কলকাতা: বেকারত্বের জ্বালায় নিয়ে সোনারপুরের আত্মহত্যা করছিলেন মেধাবী ছাত্র অতনু মিস্ত্রি৷ ২০০৭ সালের ভয়ংকর সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি এবার উঠে এল SSC চাকরি-প্রার্থীদের অনশন মঞ্চে৷ আজ, এসএসসি যুবছাত্র অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে অতনু মিস্ত্রির স্মরণ সভা করা করা হয়৷ এদিনের এই স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র-সহ রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহলের অকাংশ৷
মোমবাতি জ্বেলে, চাকরি না পেয়ে বুকে অতনু মিস্ত্রির ছবি আগলে চাকরির দাবিও জানান অনশনরত হবু শিক্ষকরা৷ ‘হয় চাকরি, নয় মৃত্যু’, এই প্ল্যাকার্ড হাতে নিজেদের দাবি দাওয়াও পেশ করেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ তাঁদের দাবি, যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকার তাঁদের দাবি দাওয়া পূর্ণ করছে, ততদিন তাঁরা তাঁদের অনশন চালিয়ে যাবেন৷ বাংলার ছেলে-মেয়েরা যাতে অতনু মিস্ত্রির মতো আত্মহত্যার পথ বেছে না নেন, তা সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত বলেও চাকরি-প্রার্থীদের তরফে আর্জি জানানো হয়৷
এদিনের এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে চাকরিপ্রার্থী রাকেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘এসএসসি যুবছাত্র অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে অনশন মঞ্চে আজ শহীদ অতনু মিস্ত্রির স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ শহীদ অতনু মিস্ত্রি তোমায় ভুলছি না ভুলবো না৷ বেকারত্বের জ্বালায় নিয়ে সোনারপুরের আত্মহত্যা করছিলেন মেধাবী ছাত্র অতনু মিস্ত্রি৷’’
চাকরির দাবি জানিয়ে SSC চাকরিপ্রার্থীদের অনশন আজ ১৭ দিনে পড়ল৷ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, টানা ১৭ দিনের অনশন চললেও এখনও মাথার উপর ছাউনি তৈরির অনুমতি দেয়নি পুলিশ৷ খোলা আকাশের নীচে কোনক্রমে ত্রিপল টাঙিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ একদিনে গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি৷ দু’য়ে মিলে নরকযন্ত্রণায় সামিল চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ দিনে দিনে লাফিয়ে বাড়ছে অসুস্থ প্রার্থীর সংখ্যা৷ তার উপর ছড়িয়েছে ডেঙ্গু৷ আগামী দু’দিনে ফের বৃষ্টি পূর্বাভাসের জের নতুন করে বিড়ম্বনা বাড়তে চলেছে চাকরিপ্রার্থীদের অন্দরে৷
এমনিতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ পাশেই রয়েছে খোলা নর্দমা৷ একটু দুরের রয়েছে মশার আঁতুড়ঘর, জলাজমি৷ মাথার উপরে খোলা আকাশ৷ মাথা গোজার অবলম্বন এখন গাছের ছায়া৷ খবরের কাগজ পেতে রাজপথের এককোণে তৈরি হয়েছে বিছানা৷ পানীয় জল থেকে শুরু করে শৌচালয়, নেই রাজ্যের মধ্যেই টানা ১৭ দিন অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC চাকরিপ্রার্থীরা৷ এহেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে থেকে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন দুই চাকরিপ্রার্থী৷ চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, টানা অনশন চালিয়ে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়৷ নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় পূর্বাভাস জারি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা৷ এমনিতেই টানা অনশন চালিয়ে শয্যাশায়ী বহু চাকরিপ্রার্থী, তার উপর বৃষ্টি ও ডেঙ্গুর আক্রমণের ঘটনায় আতঙ্ক বাড়িয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের অন্দরে৷
অন্যদিকে, আজ অতনুর পথই অসুরণ করতে কার্যত বাধ্য হলেন বাংলার আরও এক চাকরিপ্রার্থী৷ বেকার বাবা৷ চিটফান্ডে লুট হয়েছে শেষ সঞ্চয়৷ কোনক্রমে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেও মিলছিল না চাকরি৷ বাবার বেকারত্ব,নিজের বাকার দশা কাটাতে মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মঘাতী সিউড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া!
উচ্চশিক্ষার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরি না পাচ্ছিলেন না৷ বেকারত্বের যন্ত্রণায় মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, সিউড়ির সমন্বয়পল্লীর বাসিন্দা উৎপল ঘোষ৷ বছর তিনেক আগে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন উৎপল৷ এরপর চাকরির আশায় বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিলেও চাকরি পাননি তিনি৷ চাকরি না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল উৎপল। শনিবার সকালে তাঁর ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়।
পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পাওয়ার কারণেই এমনটা করেছে সে। বেশ কিছুদিন ধরে ভালোভাবে কথাবার্তাও বলছিল না কারোর সঙ্গে। খাওয়া-দাওয়া করছিল না ঠিকভাবে। শুক্রবার রাতে খাবার খাওয়ার পর ঘুমোতে যায় উৎপল৷ এরপর শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি দেখে পরিবারের সদস্যরা দরজা ধাক্কা দিতেই দেখেন ঝুলছে উৎপলের দেহ৷
পরে উৎপলের নিথর দেহ উদ্ধার করে সিউড়ি থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিবার সূত্রের খবর, বাবা ছিলেন রোজভ্যালির এজেন্ট, এখন বেকার। পরিবারের খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল বাবাকে। চাকরি না পাওয়ার কারণে বাবাকেই ওঠাতে হচ্ছিল সমস্ত খরচা। একদিকে অভাব অন্য দিকে চাকরি না পাওয়ার মানসিক অবসাদ, সে কারণেই আত্মঘাতী হয়েছে উৎপল অভিযোগ তার পরিবারের৷