচ্ছে৷ সাড়ে সাত হাজার অধ্যাপক নেয়া হয়েছে৷ ৭২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে৷ ছাত্র সমাজকে পড়ানো যাদের দায়িত্ব, ছাত্রদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে শুধু আর্থিক দাবি দাওয়ার জন্য বারবার তারা পথে বসেছেন কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে৷ দাবি মিটে যাওয়ার পরেও আবার নতুন দাবি নিয়ে তাঁরা গণতান্ত্রিক দাবি দাওয়া জন্য রাস্তায় বসে পড়ছেন৷
বলেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থটা দেখা উচিত৷ আপনারা যে কথাটা বারবার বলছেন, সেই কথাটা কেন লিখিত হবে আমাদেরকে তুলে ধরছেন না৷ কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা আমরা পাই৷ ওদের তথ্য প্রমাণ দিতে বলুন. কাগজটা কোথায়? কাগজ দেখান৷ আমরা ১৭ হাজার কোটি টাকা পাই কেন্দ্রের থেকে৷ এটা রেকর্ড আছে৷ বেতন-ভাতা বাবদ টাকার জন্য টাকা আসে না৷ এত কথা বলছেন কেন, কেন্দ্র সরকার দেয়, আমরা দি না, আমাদের দেখান৷ আপনারা কোর্টে গিয়ে বলুন না৷ সরকার যথেষ্ট সহ্য করছে৷ তবে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর খেলতে দেব না৷ আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছি, সমস্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে৷’’