কলকাতা: রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার প্রতিবাদে পথে নামেছিলেন রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষাবন্ধু৷ করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল শুরু হতেই জলকামান থেকে শুরু করে লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তারি, পুলিশি হেনস্তার মুখে পড়েন রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষাবন্ধু৷ নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে রাজপথে নেমে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে এবার কালাদিবস পালন ও কর্মবিরতি শিক্ষাবন্ধুদের৷
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাবন্ধু যৌথ মঞ্চের তরফে নন্দ দুলাল দাস, নিবিড় ঘোষ, সুনিত সরকার, সুজিত তা জানিয়েছেন, ‘‘বিকাশ ভবন অভিযান রুখতে পুলিশ যে ভাবে আমার উপর তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে আমরা মর্মাহত৷ আন্দোলন রুখতে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে আমরা শুক্রবার পর্যন্ত সিআরসি এবং সিএলআরসির সমস্ত শিক্ষা বন্ধু কালো ব্যাজ পরে অফিস করছি৷ কর্মবিরতি পালন করব৷ এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা বন্ধু যৌথ মঞ্চের পাঠানো নির্দিষ্ট পিডিএফ ফরম্যাটে সকলে স্বাক্ষর করে সিপিসিকে জমা দেব৷ সেই সঙ্গে সিপিসিকে অনুরোধ, তিনি যেন শিক্ষাবন্ধুদের দাবি পত্রটি ডিপিওকে পাঠিয়ে দেন৷’’
শিক্ষাবন্ধু সংগঠনের অন্যতম কনভেনার নন্দ দুলাল দাস জানিয়েছেন, সর্বশিক্ষা মিশনের সমস্ত কর্মচারীদের বেতন কাঠামো শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে নির্ধারিত হয়েছে। বঞ্চিত একমাত্র শিক্ষাবন্ধু সমাজ৷ তাঁদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে পদদলিত করা হয়েছে৷ পরিসংখ্যান তুলে ধরে নন্দবাবু জানিয়েছেন, সর্বশিক্ষা মিশনের একজন গ্রুপ-ডি কর্মী, যিনি অষ্টম শ্রেণি পাশ হয়েও বেতন পান ১৫ হাজার টাকা৷ একজন গ্রুপ সি কর্মী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বেতন পান ১৯ হাজার টাকা৷ আবার মিশনের একজন গ্রাজুয়েট কর্মী বেতন পান ২৫ হাজার টাকা৷ একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট কর্মী বেতন পান ৩০ হাজার টাকা৷ অথচ উচ্চশিক্ষিত একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষাবন্ধু কর্মী হাতে পান মাত্র ৭ হাজার টাকার সামান্য কিছু বেশি৷ যদিও অন্য রাজ্যে তা ৬০ হাজার টাকার বেশি৷
তিনি আরও জানান, বঞ্চনার এখানেই শেষ নয়৷ সর্বশিক্ষা মিশনের অন্যান্য কর্মচারী যারা কম টাকা বেতন পেতেন, তাঁদের টাকা বাড়িয়ে রাজ্য সরকার একটা জায়গায় আনার চেষ্টা করেছেন৷ যদিও তা নগণ্য৷ কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে রাজ্য সরকার শিক্ষা বন্ধুদের ক্ষেত্রে পার্সেন্টেজে নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে৷ সর্বশিক্ষা মিশনের সমস্ত কর্মচার বর্ধিত বেতন ১ বছরের এরিয়ার হিসাবে পেয়েছেন৷ অর্থাৎ অন্যান্যদের ক্ষেত্রে বর্ধিত বেতন ১ বছর আগে থেকে লাগু হয়েছে৷ কিন্তু শিক্ষা বন্ধুদের ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে অভিযোগ৷ তাঁদেরকে এরিয়ার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে৷ পার্শ্বশিক্ষক প্রাথমিক, পার্শ্বশিক্ষক উচ্চ প্রাথমিক, শিক্ষাগত যোগ্যতা আলাদা, বেতন কাঠামোও আলাদা৷ কিন্তু শিক্ষাবন্ধু প্রাথমিক ও শিক্ষাবন্ধু উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা আলাদা হলেও বেতন কাঠামো একই৷ অর্থাৎ শিক্ষা বন্ধুদের ক্ষেত্রে একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট ও একজন গ্রাজুয়েট কর্মীকে একই বেতন দেওয়া হচ্ছে৷ নন্দ দুলাল দাস বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের কথা বাদ দিন৷ পৃথিবীর কোথাও এমন হয় না৷ এই ব্যবস্থাকে একমাত্র তুঘলকি ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করা চলে৷ তাই এবার করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে আন্দোলনে শামিল হয়েছি আমরা৷ গান্ধীজিই আমাদের আদর্শ৷ গান্ধীজির দেখানো পথেই হবে আন্দোলন৷’’