কলকাতা: দৈনিক ১০০ টাকার মজুরির সরকরি দপ্তরের কর্মী নিয়োগের দু’বারের বিজ্ঞপ্তিতে মিলল না যোগ্য প্রার্থী৷ ঘটনা, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে কালীঘাট ব্রিজের পশ্চিমপাড়ের ৬নং জাজেস কোর্ট রোডে রয়েছে রানি রাসমণি ছাত্র নিবাসের ঘটনা৷ রাজ্য সরকারেরই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তর সেই ছাত্রীনিবাসটি পরিচালনা করে৷ সেই ছাত্রী নিবাসে কয়েকটি পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি৷ এই সরকারের রীতি অনুসারে এই ক্ষেত্রেও নিয়োগ স্থায়ী হবে না, জানানো হয়েছে বিজ্ঞাপনে৷ দু’বার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে৷ চলতি মাসেও দেওয়া হয় বিজ্ঞপন৷ দুবার কেন? অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের কলকাতার ওয়েলফেয়ার অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, যথেষ্ট আবেদন জমা পড়েনি৷ তাই আবার বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছিল৷
যথেষ্ট আবেদন জমা পড়েনি? অর্থাৎ সরকার যে বেতন দেবে বলে ঘোষণা করেছিল, তাতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে কম? কী ছিল বিজ্ঞাপনে? দুটি বিজ্ঞাপনেই জানানো হয়েছিল ছাত্রীনিবাসের জন্য একজন রাঁধুনি লাগবে। যিনি আবাসিকদের খাবার বানাবেন। সরকার বিজ্ঞাপনে জানিয়েছিল, আবেদনকারীকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করা হতে হবে। বেতন দেওয়া হবে ৩০০০ টাকা।
আর একটি পদ হলো সহকারী। তিনি রান্নার সময় রাঁধুনিকে সহায়তা করবেন। সরকার চেয়েছিল, তাঁকেও অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। বেতন পাওয়া যাবে ২৫০০ টাকা মাসে। এছাড়াও ওই ছাত্রীনিবাসের জন্য একজন দ্বাররক্ষী তথা রাতের পাহারাদারও চায় সরকার। সরকারের বিজ্ঞাপন অনুসারে তাঁকে বেতন দেওয়া হবে মাসে ৩০০০ টাকা। এই পদের জন্যও অষ্টম শ্রেণি পাশ ছিল শর্ত। এখানেই শেষ নয়, ছাত্রীনিবাসটিকে সাফ সুতরো রাখার জন্য একজন কর্মবন্ধু (সাফাইকর্মী) নিয়োগের কথাও বলা ছিল বিজ্ঞাপনে। সেইক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে এবং বেতন দেওয়া হবে ৩০০০ টাকা- বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল।
প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিল ১৮থেকে ৪০ বছর। মঙ্গলবার ওই ওয়েলফেয়ার অফিসে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, আর আবেদন করা যাবে কিনা? কর্মীরা খোঁজ নিয়ে জানালেন, ১০তারিখ পর্যন্ত আবেদনপত্র নেওয়া হয়েছে। আবার নেওয়া হলে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হবে। গত সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তখন যথেষ্ট সংখ্যক আবেদন জমা পড়েনি বলে দ্বিতীয়বার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যে একশো দিনে কাজের মজুরি ১৯১ টাকা। মজুরির টাকা গ্রামবাসীরা পান বা না পান, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা কমিশন নিলেও সরকার নির্দ্ধারিত মজুরি ওই ১৯১ টাকাই। বিজ্ঞাপনে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে যে কথা জানানো হয়েছে, তাতে রাঁধুনি, দারোয়ান, কর্মবন্ধুকে মাসে বেতন দেওয়া হবে ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ দৈনিক ১০০ টাকা। ফলে এই মজুরিকে অনেকেই খুবই কম মনে করেছেন। ফলে যথেষ্ট আবেদন জমা পড়েনি। রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের এক অফিসার এই প্রশ্নের জবাবে অজুহাত দিয়ে বলেন, আমরা দেখেছি ২০১৭-র জুলাইয়ে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দপ্তর একটি ছাত্রাবাসে রাঁধুনি নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সেখানেও এই একই বেতনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে বেতন বাড়ানোর কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকার নেয়নি।