কলকাতা: অনশনরত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবসু৷ শনিবার অনশন মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের একহাত নেন৷ অনশন মঞ্চে এসে শিক্ষামন্ত্রীকে চাকরিপ্রার্থীদের দাবি-দাওয়া মেটানোর দাবি জানান বিমান৷ বলেন, ‘‘চাকরিপ্রার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না৷ এদের ন্যায্য দাবি মেনে নিচ্ছেন না কেন?’’ অবিলম্বে চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি৷ (দেখুন ভিডিও)
এদিন সকালে বিমানবাবুর বক্তব্য চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন এক মহিলা চাকরিপ্রার্থী৷ তড়িঘড়ি তানিয়া নামের এক চাকরিপ্রার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ চাকরিপ্রার্থীদের করুন পরিস্থিতি দেখে বিমান বসুর সামনে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক অভিভাবক৷ বিমানবাবুকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রীকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন৷ বক্তব্য চলাকালীন স্থানীয় এক অভিভাবক চিৎকার করে বলেন, ‘‘আপনি শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছেন কেন৷ আপনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলুন ব্যবস্থা নিতে৷ আমরা সংখ্যালঘু মানুষ৷ দিদিকে দু’হাত তুলে ভোট দিয়েছিলাম৷ আর এখন আমাদের ছেলেমেয়ারা পাস করেও চাকরি পাচ্ছে না৷ চাকরি চাইতে ২৪ দিন অনশন করছেন৷ ওরা ওদের মতো আন্দোলন করুক৷ এবার কিন্তু, আমরা আন্দোলনে নামবো৷’’
এর আগেও অনশনরত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের প্রসঙ্গ তুলেন আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠক করে বিমানবাবু বলেন, ‘‘SSC-র চাকরিপ্রার্থীরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ চাকরির দাবিতে না খেয়ে পথে বসে রয়েছেন SSC চাকরিপ্রার্থীরা৷ অনশনরতদের নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ লেখালেখি করলেও অনেকেই কিছুই করছে না৷ বরং তাঁদের কাছে প্রধান গুরুত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রার্থীরা কে কী খাচ্ছেন, কীভাবে নিজেকে ফিট রাখছেন৷ কিন্তু, না খেয়ে যাঁরা রাস্তায় পড়ে রয়েছে, তাঁদের নিয়ে কেন কিছু বলা হচ্ছে না? আমার মনে হয়, তাঁদের দাবিগুলিও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে উচিত৷’’ তবে, এদিন বিমানবাবু সংবাদ মাধ্যমকে কাঠগড়ায় তুললেও ‘আজ বিকেল’ সহ বাংলার প্রায় সমস্ত সংবাদমাধ্যমই অনশনরত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা তুলে ধরেছে৷
শুক্রবার SSC চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী৷ ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটিকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ৷ রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর৷ (দেখুন ভিডিও)
অন্যদিকে, অনশনকারত SSC-র চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ খোলা চিঠি মীরাতুন নাহারের৷ অনশন মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘আক্রান্ত আমরা’রাও৷ চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়ে শঙ্খ ঘোষ এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের প্যাডে লিখেছেন, “রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে এঁদের মধ্যে জনা পঞ্চাশেক গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে সবারই চোখের সামনে এমনও যে ঘটে চলেছে, তার জন্য রাজ্যবাসী হিসেবে লজ্জা হওয়া উচিত৷’’ খোলা চিঠিতে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে বলেও জানান মীরাতুন নাহার৷
সম্প্রতি, অনশনকারীদের তরফে শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে গিয়ে কবির সঙ্গে দেখা করেন৷ শঙ্খবাবু তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনেন। তার পরে চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন৷ কেঁদেও ফেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ চাকরিপ্রার্থীদের দাবি-দাওয়া সরকারকে কাছে তুলে ধরারও আশ্বাস দেন তিনি৷
বিগত কয়েক দিন যাবত বৃষ্টিতে অনশনরত চাকরিপ্রার্থীরা খোলা আকাশের নীচে ভিজেছেন৷ জানা গিয়েছে, এলাকাটি সেনাবাহিনীর আওতায় থাকায় ওখানে খুঁটি পুঁতে ত্রিপল টাঙানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ ফলে ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচা যায়নি বলে জানান প্রার্থীরা৷ রবিবার সন্ধ্যার পরে শিলাবৃষ্টিতেও তাঁদের নাকাল হতে হয় চাকরিপ্রার্থীদের৷
আন্দোলনকারীদের দাবি, বিভিন্ন জেলার স্কুলে স্কুলে বহু পদ খালি। তা সত্ত্বেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বহু শিক্ষকপদে প্রার্থীর নাম ওয়েটিং লিস্টে তুলে এসএসসি-কর্তৃপক্ষ চুপচাপ বসে আছেন। শূন্য পদের বিষয়টি ‘আপডেট’ করা হচ্ছে না। ফলে প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অবিলম্বে তাঁদের নিয়োগের ব্যবস্থা করার দাবিতে মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে বসে অনশন করছেন অন্তত ৪০০ চাকরিপ্রার্থী। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৫৫ জন অনশনকারী। যদিও কমিশনের এ সবে হেলদোল নেই। কমিশন দাবি করেছে, কাউন্সেলিং চলছে। ধাপে ধাপে সবটাই হবে। সেই সঙ্গে এটাও জানানো হয়, ওয়েটিং লিস্টে থাকা সকলে চাকরির সুযোগ না-ও পেতে পারেন৷