কলকাতা: সাত বছর কেটে গেলেও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনও সুরাহা হল না। যোগ্য অথচ বঞ্চিত নিয়োগপ্রার্থীরা একে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অপদার্থতা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছেন না। ঝামেলার শুরু হয় যখন পরীক্ষায় ভাল ফল করা প্রার্থীর জায়গায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের ভেরিফিকেশনের জন্য ডাকা হয়। বেগতিক বুঝে আদালতের দ্বারস্থ হন যোগ্য প্রার্থীরা। আদালতের রায়ে অন্তত সাড়ে ছ’হাজার নিয়োগপ্রার্থী ভেরিফিকেশন এবং ইন্টারভিউয়ের সুযোগ পান। তারপরেও বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত অস্বচ্ছতায় আজও থমকে রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। ফলত, আন্দোলন আরও তীব্র করার পথে হাঁটছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা।
মেধাতালিকা প্রস্তুতিতেও গেজেট তথা নিয়োগবিধিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। মেধা-তালিকা সংশোধনের দাবিতে ১২ হাজার অভিযোগ জমা পড়লেও তা নিয়ে কোনও হেলদোল দেখায়নি কমিশন। আদালতে মামলা চলছে এই অজুহাত দিয়ে পদক্ষেপ বিলম্বিত করার বিরুদ্ধে তাই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চ। বহু আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের নির্দেশে প্রকাশিত হয়েছিল মেধা-তালিকা। সেই মেধা-তালিকাতেও বিস্তর গোলমাল চোখে পড়েছে। ইন্টারভিউতে অংশ নেওয়া সব প্রার্থীদের নাম মেধা-তালিকায় নেই। টেট ও অ্যাকাডেমিক স্কোরের ক্ষেত্রে প্রচুর অনিয়ম। আবেদনে নিজেকে অপ্রশিক্ষিত ঘোষণা করা প্রার্থীকেও প্রশিক্ষিত দেখিয়ে প্রশিক্ষণের নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয় ও ক্যাটেগরি ভিত্তিক প্রার্থী ও শূন্যপদের ১: ১.৪ অনুপাত মানা হয়নি। এরকম আরও বহু অসঙ্গতি চোখে পড়েছে প্রার্থীদের।
নিয়োগবিধিকে মান্যতা দিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে লকডাউনের মধ্যেই ৫ জুন স্কুল সার্ভিস কমিশনে ‘গেজেট পাঠাও গেজেট পড়াও’ শীর্ষক গণ ইমেল কর্মসূচি পালন, ৮ জুন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর কাছে নিয়োগপ্রার্থীদের স্বাক্ষরিত ‘অনলাইন পিটিশন’ জমাকরণ কর্মসূচি নিয়েছিল আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চের। কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে। তাই আগামী ২৪ জুন আরও ব্যাপক আকারে আন্দোলনে নামতে চলছে সংগ্রামী মঞ্চ। ওদিন সংগ্রামী মঞ্চের ডাকে ভার্চুয়াল অনশন মঞ্চে হাজার হাজার নিয়োগপ্রার্থী লাইভ স্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে একদিনের গণ অনশনে সামিল হবেন। সাত বছরের শূণ্যপদ ও নবস্থাপিত বিদ্যালয়গুলির অনুমোদিত ৫১০৮টি শূণ্যপদ চূড়ান্ত শূন্যপদের তালিকায় যুক্ত হয়নি৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই শূণ্যপদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নেওয়ার কথা নিয়োগবিধিতে বলা থাকলেও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী না থাকা এসসি, এসটি, ওবিসি ও প্রতিবন্ধী সংরক্ষিত শূণ্যপদগুলি থেকে সমাজের প্রান্তিক অংশের অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীদের নিয়োগ পক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চের৷
এই ভার্চুয়াল অনশন মঞ্চে নিয়োগপ্রার্থীদের পাশাপাশি রাজ্যের বহু বিশিষ্ট মানুষ তাঁদের সমর্থনে বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছেন আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চের পক্ষে তন্ময় ভট্টাচার্য, সোমেন ঘোষ এবং গার্গী মুদি। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য সরকারকে একমাস সময় দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। উক্ত সময়ের মধ্যে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন না হলে তাঁদের অনির্দিষ্টকাল অনশনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা। বল এবার রাজ্য সরকারের কোর্টে। কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই এখন দেখার। -ফাইল ছবি৷