কর্পোরেটমুখী রেল, প্রতিরোধে কর্মীদের

কলকাতা: দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেল দুর্ঘটনা ঘটে এদেশে। ২০১৬ সালে রাজ্যসভায় পেশ হওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-১৭ সালে সবচেয়ে বেশি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে মূলত ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে। দ্বিতীয়ত, লেভেল ক্রসিং-র সুরক্ষার অভাবে। প্রতিদিন আমাদের দেশের দুকোটি মানুষ যাতায়াত করেন রেলে। অথচ যাত্রী নিরাপত্তায় উদাসীন রেল মন্ত্রক। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে রেলেরই নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক

কর্পোরেটমুখী রেল, প্রতিরোধে কর্মীদের

কলকাতা: দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেল দুর্ঘটনা ঘটে এদেশে।  ২০১৬ সালে রাজ্যসভায় পেশ হওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-১৭ সালে সবচেয়ে বেশি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে মূলত ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে। দ্বিতীয়ত, লেভেল ক্রসিং-র সুরক্ষার অভাবে।

প্রতিদিন আমাদের দেশের দুকোটি মানুষ যাতায়াত করেন রেলে। অথচ যাত্রী নিরাপত্তায় উদাসীন রেল মন্ত্রক। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে রেলেরই নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্স জানায় একের পর এক রেলের লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে রেলের ত্রুটিযুক্ত ট্র্যাকের কারণে। ২০১৫ সালে রেলমন্ত্রক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানায় ৪৫০০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাকের অবিলম্বে সারাই প্রয়োজন। প্রয়োজন রেললাইনের নিয়মিত সারাই ও তদারকি।

কে রেললাইনের সারাই করবে? কারাই বা করবে রেললাইনের নিয়মিত তদারকি? রেলের ট্র্যাকমেন পদে শূন্য পদের সংখ্যা ৪লাখ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ২.৭৫ লাখ। ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে ৪১, ৪৬৭টি ট্র্যাকমেন-র শূন্য পদে নিয়োগ বন্ধ।
রেলেরই নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে প্রতি বছর রেলের ২০০টি সিগন্যাল গিয়ার বদলানো প্রয়োজন। সিগন্যাল তদারকির কাজে নিযুক্ত শূন্যপদের ৩৪৫৪ পদে নিয়োগ নেই!  রেলের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মচারীদের মধ্যেই ১লক্ষ ২২ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ বন্ধ। লোকো পাইলট পদে ১১৪২২টি শূন্যপদ খালি অথচ নিয়োগ নেই। অ্যাসিস্টেন্ট পাইলট পদে ৬৫৭৪টি শূন্যপদ খালি অথচ নিয়োগ নেই।  প্রহরীবিহীন রেল ক্রসিংগুলির দুর্ঘটনা রেলের দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে বড় কারণ। ড. অনিল কাকোদরের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের রেল নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ ছিল রেলের ক্রসিং এবং ওভার ব্রিজগুলিকে ঢেলে সাজাতে ৫ বছরে ৫০হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। মোদী ক্ষমতায় আসার পরই ২০১৪-১৫ সালের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছাঁটাই হয় ৫০ শতাংশ।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে চার বছরে একদিকে যেমন রেল যাত্রার সুরক্ষা, নিরাপত্তা শিকেয় উঠেছে অন্য দিকে একই সঙ্গে রেলে বেসরকারিকরণ অভিযান তীব্র হয়েছে। মোদী সরকার কাগজে, রেডিওয়, টিভিতে মেক ইন ইন্ডিয়া-র গগনভেদী বিজ্ঞাপনে প্রচার করলেও রেল ক্ষেত্রেই বিদেশি বহুজাতিকদের লুটের সুযোগ করে দিয়েছে আরএসএস- বিজেপি-র দেশপ্রেমিক সরকার! ভারতীয় রেলের ৬টি উৎপাদন ইউনিট বছরে ৬০০টি ডিজেল ও ইলেকট্রিক লোকো, বছরে ৩০০০-র বেশি কোচ উৎপাদন করলেও মার্কিন বহুজাতিক জেনারেল ইলেকট্রিককে বিহারের মারহাউরায় ডিজেল লোকোমোটিভ ইউনিট বানাবার অনুমতি দিয়েছে মোদী সরকার।

৪৫০০ হর্স পাওয়ার এবং ৬০০০ হর্স পাওয়ারের ডিজেল লোকোমোটিভ প্রতি বছর গড়ে ১০০টি করে ভারতীয় রেলকে সরবরাহ করবে মার্কিন বহুজাতিক জেনারেল ইলেকট্রিক। আমেরিকা থেকে আসা প্রথম ডিজেল লোকোমোটিভ ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে গুজরাটে আদানির মুন্দ্রা বন্দরে। জেনারেল ইলেকট্রিক এদেশে কোনও লোকোমোটিভ বানাবে না তারা কেবল বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আনিয়ে অ্যাসেম্বল করে সরবরাহ করবে ভারতীয় রেলকে।  ভারতীয় রেলের বেনারসের ‘ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস’, যে সংস্থা প্রথম ভারতে ৫৫০০ হর্স পাওয়ারের ডিজেল লোকোমোটিভ বানিয়েছিল ভীম, তারা ২০১৫-১৬ সালে ৩৩০টি ডিজেল লোকোমোটিভ বানিয়েছিল, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২০।  বেনারসের ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস বছরে ভারতীয় রেলকে ৩০০টির বেশি ডিজেল লোকোমোটিভ সরাবরাহ করলেও মার্কিন বহুজাতিক জেনারেল ইলেকট্রিককে ১০০টি ডিজেল লোকোমোটিভ সরাবরাহ করার জন্য ডেকে এনেছে মোদী সরকার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =