চাকরি হারিয়ে কলা বেচছেন স্কুলশিক্ষক! সাহায্যে এগিয়ে এল প্রাক্তন ছাত্রেরা

চাকরি হারিয়ে কলা বেচছেন স্কুলশিক্ষক! সাহায্যে এগিয়ে এল প্রাক্তন ছাত্রেরা

হায়দরাবাদ: স্কুলশিক্ষক থেকে কলাবিক্রেতা। করোনার থাবায় এমন ভাবেই বদলে গেল এক ব্যক্তির জীবিকা। অতিমারির পরিস্থিতিতে বেসরকারি সংস্থার বহু কর্মী বেতনহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, অনেকের চাকরিও চলে যাচ্ছে এমন খবর নতুন নয়। কিন্তু পেশায় এমন বদল বোধহয় শোনা যায়নি।

অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলায় নারায়ণা স্কুলে তেলুগু ভাষা পড়াতেন ভেঙ্কটাসুব্বাইয়া। এই পেশায় তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে আছেন। লকডাউন শুরু হওয়ার পর অনলাইন ক্লাস নেওয়াতেও বিচ্যুতি হয়নি তাঁর। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ তিন সপ্তাহ ধরে কলা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন ভেঙ্কট, কারণ স্কুল থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁকে। ১৪ মে, তিনি এবং তাঁর আরও পাঁচ সহকর্মীকে অনলাইনে মিটিংয়ে স্কুল পরিচালন বিভাগ জানিয়ে দেয়, তাঁদের আর পড়ানোর দরকার নেই। কারণ তাঁদের কাজ আশাপ্রদ হচ্ছে না।

এমন নয় যে ভেঙ্কটাসুব্বাইয়া এবং তাঁর সহকর্মীদের পড়ানোয় কোনও খামতি আছে। তাঁদের ছাঁটাই করার কারণ নতুন ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে ভর্তি করাতে না পারা। করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে ভর্তি করানোর কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানানোর পরেও তাঁদের ‘অযোগ্য’ তকমা দিয়ে ছাঁটাই করে দেয় ম্যানেজমেন্ট। পরের দিন শিক্ষকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকেও বের করে দেওয়া হয় ছ’জনকে। কলা বিক্রি ছাড়া এসময়ে আর কিছু করার উপায় নেই ভেঙ্কটের। তিনি জানিয়েছেন, পুত্রসন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতিমধ্যেই দেনায় আছেন, তাই নতুন করে ধার করা সম্ভব নয়। এক ছাত্রের বাবার চাষ করা কলা নিয়ে রাস্তায় ঠেলাগাড়িতে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তেলুগু এবং গণ প্রশাসন বিষয়ে মাস্টার্স করা ভেঙ্কট। শিক্ষাবিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রিও আছে তাঁর।

এদিকে মাস্টারমশাইয়ের দুর্দশার কথা জানতে পেরে এগিয়ে এসেছে তাঁর প্রাক্তন ছাত্রেরা। প্রায় দেড়শো ছাত্র-ছাত্রী মিলে ৮৬,৩০০ টাকা তুলে দিয়েছে শিক্ষকের হাতে। ভেঙ্কট বলছেন, ‘আমি ওদের বলেছি যে এই টাকা নিজেদের পড়াশোনায় কাজে লাগাও, কিন্তু তাও ওরা জোর করে আমাকেই সাহায্য করতে চায়।’ তিনি আরও বলছেন, ‘কলা বিক্রি সাময়িক কাজ। আমি আবার পড়ানোতেই ফিরতে চাই তাতে আগের চেয়ে কম বেতন পেলেও ক্ষতি নেই। যদি এত পড়ুয়া মিলে আমায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তার অর্থ আমার শিক্ষা নিশ্চয়ই প্রভাব ফেলেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *