শাম্মী হুদা: চারপাশের পরিবেশটাকে যদি বদলে দিতে পারেন,তবে কতই না ভাল হয়। ভাল তো হয়ই.আপনি তিন বেলা ভূরিভোজ খেলে তার অন্তত ডালভাত দিয়েই দুপুর ও রাতের খাবার খাক। পেটটা তো ভরে থাকুক। এই ইচ্ছকে সম্বল করেই মাত্র মাস আষ্টেক আগে পথ চলা শুরু করেছে ডাবল রুটি প্রকল্প। না, কোনও সরকারি সংস্থা নয়। এই প্রকল্প হল এক ১৬ বছরের কিশোরীর ব্রেন চাইল্ড। তার নাম তায়রা ভার্গব, গুরুগ্রামের মৌলসারি এলাকার বাসিন্দা তায়রা দশম শ্রেণির ছাত্রী। যে নিজেই প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪০০ খুধার্ত মানুষের মুখে রুটি তুলে দেয়। এভাবেই একদিন তার চারপাশের পৃথিবী থেকে খিদের জ্বালা দূর হবে, এমনটাই মনে করে তায়রা।
আচমকাই একদিন মনে হল আর খেতে না পাওয়া মানুষের মুখে খাবার তুলে দিলাম। তায়রার ভাবনা চিন্তা এমন ছিল না। গতবছর এক মেগা বিয়েতে গিয়েছিল ওই কিশোরী। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ছিল ২৫০জন। আর খাবারের আয়োজন ছিল তুলনায় অনেক বেশি। কত রকমের খাবার, বিবিধ ডেজার্ট, মেনকোর্সেও নানা পদ সঙ্গে স্টার্টারে একাধিক চটপটা লোভনীয় আয়োজন। কোনটা ফেলে আমন্ত্রিতরা কোনটা খাবেন। বলা বাহুল্য, স্বাস্থ্য সচেতন অতিথি অভ্যাগতরা খুব অল্পই খেলেন বেশিরভাগ নামী খাবার গেল ডাস্টবিনে। এই দৃশ্য তায়রার মন খারাপ করে দিয়েছিল। স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ির কাচ তুলে সে তারই বয়সী কত মেয়েকে দেখে খাবারের জ্বালায় ভিক্ষা করতে, আর শহরের অন্য অংশে শুধু বিয়ের নামে এত খাবার নষ্ট। বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে সে, কীভাবে এই বৈষম্য দূর করা যায়া।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
যেমন ভাবা তেমনই কাজ, আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে তায়রার দাদা। সেই প্রাণপ্রিয় দাদাকেই নিজের ইচ্ছের কথা জানায় সে। একসঙ্গে এলাকার সব গরীব মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ক্ষমতা তায়রার নেই। তবে তিন চারটি পরিবারের খাবারের দায়িত্ব সে নিতেই পারে। ঠিক হয়, সপ্তাহের তিন দিন পাঁচটি পরিবারকে পাঁউরুটি দেবে তায়রা। একইভাবে বোর্ডিং স্কুলের অভুক্ত ছেলেমেয়েদেরকেও পাঁউরুটি বিতরণ করা হবে। আটমাস ধরে এই প্রচেষ্টা চালু রেখেছে ওই কিশোরী। স্থানীয় এক বেকারির সঙ্গে যোগাযোগ করে রুটি নেওয়া হয়। তায়রার কথা মতো অন্য একটি সংস্থা এই রুটি সংগ্র্হ করে সুনির্দিষ্ট ঠিকানাগুলিতে পৌঁছে দেয়। এভাবেই চলছে, দাদা দেশে ফিরলে বোনকে সহযোগিতা করে। এই পদ্ধতিতেই প্রতি সপ্তাহে ৪০০ মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ওই কিশোরী।
তায়রা জানিয়েছে, অনেককে খাওয়ানোর ইচ্ছে তবে তার জন্য অনুদান দরকার। যদি তা পাওয়া যায়, তাহলে একই সঙ্গে অনেকের মুখে অন্ন যেমন তুলে দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনই আরও বেশকিছু খাবারের দোকানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মেনুতে বদল আনা যাবে। এই সামান্য বদলই একদিন সমাজের রূপটাই বদলে দেবে, আশা রাখে ওই কিশোরী।