আজ বিকেল: ছিল দীর্ঘ বঞ্চনার দাবিতে পথে নামার ডাক। নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে পথে নেমেছিলেন প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষক। জাতীয় পতাকা বুকে আগলে পথেই গাইলেন ‘উই শ্যাল ওভার কাম।’ জাতীয় সংগীত গেয়ে শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, তাঁরা চান তাঁদের পূর্ণ অধিকার৷ বিকাশ ভবন অভিযানে বাঁধা পাওয়ার দুর্যোগ মাথায় নিয়ে খোল আকাশের নীচে রাত কাটানোর পর এবার শনিবার সকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসলেন পাশ্বশিক্ষকদের৷ বারাকপুর স্টেশন চত্বরে বাঁধা হয়েছে অনশন মঞ্চ৷ শহর কলকাতা অনশন কর্মসূচি বাঁধা পেয়ে এবার বারাকপুরে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের৷
শুক্রবার বিকাশ ভবনের অদূরেই বিশাল জমায়েত করে রাজপথে বসেই মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজলেন সমাজ গড়ার কারিগররা৷ অভিযোগ, মুষলধারে বৃষ্টি শিক্ষকদের টলাতে না পারলেও সন্ধ্যা নামতেই শিক্ষকদের লাঠিপেটা করে বিধাননগর ছাড়া করে পুলিশ৷ পুলিশের মার খেয়ে পরে শিয়ালদহ চত্বরে ফের জমায়েত করেন পাশ্বশিক্ষকরা৷ খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানোর পর আজ সকালে বারাকপুর স্টেশন চত্বরে চলে যান শিক্ষকরা সেখানেই অনশন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়৷
শিক্ষকদের দাবি, মুষলধারে বৃষ্টি হোক কিংবা পুলিশ পেটাক, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কিছুতেই আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন না৷ শিক্ষকদের অভিযোগ, এদিন সকাল থেকে শিক্ষকদ উপর তেমন কোনও বল প্রয়োজন না করলেও সন্ধ্যা নামতে শুরু হয় তাণ্ডব৷ শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ৷ সন্টলেকে পুলিশি বাঁধা পেয়ে শিয়ালদহে চলে যান শিক্ষকরা৷ সেখানেই হয়েছে জমায়েত হওয়ার পর চলে যান বারাকপুরে৷
শুক্রবার দুপুরে রাজপথে শিক্ষক বিদ্রোহের সামনে পুলিশও কার্যত ছিল নীরব৷ বিশাল জমায়েত দেখে পুলিশকে সেভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যায়নি। বরং মিছিলকে এক জায়গায় অবরুদ্ধ করে রাখাই ছিল পুলিশের প্রধান লক্ষ্য। জাতীয় পতাকা বুকে আগলে শিক্ষকদের সমবেত জাতীয় সংগীত আর ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গানের ধ্বনি মুখরিত হল গোটা সল্টলেকের আকাশ৷
সম কাজে সম বেতনের দাবিতে বিকাশ ভবনের সামনে ইতিমধ্যেই লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করতে চলেছেন রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকরা৷ অবিলম্বে পার্শ্বশিক্ষকদের পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা, সম কাজে সম বেতনের অধিকার বুঝে নিতে রাজপথে নেমেছেন পার্শ্বশিক্ষকদের বড় অংশ৷ জাতীয় পতাকা হাতে দেখালেন নয়া বিদ্রোহ৷
অন্যদিকে, সম কাজে সম বেতনের দাবিতে আন্দোলন ডাকা হলেও পার্শ্বশিক্ষকদের ‘রণে ভঙ্গ’ দিতে ব্যবধানে বাধ্যমূলক হাজিরার নির্দেশ দিল সমগ্র শিক্ষা অভিযান৷ মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমগ্র শিক্ষা অভিযানের তরফে জানানো হয়েছে, বাধ্যতামূলক ভাবে আজ পার্শ্বশিক্ষকদের শিক্ষক প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট জমা করা হবে স্বশরীরে৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই তৎপরতা? কেনই বা বাধ্যতামূল হাজিরার নির্দেশ? সমগ্র শিক্ষা অভিযানের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেজ্ঞ জানিয়ে এবার বিদ্রোহ ঘোষণা পার্শ্বশিক্ষকদের৷
পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের তরফে মধুমিতা বন্দোপাধ্যায় ও ভগীরথ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের ধর্না কর্মসূচি চালিয়ে যাব৷’’ ঠিক কী কী দাবিত পথে নামছেন পার্শ্বশিক্ষকরা? সম কাজে সম বেতন, পিতৃত্বকালীন ছুটি মেডিক্যাল লিভ সবকিছুর সুযোগ, কর্মরত পার্শ্বশিক্ষকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারের সদস্যকে চাকরি, বিদ্যালয়ের সব ধর্মের শিক্ষামূলক কমিটিতে পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ, টেট পাস পার্শ্বশিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের দাবিতে এবার ধর্নায় পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের কয়েক হাজার শিক্ষক৷