কলকাতা: প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা, পরে মন্ত্রিসভায় দেওয়া হয়েছে অনুমোদন৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে নিজের জেলায় বদলির খবর শুনে বেক খানিরক স্বস্তি পেয়েছিলেন রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষক৷ কিন্তু, ঘোষণা হলে নেই কার্যকারিতা৷ শিক্ষা দপ্তরে হন্যে হয়ে ঘুরেও ব্যর্থ মিউচুয়াল বদলি চাওয়া বহু শিক্ষক৷ আর তাতেই শিক্ষকদের মধ্য বাড়ছে ক্ষোভ৷
গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এবার থেকে শিক্ষকদের আর কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ সফর করতে হবে না৷ প্রত্যেক শিক্ষককে তাঁদের নিজ নিজ জেলার বিদ্যালয় পড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে৷ শিক্ষকদের নিজেদের জেলায় কর্মস্থল হলে স্বাভাবিক ভাবে কর্মস্থল ও পরিবার উভয়ের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্য সমান তৎপরতার সঙ্গে পালনে সক্ষম হবেন৷ এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল৷ কিন্তু নিজের জেলায় শিক্ষকদের নিয়োগের সব থেকে সহজ উপায় মিউচুয়্যাল ট্রান্সফার বা আপস বদলি৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যের বহু শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষা দফতরে আপস বদলির জন্য আবেদন করে রেখেছেন৷ আপস বদলির বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে কাউন্সেলিং করা হলেও এখনও পোস্টিং পানন বহু শিক্ষক৷ কমিশনের কাজের মন্থর গতিতে কার্যত ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে আবেদনকারী শিক্ষকগদের৷
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আপস বদলির বিষয়টি বন্ধ৷ এরপর ২০১৯ সালের জুন মাসে আপস বদলির প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা হয়৷ এইসময় এই ধরণের বদলির আবেদনের ওপর নির্ভর করে স্কুল সার্ভিস কমিশনে শুনানি হয়৷ ওই শুনানিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সেই শুনানির মাধ্যমে আবেদনকারী শিক্ষকরা যে বিদ্যালয়ে কর্মস্থল নির্বাচনের সুযোগ পেলেন, তাঁকে শুনানির দিন থেকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে৷ কিন্তু, সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও এখনও স্কুলে যোগ দিতে পারেননি বহু শিক্ষক৷ বদলি সংক্রান্ত শিক্ষকদের সমস্যা নিয়ে অন্তত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদেন আগেই প্রকাশ করে আজ বিকেল ডট কম৷ শিক্ষক বদলি থমকে থাকায় ক্ষুবন্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষকদের একাংশ৷ সেই ক্ষোভ কমাতে সরকারি ভাবে চেষ্টা করা হলেও তা এখনও গতি পায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের৷
বদলির বিষয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভের বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন শিক্ষকদের নিজের জেলায় বদলির ব্যবস্থা করার কথা ফলাও করে ঘোষণা করছেন সেই সময় ট্রান্সফারের সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়া মিউচুয়াল ট্রান্সফার জন্য হেয়ারিং পরও শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন অফিসে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, এসএসসি এবং বিকাশভবনে (স্কুল শিক্ষা দপ্তর) বারবার এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেকবারই এক দপ্তর অন্য দপ্তরের উপরে দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে সমস্যার দায়ভার এড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রতিক্ষেত্রে শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে কেন কোন সমন্বয় থাকবে না? আর তার জন্য কেন খেসারত দিতে সাধারণ শিক্ষকদের? এই সমস্যা নিয়ে এক একজন শিক্ষক ১০-১৫ দিন নিজেদের ছুটি নষ্ট করে ডি আই , ডি এস সি, এস এস সি , পর্ষদ অফিসের দ্বারে দ্বারে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সমস্যার সুরাহার জন্য। তাঁদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষা দপ্তরের এই সব অবস্থা দেখলে বোঝা যায় এই সরকারের বদলির ঘোষণা আসলে ফাঁকা আওয়াজ। আমরা অবিলম্বে শিক্ষা দপ্তরকে তাঁদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে এই শিক্ষকদের পছন্দমত স্কুলে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেওযার দাবি জানাচ্ছি৷’’