কলকাতা: প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পর এবার আইনি জটে পড়তে চলেছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ শূন্যপদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ কাউন্সেলিং বিজ্ঞপ্তি ও ইন্টার্ভিউ প্রক্রিয়া শুরুর আগে পূর্ণাঙ্গ মেধাতালিকা প্রকাশ না হলে মামলা দায় করার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন চাকরিপ্রার্থী সিদ্ধার্থ মাল৷
আজ বিকেল ডট কমকে চাকরিপ্রার্থী সিদ্ধার্থ কুমার মাল জানিয়েছেন, ‘‘উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ প্রায় ছ’বছর৷ নতুন করে শুরু হতে চলেছে নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমাদের একাটাই দাবি, শূন্যপদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও পিডিএফ আকারে মেধাতালিকা প্রকাশ৷ কমিশন যদি পূর্ণাঙ্গ শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ না করে তাহলে ইন্টারভিউয়ের ঠিক আগে আমরা মামলা করব৷ তার প্রস্তুতিও আমরা শুরু করে দিয়েছি৷’’ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু আগে চাকরিপ্রার্থীদের মামলা দায়ের তোড়জোড় শুরু হতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে কমিশনের কর্তাদেরও৷ কেননা, প্রধান শিক্ষক নিয়োগে আইনি জটিলতা ও নতুন করে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগে আইনি লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি অস্বস্তি বাড়িয়েছে কমিশনের অন্দরে৷
এমনিতেই উচ্চ প্রাথমিকে শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবিতে বড়সড় আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিলেন কয়েক লক্ষ চাকরিপ্রার্থী৷ নিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিবাদ কাটিয়ে শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবি ছিনিয়ে আনতে পথে নামার ডাক দেওয়া হয়েছে৷ দাবি পূরণ না হলে চাকরি-প্রার্থীদের তরফে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করে SSC-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘‘উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ১৩০৮০ জন নিয়োগ হবে জানুয়ারি শেষ অথবা ফেব্রুয়ারি প্রথমে৷’’ কিন্তু, কমিশনের বিবৃতি অনুযায়ী শূন্যপদের সংখ্যা নিয়ে চাকরি-প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ অবিলম্বে শূন্যপদ বৃদ্ধি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দাবিতে চলতি মাসেরই শেষে বড়সড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে৷
কিন্তু, কেন এই দাবি? উচ্চ প্রাথমিকে কমপক্ষে ৩০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের দাবি তুলেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, এই মুহূর্তে কমিশন ১৩০৮০ জনের নিয়োগের কথা ভাবছে৷ ফলে, এত কম সংখ্যক শূন্যপদে নিয়োগের ঘোষণা হতেই চাকরিপ্রার্থী মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে৷ অবিলম্বে শূন্যপদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন৷
উচ্চ প্রাথমিকে ২০১৪ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৪০৮৮টি শূন্যপদ ছিল৷ সেই শূন্যপদ বেড়ে ১৮ হাজার হতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ সঙ্গে আরও সাত হাজার শূন্যপদ যুক্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ হাজার আসানে নিয়োগ হবে বলে আশা করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, কমিশনের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে ১৩০৮০ জনের নিয়োগের কথা ঘোষণা হতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ কেননা, এর আগেও একাধিকবার উচ্চ প্রাথমিকে ৩০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়িয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, বাস্তবে সেই দাবি আদৌ মেনে নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ ভোটের আগে নিয়োগ শেষ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
এবিষয়ে এসএসসি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সভাপতি রাজা নন্দী বলেন, ‘উচ্চ প্রাথমিকে কমপক্ষে ৩০০০০ পদে ২০১৯ মার্চের মধ্যে নিয়োগের দাবিতে বিকাশভবন অভিযান হবে শীঘ্রই৷ সকল কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃত্ব ও মেম্বারদের ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর আন্দোলনে তৈরি থাকুন৷ সকলকেই জেলা মিটিং ও আন্দোলনে যেতে হবে৷ কমপক্ষে ১৫০০০ জনের জমায়েত চাই৷ এগিয়ে আসুন, নিজের আত্মশক্তিতে দাবি ছিনিয়ে নিতে৷’’
চাকরিপ্রার্থী অনুতোষ বড়পন্ডা জানান, ‘‘উচ্চ প্রাথমিকের শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবিতে আমরা বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন জমা দিয়েছিলাম৷ কিন্তু, আমাদের দাবি না মেনেই কমিশনের তরফে ১৩০৮০ শূন্যপদে নিয়োগের কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান৷ এত কম শূন্যপদে নিয়োগ আমরা মেনে নেব না৷ অবিলম্বে পূর্ণ শূন্যপদের বর্ধিত তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে এই মাসের শেষ সপ্তাহে আমরা আন্দোলনে নামব৷’’
চাকরিপ্রার্থী জয়দীপ দত্ত বলেন, ‘‘কমিশনকে শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি৷ ভোটের আগে নিয়োগ ও অবিলম্বে শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ না করলে ভবিষ্যতে এক মাসুল গুনতে হবে কমিশনকে৷ শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের জীবন নিশ্চিত করতে কমিশনকে এই মেনে নিতেই হবে৷’’
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ এসএসসি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সভাপতি রাজা নন্দী বলেন, ‘‘৩০ হাজার শূন্যপদে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আমরা অনর৷ অবিলম্বে কমিশন যদি উচ্চ প্রাথমিকের চূড়ান্ত শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ না করে, তাহলে ১৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে কলকাতা অচল করে দেব৷’’