ভোটের বাজারে কর্মসংস্থানের বিজ্ঞাপন, মিলছে না বাস্তবে!

নয়াদিল্লি: কাজ নেই, এটাই এখন চরম সত্য৷ কিন্তু, মানছে কে? না মানছে কেন্দ্র৷ না বলছে রাজ্য৷ তাই ভোটের বাজারে চলছে কর্মসংস্থানের নানা বিজ্ঞাপন৷ তবে, বিজ্ঞপনি চমক যাই হোক না কেন, অন্য কথা বলছে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের দেওয়া তথ্য৷ এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সদস্য হয়েছেন ১.৮ কোটি। এর মধ্যে

ভোটের বাজারে কর্মসংস্থানের বিজ্ঞাপন, মিলছে না বাস্তবে!

নয়াদিল্লি: কাজ নেই, এটাই এখন চরম সত্য৷ কিন্তু, মানছে কে? না মানছে কেন্দ্র৷ না বলছে রাজ্য৷ তাই ভোটের বাজারে চলছে কর্মসংস্থানের নানা বিজ্ঞাপন৷ তবে, বিজ্ঞপনি চমক যাই হোক না কেন, অন্য কথা বলছে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের দেওয়া তথ্য৷

এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সদস্য হয়েছেন ১.৮ কোটি। এর মধ্যে ৬৫ লক্ষ সদস্যের বয়স ২৮ বছরের মধ্যে। এছাড়া নয়া পেনশন প্রকল্পে ২০১৪ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সদস্য হয়েছেন ১.২ কোটি।

ইপিএফের সর্বশেষ নতুন তথ্য অনুযায়ী একই সময়ে ইপিএফে নতুন সদস্য যেমন হয়েছেন, সে সময়ে ইপিএফ সদস্যপদ ছেড়েছেন ১.৪ কোটি শ্রমিক। আবার যাঁরা সদস্যপদ ছেড়েছেন তার মধ্যে আবার ৩৩ লক্ষ ফের ইপিএফে সদস্য হয়েছেন। এই ইপিএফের সদস্য হওয়া কখনোই নতুন চাকরি পাওয়ার তথ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায় না।

সম্প্রতি নিয়োগকারীদের প্রদেয় শ্রমিকদের ইপিএফের টাকা মোদী সরকার ভরতুকি হিসাবে দেওয়াতে সেই ভরতুকি নিতে অনেকে তাদের পুরোন কর্মীদের নাম ইপিএফে নথিভুক্ত করেছে। সংসদে লিখিত প্রশ্নের জবাবে জবাবে শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১.১৪ লক্ষ শিল্প উদ্যোগীকে ইপিএফ-এর জন্য (শ্রমিকদের জন্য প্রদেয় মজুরির ১২% অর্থ) ভরতুকি দেওয়া হয়েছে ২হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এদিকে কর্মসংস্থান পেশাদারি কর্মকান্ডে বেড়েছে বলেও দাবি করেছেন মোদী। যুক্তি দিয়েছেন আয়করদাতার সংখ্যা বেড়েছে তার পাঁচ বছরের জমানায় ৬.৫লক্ষ। এই পেশার মধ্যে রয়েছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ প্রমুখ। বলা হচ্ছে এই নতুন কাজ মেলায় তারা এখন আয়কর দিচ্ছেন। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই পাঁচ বছরে ৬.৫লক্ষ পেশাদারি উচ্চ শিক্ষিতদের কাজ মিলেছে তবে বছরে তার হার দাঁড়ায় মাত্র ১.২ লক্ষ। এই হারে করদাতা মোদীর জমানার আগেও বেড়েছে। তবু বছরে শিক্ষিত অংশের এই সামান্য কর্মসংস্থান আদৌ কোন সংখ্যার হিসাবে আসে না।

মোদী সরকার পরিবহনকেও কর্মসংস্থান হচ্ছে বোঝাতে পর গাড়ি বিক্রির হার বাড়ার পরিসংখ্যান তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে তার পাঁচ বছরের আমলে ৩৬ লক্ষ ট্রাক, ১.৫কোটি বাণিজ্যিক গাড়ি ২৭ লক্ষ অটো বিক্রি হয়েছে। এতে তাঁর দাবি কমপক্ষে ১.২৫ কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে। অন্যদিকে এসময়ে পরিবহন শিল্পের হাল কি হয়েছে তা নিয়ে মোদী সরকারের কথা শোনা যায় না। মোদী সরকারের আমলে ১০/১৫ বছরের পুরোন গাড়ি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে গাড়ি এই সময়ে নিষিদ্ধ হয়েছে সেই সংখ্যার নতুন গাড়ি বাজারে প্রবেশ করেছে। এতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। যারা পুরোন গাড়ির কর্মী ছিলেন তাঁরাই নতুন গাড়ির কর্মী হয়েছেন। এখানেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নামে হিসাবের কারচুপি। মোদী সরকার নুতন কর্মসংস্থানের দাবি করেছেন মুদ্রা যোজনা প্রকল্প নিয়ে। মোদীর দাবি, তার আমলে ক্ষুদ শিল্পউদ্যোগীদের কর্মসংস্থানে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

মোট ১৫.৫৬ কোটি উদ্যোগীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন উদ্যোগীদের সংখ্যা ৪.৫কোটি। এতে ঋণের পরিমান সর্বোচ্চ ৪৬ হাজার ৭৬২ টাকা। মোট ৭.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মত নতুন উদ্যোগীর এত কম পুঁজিতে শিল্প উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর বেশিরভাগ ঋণ অনাদায়ী হয়ে গেছে। সর্বশেষ খবর, মোদী সরকার শ্রমদপ্তরের লেবার ব্যুরোকে এই মুদ্রা যোজনায় কত কর্মসংস্থান হয়েছে তা নিয়ে সমীক্ষা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সমীক্ষা রিপোর্টও চূড়ান্ত হয়ে জমা পড়েছে শ্রম মন্ত্রকে। কিন্তু তাতে কর্মসংস্থানের কোন ইতিবাচক ছবি তোলা যায়নি। তা আর নির্বাচনের আগে প্রকাশ করা যাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা রিপোর্টের মতো এই রিপোর্টেও তথ্য ভুল রয়েছে বলে তা প্রকাশ বন্ধ করলো মোদী সরকার। এবারে কর্মসংস্থান নিয়ে হাতে রইলো শুধু ভেঙে যাওয়া পেন্সিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *