নয়াদিল্লি: করোনা মহামারী যে দেশের অর্থনীতিতে মহা বিপর্যয় ডেকে আনছে তার চিত্রটা স্পষ্ট করে দিচ্ছে লকডাউনের জেরে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার। করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পড় সামগ্রিক ভাবে বেকারত্বের চিত্রটা যে ভয়াবহ আকার নিতে চলেছে তার আঁচ শুরুতেই পাওয়া গেছিল। এবার এপ্রিলের শুরুতেই সেই পরিসংখ্যান বলছে শহুরে বেকারত্বের হার ৩০.৯% ছাড়িয়েছে। সামগ্রিকভাবে বেকারত্ব বেড়েছে ২৩.৪%। বেকারত্বের হার এবং দেশের অর্থনীতির উপর তার প্রভাব সংক্রান্ত সমীক্ষা, গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহকারী মুম্বইয়ের এক বেসরকারি সংস্থা সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি) এর তথ্য বলছে বেকারত্বের এই হার বিগত ৪৩ মাসে (সেপ্টেম্বর,২০১৬ থেকে) সর্বোচ্চ। সংস্থার বিগত দুসপ্তাহের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
'জিংহুয়া' সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯,৪৯৯ জনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে এই সমীক্ষা চালিয়েছিল সিএমআইই। সেই তথ্য অনুসারে, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সপ্তাহের সর্বশেষ পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে বেকারত্বের হার ছিল ২৩.৮ শতাংশ। কাজে নিযুক্ত হওয়ার হার বা লেবার পার্টিসিপেশন রেট (এলপিআর) কমে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানের হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। সংস্থার হিসেবে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৮.৪% থেকে বেকারত্বের হার এপর্যন্ত ২৩% পর্যন্ত বেড়েছে। যার সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে শহরগুলিতে। এই পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক।
সিএমআইই অনুসারে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে কর্মসংস্থানের হার সর্বকালীন সর্বনিম্ন ৩৮.২ শতাংশে নেমে গেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারির পর থেকেই বেকারত্বের হারে পতন লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে শ্রম অংশগ্রহণের হার ছিল ৪১.৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এটি ছিল ৪২.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউন এরফলেই এলপিআর রেট কমে যাচ্ছে বলে মনে করছে সিএম আইই। তবে তাদের মতে এই পতন লকডাউনের আগেই শুরু হয়েছিল, লকডাউনের পরে সেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করেছে।
'লাইভমিন্টে'র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আনুমানিক হিসাবের ভিত্তিতে ভারতের প্রাক্তন প্রধান পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন আভাস দিয়েছিলেন লকডাউনের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ কাজ হারাতে পারে। দেশে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়াতে বলছে একাধিক রাজ্য। যদি কেন্দ্র এই দাবি মেনে নেয় তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও বেকারত্বের বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলেই মনে করছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।