কলকাতা: দীর্ঘ মামলার জট মাথায় নিয়ে শেষ হয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্ব৷ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় ২৪ হাজার ৫৬৪ চাকরিপ্রার্থীকে ডেকেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ কিন্তু, এই ইন্টারভিউ পর্ব ঘিরে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি চিকিৎসক সাংসদ সুভাষ সরকার৷ সংসদে দাঁড়িয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
শুক্রবার সংসদে বিজেপি সাংসদ লোকসভায় বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি চলছে৷ সেখানে সমস্ত এক্সামিনার পেন্সিলে করে মার্কিন করছেন৷ তলায় সই করছেন কালি পেন দিয়ে৷ এর ফল হচ্ছে, মেধাবী ছাত্ররা তাঁরা চাকরি পাচ্ছে না৷ সেখানে বেশি অর্থ দিয়ে শাসকদলের রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের খবরদাবি করছে৷ টাকার বিনিময়ে তাঁদের ইচ্ছামতো নিয়োগ করছে৷ এটা একটা বড় কেলেঙ্কারি৷ ব্যাপক কেলেঙ্কারি৷ এর সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত৷ ফরেনসিক পরীক্ষা করানো উচিত৷’’
এর আগে কমিশনের বিরুদ্ধে অভিসন্ধির অভিযোগ তোলেন ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়৷ সংবাদমাধ্যমে তিনি চাঞ্চল্যকর মন্তব্যও করেছেন৷ অভিযোগ, উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর লেখা হচ্ছে পেনসিলে৷ আর সেই নম্বর তালিকায় পেন দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের সই করতে বলা হচ্ছে৷ বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া অভিযোগ পেয়ে এই ব্যবস্থা বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়৷ সংবাদমাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিবাদের কথাও জানিয়েছেন৷ গোটা ঘটনার পিছনে অভিসন্ধির অভিযোগ তুললেন তিনি৷ এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এখনও কেউ কোনও অভিযোগ করেনি৷ তবে, তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন৷
কিন্তু, ইন্টারভিউয়ে কেন চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর লেখা হচ্ছে পেনসিলে? চাকরিপ্রার্থীর নম্বরের তালিকায় কেন পেন দিয়ে সই করতে বলা হচ্ছে? পরে কোনও সমস্যা হলে ওই নম্বরগুলি যাতে খুব সহজে মুছে ফেলা যায়? প্রশ্ন তুলছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ যদিও, কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও অনিয়ম হয়নি এসএসসি নিয়োগে৷
অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ প্যানেল নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলে দিলেন এক কলেজ পড়ুয়ারা৷ কমিশনকে চিঠি লিখে অধ্যক্ষের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই তোলা হয়েছে প্রশ্ন৷
দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের পড়ুয়ারা এসএসসির চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, তাঁদের অধ্যক্ষার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই! ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলেও দাবি করা হয়৷ বিতর্কিত অধ্যক্ষকে ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান করার আগে খোঁজখবর নেওয়া প্রযোজন ছিল বলেও কমিশনকে দেওয়া হয়েছে পরামর্শ৷ সূত্রের খবর, ওই চিঠি শুধুমাত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পাঠানো হয়েছে, তা নয়৷ রাজ্যপাল থেকে শুরু করে ডিপিআই ও রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকের চিঠির কপি পাঠানো হয়েছে৷ তবে কলেজ পড়ুয়াদের চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে এসএসসি চেয়ারম্যানের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷