অনুমতি ছাড়া হবে না কোনও নিয়োগ, আরও ৬ মাস শর্ত চাপিয়ে তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি নবান্নের

অনুমতি ছাড়া হবে না কোনও নিয়োগ, আরও ৬ মাস শর্ত চাপিয়ে তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি নবান্নের

কলকাতা: তাণ্ডব চালিয়ে বাংলা থেকে দূর হয়ে গিয়েছে আমফান৷ হত্যালীলা চালিয়ে যাচ্ছে করোনা৷ কফিন থেকে উঠেছে এসেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা৷ সামনে আবার নির্বাচন৷ ত্রিফলা চাপের কাছে কার্যতর নাজেহার অবস্থা৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এবার আয় বুঝে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন৷ ত্রিফলা ধাক্কা সামলে হিসেব কষে নয়া ‘রোড ম্যাপ’ও তৈরি করেছে নবান্ন৷ খরচ কমাতে গিয়ে এবার নতুন নিয়োগ সংক্রান্ত তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য অর্থ দফতর৷ আর তাতেই বড়সড় ধাক্কা গিয়ে পড়ল বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের ঘাড়ে৷

গত ২ এপ্রিল রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি 1491-F(Y) জারি করা হয়৷ করোনা পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সংকটের মোকাবিলায় রাজ্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যায় করতে হচ্ছে৷ এই অবস্থায় বেশকিছু সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়৷ মেমোরেন্ডামের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সাফ বলা হয়েছিল, করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনও নিয়োগ করা হবে না৷ অর্থ দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও ভাবেই নিয়োগ করা যাবে না৷ অর্থাৎ অর্থ দফতরের নির্দেশ পাওয়ার পর নিয়োগ করা যেতে পারে৷ গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই নির্দেশের মেয়াদ কার্যকর ছিল৷ এরপর দ্বিতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিয়োগের উপর বিধিনিষেধের জারি থাকবে বলে জানানো হয়৷ এবার তৃতীয় দফায় ২২ সেপ্টেম্বর নয়া বিজ্ঞপ্তি 2732-F(Y) দিয়ে নতুন নিয়োগের উপর বিধিনিষেধ এক ধাক্কায় আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে৷ নয়া বিজ্ঞপ্তির জেরে অর্থ দফতরের নির্দেশ ছাড়া কোনও নিয়োগ হবে না আরও ৬ মাস৷ বিজ্ঞপ্তি মেয়াদ শেষ হতে না হতেই বিধানসভা নির্বাচনের ঘণ্টা বেজে যাবে৷ নির্দিষ্ট সময়ে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে কার্যকর হয়ে যাবে নির্বাচনী বিধিনিষেধ৷ ফলে, তখনও নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে আইনি জটিলতা৷ ফলে, ভোটের আগে নিয়োগের শেষ সুযোগও কি এবার হাতছাড়া হতে চলেছে? আশঙ্কা চাকরিপ্রার্থীদের৷

প্রথম ও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি নবান্নের

গত ২৯ জুলাই রাজ্য অর্থ দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তি 2069-F(Y) জারি করে সাফ উল্লেখ করা হয়েছে, গত ০২ এপ্রিল যে বিজ্ঞপ্তি 1491-F(Y) [http://www.wbfin.nic.in/writereaddata/1491-F(Y).pdf] জারি করা হয়েছিল, তার মেয়াদ আরও বাড়ানো হচ্ছে৷ ২৯ জুলাই নতুন বিজ্ঞপ্তি 2069-F(Y) [http://www.wbfin.nic.in/writereaddata/2069-F(Y).pdf] দিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, 1491-F(Y) নম্বরের এই বিজ্ঞপ্তিটি ৩০ সেপ্টেম্বর অথবা পরিবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে৷ অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর বা পববর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত অর্থ দফতরের অনুমতি না নিয়ে কোনও নিয়োগ করা যাবে না৷ এবার সেই মেয়াদ আরও বাড়িয়ে নবান্নের তরফে তৃতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি 2732-F(Y) জারি করে নবান্নের অর্থ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ৩১-০৩-২০২১ তারিখ পর্যন্ত আগের নির্দেশ বহাল থাকবে৷

যদিও নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর আগেই জানানো হয়েছে, আগামী বছর বাংলা সহ যে ৪ রাজ্যে নির্বাচন নির্ধারিত হয়ে আছে, সেখানে নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন হবে৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে৷ ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেলে কার্যকর হয়ে যাবে নির্বাচনী আচরণবিধি৷ ফলে, নিয়োগের ক্ষোত্রেও তৈরি হতে পারে আইনি জটিলতা৷

তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি নবান্নের

নবান্নের এই বিজ্ঞপ্তি দেখে চাকরিপ্রর্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রতিক্রিয়া৷ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, তাহলে কি ভোটের আগে কোনও নিয়োগ হবে না? করোনা পর্বের আগের চলা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে গেলেও কি অর্থ দফতরের অনুমতি নিতে হবে? তাহলে গোটা প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে না তো? যদিও, ২১ জুলাই দলীয় ভার্চুল সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বাংলার মা-মাটি-মানুষের সরকার ১ কোটি ৩৬ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছে৷ তাঁর ইচ্ছে ছিল, এবার সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে৷ কিন্তু, করোনার কারণে তা হচ্ছে না৷ তবে, আগামী দিনে নতুন নীতি নির্ধারণ করে বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের দিকটি তিনি দেখবেন৷

এর আগে বিশ্বযুব দিবসে টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার যুব সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ সরকার কর্মসাথী নামের একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে৷ এই প্রকল্পে এক লক্ষ বেকার যুবক যুবতীকে সাবলম্বী করে তুলতে স্বল্পসুদে ঋণ ও ভর্তুকি দিচ্ছে৷ যেখানে ভারতে বেকারত্বের হার সর্বকালীন সর্বাধিক ২৪% এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে৷ অতীতে বহুবার বাংলার তরুণ প্রজন্ম দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে৷ ভবিষ্যতেও সেই ধারা বজায় থাকবে৷ যুব সম্প্রদায়ের জন্য আমরা গর্বিত৷ তাঁরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই নতুন প্রজন্মের হাত ধরে দেশে চলবে৷ এরা প্রতিভাবান, দক্ষ, কর্মঠ৷ তাঁদের আজ স্বপ্ন ভবিষ্যতে বাস্তবে পরিণত হবে৷’’

কিন্তু, কোথায় কী? কর্মসংস্থানের ঢালাও প্রচার, সংখ্যাতত্ত্বের লড়াইয়ের মাঝে অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তি কি সব ‘সাফল্য’ ফিকে করে দিচ্ছে না? করোনার কারণে বাড়তি খরচের বোঝা কমিয়ে উন্নয়ন চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা জরুরি নয়? নাকি, করোনার কারণ দেখিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল? বেকারত্বের যন্ত্রণা কী, কতাটা অভিশাপ, তার খবর রাখছে সদর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা? প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই৷

 

বিজ্ঞপ্তি দেখুন-

(প্রথম বিজ্ঞপ্তি)  Additional austerity measures to be followed for combating COVID19  – http://www.wbfin.nic.in/writereaddata/1491-F(Y).pdf

(দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি) Extension of validity of FD Memo No. 1491-F(Y) dated 02.04.2020 –  http://www.wbfin.nic.in/writereaddata/2069-F(Y).pdf

(তৃতীয় বিজ্ঞপ্ত)  Extension of validity of Finance Department Memorandum No.1491-F(Y) dated 02.04.2020  http://www.wbfin.nic.in/writereaddata/2732-F(Y).pdf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *