বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: উৎসবের মরশুমে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর শোনাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ বোনাসের দাবিতে সরকারের উপর ক্রমশ চাপ বৃদ্ধির পর আজ কর্মচারীদের জন্য বোনাস দেওয়ার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র৷
করোনার কারণে গত জুলাই মাস থেকে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বন্ধ রেখে কেন্দ্র৷ মহার্ঘ ভাতার পাশাপাশি বোনাস নিয়ে ছিল কর্মচারী মহলে তীব্র ক্ষোভ৷ বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে দু’ঘণ্টার ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছিলেন রেলকর্মীদের একটি সংগঠন৷ কর্মচারী মহলে ক্ষোভের মাত্রা বাড়তে না বাড়তেই পঞ্চমীর দিনে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার বোনাসে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷
আজ সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছেন, ‘২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষের জন্য প্রোডাক্টিভিটি ও নন-প্রোডাক্টিভিটি বোনাসে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ এর ফলে ৩০ লাখ সরকারি কর্মচারী লাভবান হবেন৷ ৩ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা বোনাস দেওয়া হবে কর্মচারীদের৷’’ বোনাস ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, দশমীর আগেই সরাসরি সরকারি কর্মচারীদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে বোনাসের টাকা৷ সোমবারের মধ্যেই উৎসবের মরশুমে বোনাস হাতে পেয়ে যাবেন কর্মচারীরা৷
এর আগে চলতি বছরে এলটিসির পরিবর্তে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ক্যাশ ভাউচার দেওয়া ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন৷ ওই ভাউচারের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীরা এলটিসি অন্য ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন৷ কেননা, করোনার কারণে যেহেতু এখন কোনও ভ্রমণের সুযোগ মিলছে না, ফলে এলটিসি বরাদ্দ টাকা থেকে নিজেদের পছন্দের জিনিস কেনার সুযোগ পাবেন কর্মচারীরা৷ যে সমস্ত পণ্যে জিএসটি ১২ শতাংশ বা তার বেশি, সে সমস্ত পণ্য কেনার জন্য টাকা খরচ করতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা৷ ফলে, একদিকে কেনাকার জন্য ক্যাশ ভাউচার ও আজ বোনাসের ঘোষণা হাসি ফুটিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের৷
আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়৷ সেখানেই কর্মচারীদের বোনাস দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদ দেওয়া হয়৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে ১৬.৯৭ লক্ষ নন গেজেটেড সরকারি কর্মচারি উপকৃত হবেন৷ তার মধ্যে রয়েছেন রেল, পোস্ট অফিস, প্রতিরক্ষা, ইপিএফও এবং ইএসআইসির কর্মচারীরা৷
গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিয়েছিলেন, মধ্যবিত্তদের পকেটে আরও বেশি করে যাতে অর্থ দেওয়া যায়, মূলধনী অঙ্কে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে কর্মচারীদের জন্য বোনাস দেওয়া হবে৷ এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ১ লক্ষ কোটি টাকা যোগ হবে বলে জানানো হয়৷ সেই মতো বুধবার বিকেলেই এল সুখবর৷ এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর জানান, এই খাতে ৩,৭৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে৷ এই অর্থ ৩০ লক্ষ নন প্রোডাক্টিভিটি কর্মচারীর পকেটে যোগ হবে৷ এর ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে বলবে জানানো হয় কেন্দ্রের তরফে৷
প্রকাশ জাভরেকর জানান, অন্তত ৩০ লক্ষ কর্মচারীকে এই অর্থ প্রদান করা হবে একটি কিস্তিতে এবং তা বিজয়া দশমীর মধ্যেই তাঁর অ্যাকাটউন্টে ঢুকে যাবে৷ এই বোনাসের আওতায় রয়েছেন রেল, পোস্ট অফিস, বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্র এবং ইপিএফও, ইএসআইসির মতো ক্ষেত্রের ১৭ লক্ষ নন গেজেডেট কর্মচারী এবং তাঁদের রয়েছে ২,৭৯১ কোটি টাকা৷ বাকি ১৩ লক্ষ কর্মচারীকে দেওয়া হবে ৯৪৬ কোটি টাকা৷ নন-প্রোডাক্টটিভিটি বোনাসের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়াজ জোরালো হচ্ছিল৷ রেল কর্মীদের সংগঠনের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, দুর্গাপুজোর আগে এই বোনাস না পেলে রেল ধর্মঘট করা হবে৷
করোনা ভাইরাস এবং লকডাউনের কারণে বাজারে টান পরেছে৷ এর আগে কর্মীদের মহার্ঘভাতা যেমন বকেয়া রাখা হয়েছিল, তেমনই একাংশের বেতনও কাটছাঁট করে দেওয়া হয়৷ ফলে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ সঞ্চার হচ্ছিল৷ পাশাপাশি অর্থের জোগান বা আয় কমে যাওয়ার ফলে বাজারে কেনাকাটিতে টান পড়েছে৷ অন্যবারের তুলনায় এবার পুজোর বাজারে কেনাকাটির হিড়িক অনেকটাই কম বলে মত একাংশের৷ ফলে সেই ক্ষতে এই ঘোষণা কতটা ওষুধ হিসাবে কাজ করে, তার জবাব দেবে সময়৷