লকডাউন মিটলেই ১২ ঘণ্টার অফিস, শিকেয় উঠবে শ্রম বিধি?

লকডাউন মিটলেই ১২ ঘণ্টার অফিস, শিকেয় উঠবে শ্রম বিধি?

নয়াদিল্লি: সালটা ছিল ১৮৮৬ সালের ১ মে৷  দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে গর্জে উঠেছিল শ্রমিক সমাজ৷ বিশাল মিছিল লক্ষ্য করে শিকাগো পুলিশ শ্রমিকদের উপর চালিয়েছিল গুলি৷ শ্রমিকের রক্তে রক্তাক্ত হয়ে ওঠেছিল মার্কিন রাজপথ৷ শুরু হয়েছিল বিশ্বব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন৷ শ্রমিকের রক্ত বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে করেছিল সংগঠিত৷ পরে শ্রমিকদের দাবি মেনে ৮ ঘণ্টা কাজের কাজের স্বীকৃতি মেলে৷ ১ মে এখন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস৷ কিন্তু, সেই শ্রমিক দিবস আসার আগেই অফিসে কাজের সময় দিনে ৮ থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার সুপারিশ করে দ্রুত অর্ডিন্যান্স আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

সূত্রের খবর, নয়া অর্ডিন্যান্সে কেন্দ্রীয় সরকার কাজের সময় বৃদ্ধির বিষয়টি আপাতত রাজ্য সরকারগুলির হাতে তুলে দিতে চাইছে৷ ফলে, রাজ্যের ইচ্ছায় তা কার্যকর হতে পারে৷ কিন্তু,  আন্তর্জাতিক শ্রমিক বিধি ভেঙে কেন শ্রমসময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে? জানা গিয়েছে, লকডাউনের জেরে ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হতে পারে৷ তবে, শ্রম সময় বাড়লেও পারিশ্রমিক কি বাড়বে? এই প্রশ্নের জবাব এখনও অধরা৷ মালিকপক্ষের জন্য এই সিদ্ধান্ত মুনাফা বাড়ানোর পক্ষে গেলেও খেটে খাওয়া মানুষগুলি কথা কেউ ভাবছে কী?

করোনার জেরে বহু শ্রমিক ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন৷ এখনও আটকে কয়েক লক্ষ শ্রমিক৷ তাঁদের থাকা-খাওয়া, বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়৷ এমন অবস্থায় লকডাউন উঠে গেলে তাঁরা যে কাজ পাবেন, তার নিশ্চিয়তা কোথায়? লকডাউন উঠে গেলেও সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ ওঠার সম্ভাবনা কম৷ কারখানাগুলিতে পণ্যের চাহিদা পূরণ করতে শ্রময় সময় বাড়িয়ে দিলে নতুন কর্মী নিয়োগের সম্ভব্য কার্যত আর থাকছে না৷ কর্মীদের উপর কাজের চাপ বাড়িয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে বটে, তবে, নয়া বিধি কার্যকর হলে নতুন নিয়োগ কী আদৌ হবে? উঠছে প্রশ্ন৷

বর্তমানে দেশের শ্রম আইনে বলা আছে, কোনও পূর্ণবয়স্ক শ্রমিককে দিয়ে দিনে সর্বাধিক ৮ ঘণ্টা কাজ করানো যেতে পারে৷ কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির জেরে তৈরি হওয়া সঙ্কট মেটাতে এবার সেই আইনে সংশোধনী আনার পথে কেন্দ্র৷ আইনে সংশোধনী আনা হলে শ্রমিক স্বার্থ আদৌ অক্ষুণ্ণ থাকবে? বাড়ছে গভীর চিন্তা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *